“১৯২৮ সালে হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা দরবার শরীফের পীর মাওলানা ইসহাক (রহ.) আরব দেশসমূহের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখা শুরু করেন।”
Published : 16 Jun 2024, 08:10 PM
প্রতি বছরের মতো এবারও সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করছেন দেশের অন্তত পাঁচ জেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ।
রোববার সকালে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার পর চাঁদপুর, দিনাজপুর, পটুয়াখালী, শেরপুর ও সাতক্ষীরা জেলার এসব গ্রামে পশু কোরবানিও দেওয়া হয়।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
চাঁদপুর:
সৌদি আরবসহ আরব দেশসমূহের সঙ্গে মিল রেখে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ সাদ্রা দরবার শরীফসহ জেলার প্রায় অর্ধশত গ্রামে এবারও আগাম ঈদুল আজহা উদযাপন হচ্ছে।
রোববার সকাল ৯টায় সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার মাঠে ঈদুল আজহার নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এই জামাতে ইমামতি করেন সাদ্রা দরবার শরীফের পীরজাদা মাওলানা আরিফ উল্লা চৌধুরী।
নামাজ শেষে তিনি মুসলিম উম্মাহ, দেশ ও জাতির সুখ এবং সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করেন।
এছাড়া সকাল সাড়ে ৯টায় আরেকটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন দরবার শরীফের পীরজাদা আল্লামা জাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানী।
একই সাথে জেলার অন্যান্য গ্রামগুলোতে এই মতবাদের অনুসারীরা ঈদের নামাজ আদায় ও কোরবানি করছেন। ঈদকে ঘিরে এসব গ্রামে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
সাদ্রা দরবার শরীফের পীরজাদা আরিফুল্লা চৌধুরী তার বক্তব্যে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ঈদ উদযাপনের বিষয়ে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ১৯২৮ সাল থেকে তারা মুসলিম বিশ্বের সাথে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা এবং রমজানের রোজা রেখে আসছেন। প্রথমে এসব ঈদের জামাতের লোকজন কম হলেও এখন সারা বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় ঈদ উদযাপন হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, “স্থানীয় সময় ঠিক রেখে বিশ্বের সকল দেশে ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো পালন করা উচিত বলে আমি মনে করি। আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিন পালনেও আমরা ব্যতিক্রম করি। সারা বিশ্বের সকল মুসলমান একই দিনে রাসূল সাল্লাল্লাহু ইসলামের জন্মদিন পালন করা উচিত।”
দরবার শরীফে ঈদের নামাজ পড়তে আসা আবদুল্লাহ জানান, “মরহুম পীর সাহেবের সময়কাল থেকে আমরা এসব ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে আসছি। গতকাল (শনিবার) সৌদি আরবে হজ পালন হয়েছে। আজকে (রোববার) তারা ঈদ উদযাপন করছে, আমরাও তাদের সাথে ঈদ উদযাপন করছি। এতে আমরা খুবই আনন্দিত।”
মাওলানা আরিফ উল্লাহ জানান, ১৯২৮ সাল থেকে হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা দরবার শরীফের মরহুম পীর মাওলানা ইসহাক (রহ.) প্রথমে তার নিজ গ্রামে এবং পরে তার অনুসারীরা আরব দেশসমূহের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখা শুরু করেন। সেই ধারাবাহিকতায় ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা উদযাপন হয়ে আসছে।
দিনাজপুর:
দিনাজপুরের সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার কয়েকটি গ্রামে রোববার কোরবানির ঈদ উদযাপন করা হচ্ছে।
সকাল সাড়ে ৮টায় দিনাজপুর শহরের বাসুনিয়াপট্টিতে একটি কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এখানে পৃথক ব্যবস্থায় নারীরাও নামাজে অংশ নেন। নামাজে অংশ নেন পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ।
নামাজে ইমামতি করেন বিরল উপজেলার মহেশপুর দাখিল মাদরাসার পরিচালক মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, “এই বিশ্বে চন্দ্র-সূর্য একটাই। পৃথিবীর যে কোনো স্থানে ঈদের চাঁদ দেখা গেলেই ঈদ নামাজ আদায় করতে হবে।”
নামাজ শেষে ফিলিস্তিনের মুসলমানসহ বিশ্ব উম্মাহর শান্তি কামনা করে দোয়া করা হয় বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, তাদের অনুসারীরা চিরিরবন্দর, বিরল, কাহারোল, বিরামপুর, বীরগঞ্জসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।
পটুয়াখালী:
প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে পটুয়াখালীর ২৫ গ্রামে ঈদুল আজহা উদযাপন হচ্ছে।
এর মধ্যে রোববার সকাল ৯টায় সদর উপজেলার বদরপুর দরবার শরীফের মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
জামাতে ইমামতি করেন বদরপুর দরবার শরীফ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মো. শফিকুল ইসলাম আব্দুল গনি।
মাওলানা শফিকুল জানান, ১৯৪০ সাল থেকে বদরপুর দরবারসহ ২৫ গ্রামের বাসিন্দারা চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালন করে আসছেন।
তিনি সমগ্র মুসলিম জাতিকে এক চাঁদ দেখে এক আরবি তারিখে নিজ নিজ এলাকার সময় অনুযায়ী রোজা রাখা, ঈদ উদযাপন ও কোরবানিসহ সকল ধর্মীয় কাজ পালনের আহ্বানও জানান।
চট্টগ্রামের এলাহাবাদ সুফিয়া এবং চানটুপির অনুসারী হিসেবে পরিচিত এ সকল গ্রামের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ আদায় করতে পারায় খুশি। ঘরে ঘরে বইছে ঈদ আনন্দের আমেজ। বাড়িগুলোয় চলছে মিষ্টান্ন ও মুখরোচক খাবারের আয়োজন।
নামাজ শেষে এসব গ্রামে চলছে পশু কোরবানি।
শেরপুর:
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সাথে মিল রেখে শেরপুরের সাতটি গ্রামের একাংশের মানুষ পালন করেছেন আগাম কোরবানির ঈদ।
রোববার সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে এসব গ্রামে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
আগাম ঈদ উদযাপন করা গ্রামগুলো হচ্ছে, শেরপুর সদর উপজেলার চরখারচর পশ্চিমপাড়া ও চরখারচর সাতানিপাড়া,বামনের চর, নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী পশ্চিমপাড়া ও গোবিন্দনগর ছয় আনী পাড়া, নকলা উপজেলার কৈয়াকুড়ি এবং ঝিনাইগাতী উপজেলার বনগাও ও চতল।
এসব গ্রামে প্রতিটি জামাতে শতাধিক পুরুষের অংশগ্রহণের পাশাপাশি নারীরাও বিশেষ ব্যবস্থায় একই জামাতের সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
নামাজের পর কোলাকুলি করে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে প্রীতিভোজেও শরিক হন এসব গ্রামের মানুষ।
সাতক্ষীরা :
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে সাতক্ষীরার ভাড়-খালী, বাউখালী, তালা, কলারোয়া, ঘোনাসহ বিভিন্ন স্থানে কোরবানির ঈদ উদযাপন করা হচ্ছে।
রোববার সকালে ভাড়-খালীতে শতাধিক মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ঈদের জামায়াতে ইমামতি করেন মাওলানা মহব্বত হাসেম।
মাওলানা মহব্বত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সৌদির সাথে মিল রেখে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে এই ঈদ একই দিনে অনুষ্ঠিত হতেই পারে।
তিনি বলেন, “জেলার গ্রামগুলোয় ছোটবড় ধনী-গরিব সবাই একই সঙ্গে সৃষ্টিকর্তার নামে ইবাদত বন্দেগী করে ঈদের সালাত আদায় করে পশু কোরবানি দিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া হচ্ছে। ”