“বাসের নিজস্ব লেন চেঞ্জ হয়ে যাওয়ায় মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।”
Published : 15 Oct 2024, 09:58 PM
বাসের ‘অধিক গতি’ ও ‘ঘুমের চোখে’ বাস চালানোর কারণে ফরিদপুর সদরে দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করছে পুলিশ।
দুর্ঘটনায় আহত ‘খাগড়াছড়ি পরিবহন’ বাসের যাত্রীতের মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হসপাতালে দেখতে গিয়ে এ কথা বলেন পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল।
এর আগে এদিন ভোর ৪টার দিকে সদর উপজেলার কানাইপুরের মল্লিকপুর এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এ সময় দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচজনের প্রাণ গেছে; এতে আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।
নিহতরা হলেন- সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সরা গ্রামের আবু বক্কর (৫৫), জাবাইল গ্রামের বাবু (৪০), মাগুরার সদর উপজেলার সদর উপজেলার বরই গ্রামের পিকুল, খাগড়াছড়ি পরিবহন বাসের সুপারভাইজার মো. মহসিন (৩৫) এবং চালকের সহকারী বাজার গ্রামের নাহিদ কারিগর (১৯)।
তাদের বাড়ি শ্যামনগর উপজেলার চণ্ডিপুর ও বাজার গ্রামের।
আহতদের উদ্ধার করে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিক তাদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
আহতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভাটায় শ্রম দেওয়ার জন্য সাতক্ষীরা থেকে ৩৫ থেকে ৪০ শ্রমিক খাগড়াছড়ি পরিবহনের বাস ভাড়া করে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে। তখন অধিকাংশ যাত্রীই ঘুমে ছিলেন।
ফরিদপুর হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলছিলেন, “ঢাকার আব্দুল্লাপুর থেকে ঝিনাইদহগামী ‘গ্রিন এক্সপ্রেস’ নামে একটি যাত্রীবাহী একটি বাসের সঙ্গে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে ছেড়ে আসা ‘খাগড়াছড়ি পরিবহনের’ যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
“নিহতদের সবাই খাগড়াছড়ি পরিবহনের যাত্রী ছিল। গ্রিন এক্সপ্রেস বাসটি অসতর্কতাবশত বিপরীত লেনে চলে যায। এ সময় বিপরীত থেকে আসা বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক মাহমুদুজ্জামান বলেন, বাস দুর্ঘটনায় আহত ৩০ থেকে ৩২ জনকে ভোরে হাসপাতালে আনা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ২৭ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ছয়জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদের মধ্যে একজনকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।
বেলা ১২টার দিকে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্লা ও পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে প্রশাসনের কর্মকর্তারা হাসপাতালে হতাহতদের খোঁজখবর নেন।
জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে মহাসড়কে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা এবং আহতদের ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগীতা দেওয়া হবে।
পাশাপাশি বারবার কেনো একই জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটছে, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত টিম গঠন করা হবে বলে জানান তিনি।
পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, গাড়ির দুটি অধিক গতিতে ছিল, চালকদের চোখেও ছিল ঘুম। আর এ কারণেই হয়তো নিজস্ব লেন চেঞ্জ হয়ে যাওয়ায় মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।”
ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে দূরপাল্লার গাড়িগুলোতে দুজন চালক দেওয়ার বিষয়ে শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে পরামর্শ করা হবে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান জেলা বিএনপি নেতার আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ইসা ও জেলা জামায়াতের আমীর মো. বদর উদ্দিন আহমেদসহ বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা। তারা আহতদের সাহায্য-সহযোগীতাও করেন।