Published : 06 May 2025, 09:26 PM
বান্দরবানের থানচির তিন্দু ইউনিয়নে খিয়াং সম্প্রদায়ের এক নারীকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিভিন্ন সংগঠন।
মঙ্গলবার দুপুরে শহরের রাজার মাঠ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি উজানী পাড়া, মধ্যম পাড়া এবং বাজার এলাকা হয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন তারা।
সোমবার বিকালে থানচি-লিক্রি নির্মাণাধীন সড়কে তিন্দু ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মংখয় পাড়ার বাসিন্দা চিংমা খিয়াংয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
প্রতিবাদ সমাবেশে খিয়াং স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সংগঠক উসিচিং খিয়াং বলেন, নিহত ওই নারী তিন সন্তানের মা ছিলেন। তার সাত-আট মাসের এক শিশু রয়েছে। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে সম্প্রতি রোয়াংছড়িতে এক খিয়াং কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে এবং রাঙ্গামাটির কাউখালীতে মারমা তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। একটা ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে আরেকটি ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনা সঠিকভাবে বিচার না হওয়ায় ধর্ষণ ও হত্যার মত ঘটনা বারবার ঘটছে।
বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা ওয়েলফেয়ার ফোরাম সংগঠনের বিটনময় তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, “এ ধরনের ঘটনা আগে সবসময় হত না। পাহাড়েও এখন খুন-ধর্ষণের মত ঘটনা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। নারীদের আগের মত নিরাপত্তা নেই। বিশেষ করে বহিরাগত আগমনের ফলে এ ধরনের ঘটনা আগের তুলনায় বাড়ছে।”
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি উলিসিং মারমা বলেন, “দেশে এখনও বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে। তার ধারাবাহিকতায় পাহাড়েও নারী ধর্ষণের মত ঘটনা বাড়ছে। অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনা বারবার হতে থাকবে। শিশু-নারীদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার থাকতে হবে।”
সাবেক ছাত্রনেতা জন ত্রিপুরা বলেন, “নারীরা ঘরে এবং বাইরে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। অথচ ৫ অগাস্ট পরবর্তী দেশে নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ১১টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। তার মধ্যে শুধু নারী কমিশনকে টার্গেট করে তাকে বাতিল করার জন্য এক শ্রেণির মানুষ উঠেপড়ে লেগেছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব নারী-শিশুদের নিরাপদ রাখতে নারী কমিশনের সুপারিশকে বাস্তবায়ন করার সুযোগ দিতে হবে।”
অনন্যা কল্যাণ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকার কর্মী ডনাইপ্রু মারমা নেলী বলেন, “শুধু প্রতিবাদ-আন্দোলন করে ধর্ষণ-খুনের ঘটনা বন্ধ করা যাচ্ছে না। অপরাধী যে হোক তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।”
সমাবেশে জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অংচমং মারমা, উন্নয়ন কর্মী লেলুং খুমী, মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের প্রতিনিধি উমংসিং মারমা, বম ছাত্র সংগঠনের সভাপতি জেমস বম সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন।
সমাবেশে নারী সংগঠনের মধ্যে অংশ নেন খিয়াং কল্যাণ সংস্থা, দুর্বার নেটওয়ার্ক, সৃজন বান্দরবান, উইমেন অ্যাক্টিভিটি এবং উইমেন রিসোর্স অ্যাক্টিভিটির কর্মীরা।
এ ছাড়া এ ঘটনার প্রতিবাদে রুমা ও থানচি উপজেলাতেও বিক্ষোভ মিছিল করেছে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা।
সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে: জেলা প্রশাসন
এদিকে খিয়াং নারীর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুর ১১টার দিকে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, “এটি একটি দুর্ঘটনা, নাকি হত্যাকাণ্ড সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঠিক কারণ অনুসন্ধানের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।
“প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবোর্চ্চ গুরুত্ব দিয়ে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। সঠিক কারণ অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশ সুপার শহিদুল কাউছার বলেন, স্থানীয় লোকজনদের কাছ থেকে খবর পেয়ে থানচি থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান, হেডম্যান ও কারবারী উপস্থিত ছিল। ঘটনাস্থলটি থানা থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে এবং দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, সোমবার সকালে বাড়ি থেকে জুমক্ষেতে ধান রোপণ করতে যান ওই নারী। দুপুরে বাড়িতে ফেরার কথা থাকলেও যথাসময়ে না ফেরায় স্বামীসহ পাড়ার লোকজন খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। এক পর্যায়ে বিকাল সাড়ের ৩টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে আনুমানিক ৫০ গজ নিচে পাথরে নালার উপর মাথা ও মুখমণ্ডলের বিভিন্ন স্থানে জখম ও ক্ষত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় নিহতের স্বামী বাদী হয়ে থানচি থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। থানচি থানা পুলিশের সঙ্গে নিজেও মামলাটি তদারকি করছে বলে পুলিশ সুপার।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু তালেব (সার্বিক), জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল করিম (প্রশাসন ও অর্থ) এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিনিয়া চাকমা (ক্রাইম ও অপারেশন) উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:
'ধর্ষণের ভয়ে পাহাড়ি নারীদের প্রতিনিয়ত দিন পার করতে হয়'
খেয়াং নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ: খাগড়াছড়িতে প্রতিবাদ
বান্দরবানের জঙ্গলে খেয়াং নারীর রক্তাক্ত লাশ, স্থানীয়দের ধারণা