৪৩টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ; আটটিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর জানান।
Published : 23 Sep 2024, 04:26 PM
সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
শ্রমিক অসন্তোষের জেরে সোমবার অন্তত ৪৩টি পোশাক কারখানা অনিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে; আটটি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর জানান।
পুলিশ জানায়, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নরসিংহপুর এলাকায় জেনারেশন নেক্সট পোশাক কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক এক মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
শ্রমিকরা জানান, নতুন করে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে আশুলিয়ায় ৪৩টি কারখানা শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আর আটটি কারখানা অসন্তোষের জেরে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
হা-মীম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানের গেইটে দেওয়া নোটিশে দেখা যায়, দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়ার লিমিটেড, অ্যাপারেল গ্যালারি লিমিটেড, রিফাত গার্মেন্টস লিমিটেড, এক্সপ্রেস ওয়াশিং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেড, আর্টিস্টিক ডিজাইন লিমিটেড, নেক্সট কালেকশন লিমিটেডের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের জানানো যাচ্ছে যে, আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের বর্তমান সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনায় শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ১৩ (১) অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং তারিখ রোজ সোমবার হইতে উল্লেখিত কারখানাসমূহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো।
পরবর্তীতে আঞ্চলিক পরিবেশ নিরাপদ হলে শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মপরিবেশ ও নিরপত্তা নিশ্চিত করে নোটিশের মাধ্যমে কারখানা খোলার তারিখ জানিয়ে দেওয়া হইবে। কারখানায় নিরাপত্তা বিভাগ অত্র নোটিশের আওতামুক্ত থাকবে বলে ওই নোটিশে বলা হয়েছে।
অনন্ত গ্রুপের একটি কারখানার গেইটেও বন্ধের নোটিশ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, “জামগড়ার ছয়তলা থেকে ঘোষবাগ পর্যন্ত কারখানাগুলোতেই ঘুরেফিরে শ্রমিক অসন্তোষ হচ্ছে। এসব কারখানার বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত করলেই শ্রমিক অসন্তোষের রহস্য বের হতে পারে।”
তিনি বলেন, “যেসব কারখানায় আগের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবে কাজ চলছিল সেইসব কারখানায়ও পুনরায় নতুন দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে।”
আন্দোলনকারী একজন শ্রমিক বলেন, “কয়েকটি কারখানার শ্রমিক বিভিন্ন দাবি করলেও তারা উৎপাদন চালু রেখেছেন। অন্য কারখানার শ্রমিকরা চালু কারখানায় এসে ঝামেলা করলেও সব শ্রমিক কাজ করেছেন। তার পরেও কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ করে রেখেছেন।”
আরেকজন শ্রমিক বলেন, “গত মাসসহ চলতি মাসের বেতন পরিশোধ না করে কারখানা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। শ্রমিকরা বাসা ভাড়া ও দোকানের বাকি পরিশোধ করতে পারছেন না। সারা মাস কাজ করে বাড়িওয়ালা ও দোকান মালিকের লাঞ্ছনা সহ্য করতে হচ্ছে। এর আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেতন পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হলেও বেতন পরিশোধ করনি মালিকপক্ষ। তাই আজ বাধ্য হয়ে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমেছে।”
তবে শ্রমিকদের কেউ কেউ ২৫ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির পাশাপাশি হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল, নাইট বিল বৃদ্ধির বাস্তবায়নও দাবি করেছেন।
শিল্প পুলিশ জানায়, শ্রমিক অসন্তোষের জেরে রোববার থেকে আবারও এই অঞ্চলে বেশ কিছু তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কতৃপক্ষ।
আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “সকালে নরসিংহপুর এলাকায় একটি কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে ঘটনাস্থলে পুলিশের দল পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত আছেন।”
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার বলেন, “আমরা শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছি। আজকেও শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় ৪৩টি কারখানা শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩(১) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া আটটি কারখানা অসন্তোষের জেরে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।”