“গতবারও এই হাওরের ফসল তলিয়ে গিয়েছিল। এবারও বাঁধটিতে পানি ছুঁই ছুঁই করছে।”
Published : 07 Apr 2024, 11:30 PM
মেঘালয়ে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাতে সুনামগঞ্জের নদ-নদীতে পানি বাড়ার পর টাঙ্গুয়ার হাওরের একটি বাঁধ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মাটি ফেলে টেকানোর চেষ্টা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকলে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নজরখালি বাঁধটি তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলায় পড়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওর রামসার সাইটভুক্ত (সংরক্ষিত) হওয়ায় এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো বাঁধ নেই। এসব জমি ‘নন-হাওর’ অর্থাৎ পাউবোর ফসলরক্ষা বাঁধের বাইরের এলাকাভুক্ত। এসব নিচু এলাকায় সাধারণত কৃষকরা একটু অগ্রিম ধান রোপণ করে থাকেন।
তবে পাউবোর ফসলরক্ষা বাঁধের বাইরে নজরখালির অবস্থান হলেও; যদি এখান দিয়ে পানি প্রবেশ করে তাহলে টাঙ্গুয়ার হাওরের উঁচু এলাকার গইন্যাকুড়ি ও এরাইল্যাকোণা হাওরের ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়বে বলে স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবোর মতে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি ৫০ সেন্টিমিটার বেড়েছে। শনিবার বিকালে এ নদীর পানি ২ দশমিক ৭৩ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছিল।
রোববার সকালেও নদীতে পানির উচ্চতা ২ দশমিক ৭৩ মিটার। এই মৌসুমে পানির বিপৎসীমা হলো ৬.০৫ মিটার। তা ছাড়া মেঘালয়ে আগামী এক সপ্তাহ হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত হবে বলেও জানিয়েছে পাউবো।
আগামী এক সপ্তাহ হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন পাউবোর সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার।
তিনি বলেন, “তবে নজরখালি বাঁধ পাউবোর আওতাভুক্ত নয়। জমিগুলো রামসার সাইটে হওয়ায় সরকার আইনগতভাবে এখানে প্রকল্প করতে পারে না।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, “নজরখালি এলাকায় ২০-২৫ হেক্টর হাওরি জমিতে আবাদ হয়েছে। বাকি যা আবাদ হয়েছে তা নন-হাওরে। টাঙ্গুয়ার হাওরের সংরক্ষিত এলাকায়।
“মধ্যনগর ও তাহিরপুর মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। মধ্যনগরের উত্তর ও দক্ষিণ বংশীকুণ্ডা ও তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ও দক্ষিণ বড়দল এলাকার এই বোরো জমির অবস্থান”, বলেন কৃষি কর্মকর্তা।
এলাকার কৃষক ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, এক সপ্তাহ ধরে হাওরাঞ্চলের আবহাওয়া বিরূপ। টানা রোদ নেই। হালকা বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত ও ঝড় হচ্ছে। তাছাড়া মেঘালয়েও মাঝারি ও হালকা বৃষ্টিপাত হওয়ায় কয়েকদিন ধরে সীমান্ত নদী পাটলাইয়ে পানি বাড়ছে। এ কারণেই নজরখালি বাঁধ পানি ছুঁই ছুঁই করছে। বাঁধটির ৬০-৭০ মিটার এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে।
এই অবস্থা দেখে শনিবার সকাল থেকে কাছের গ্রামগুলোর কৃষকরা স্বেচ্ছায় বাঁধে মাটি দেন। রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা বাঁধে কাজ করছেন এবং নজরদারি রেখেছেন। তবে এই বাঁধটি এখনো ঝুঁকিমুক্ত নয় বলে জানান তারা।
টাঙ্গুয়ার হাওরের ভিতরে ছোট হাওর সামসাগর, এরাইল্যাকোণা, পইল্যার বিল, গইন্যাকুড়িসহ কয়েকটি হাওর রয়েছে। যেখানে স্থানীয় কৃষকরা বোরো জমি চাষ করেন। এই জমিগুলো সংরক্ষিত এলাকার মধ্যে পড়েছে। ফলে এগুলো পাউবোর বাইরে।
তাহিরপুর উপজেলার জয়পুর গ্রামের পরিবেশকর্মী আহমদ কবির বলেন, “নজরখালি বাঁধটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টাঙ্গুয়ার হাওরের ভেতরে যেসব ছোট ছোট হাওর রয়েছে সেগুলোর ফসলের সুরক্ষা দেয় বাঁধটি। কিন্তু আইনি জটিলতার কথা বলে পাউবো এখানে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করে না।
“এ কারণে গতবারও এই হাওরের ফসল তলিয়ে গিয়েছিল। এবারও বাঁধটিতে পানি ছুঁই ছুঁই করছে। শত শত কৃষক স্বেচ্ছায় বাঁধটিতে কাজ করেছেন। তবে বাঁধটি ঝুঁকিতেই রয়ে গেছে।”
নজরখালি বাঁধে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করা এনামুল হক শান্ত বলেন, “শতাধিক কৃষক নজরখালি বাঁধে স্বেচ্ছায় কাজ করেছেন। বাঁধের অবস্থা ভালো নয়। ফসল বাঁচাতে আমরা ছুটে এসে কাজ করেছি।
“এই বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে মধ্যনগরের কয়েক হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে যাবে”, বলেন শান্ত।