তারা বলছেন, ভাস্কর্য বা মূর্তি না বানিয়ে কোনো কিছুতে নামকরণ করা হলে তাদের আপত্তি নেই।
Published : 10 Aug 2024, 09:33 PM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের ভাস্কর্য বা কোনো ধরনের প্রতিকৃতি তৈরি না করার আহ্বান জানিয়েছে তার পরিবারের সদস্যরা।
‘ইসলাম ধর্মে মূর্তি-ভাস্কর্য-প্রতিকৃতি বানানো নিষিদ্ধ’ থাকার কথা তুলে ধরে এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
এই বিবৃতির দুদিন পর শনিবার সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন কোনো ধরনের ভাস্কর্য তৈরি না করতে অনুরোধ করেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আপনারা সবাই অবগত আছেন, আবু সাঈদ গত ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে শহীদ হয়েছেন। পরে ফেইসবুকের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, কিছু লোক শহীদ আবু সাঈদের ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন এবং তার নামে টাকা উত্তোলন করছেন।”
তিনি বলেন, “শহীদ আবু সাঈদের প্রতি ভালোবাসা থেকেই আপনারা এমন উদ্যোগ নিয়েছেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা আপনাদের ভালোবাসাকে সম্মান করি। কিন্তু আমার ছেলেটাকে কত কষ্ট দিয়ে হত্যা করা হয়েছে তা আপনারা দেখেছেন। আমরা চাই না, আমার ছেলে দুনিয়াতে যেমন কষ্ট পেয়েছে, আখিরাতেও তেমন কষ্ট পাক।
“আমরা মুসলমান। আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস করি। যেহেতু ইসলাম ধর্মে সব মূর্তি, ভাস্কর্য বা প্রতিকৃতি বানানো নিষিদ্ধ, সেহেতু আপনাদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি- দেশের কোনো স্থানে আমার ছেলের মূর্তি, ভাস্কর্য বা প্রতিকৃতি যেন না বানানো হয়। আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, আমার ছেলের জন্য যদি কিছু করতেই চান, তাহলে জনকল্যাণমুখী এমন কিছু কাজ করুন যার সওয়াব আবু সাঈদের কবরে পৌঁছবে।”
এর আগে বৃহস্পতিবার ‘দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান’ শিরোনামে এক বিবৃতি দেয় আবু সাঈদের পরিবার।
আবু সাঈদের জন্য দোয়া চেয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা আপনাদের কাছে শহীদ আবু সাঈদের জন্য দোয়া চাই; আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন।”
বিবৃতিতে আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন; ভাই আবু হোসেন, রমজান আলী ও বকুল হোসেনের স্বাক্ষর রয়েছে।
বিবৃতির বিষয়টি নিশ্চিত করে সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন, রমজান আলী জানান, ভাস্কর্য বা মূর্তি না বানিয়ে কোনো কিছুতে নামকরণ করা হলে তাদের আপত্তি নেই।
দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে গত ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন পার্ক মোড়ে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ।
পরদিন ১৭ জুলাই তাকে পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।
আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পর রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্কের মোড়ে তার একটি ভাস্কর্য বানানোর ঘোষণা দেন আহসান আহমেদ নামে এক ভাস্কর।
তবে আবু সাঈদের পরিবারের পক্ষ থেকে ভাস্কর্য বা প্রতিকৃতি নির্মাণ নিয়ে আপত্তি বিষয়ক বিবৃতিটি শুক্রবার নিজের ফেইসবুক আইডিতে তিনি শেয়ার করলেও এখন সেটি বানাবেন কিনা তা স্পষ্ট করেননি।
এদিকে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসেন নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়।
এ সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেওয়ার দুদিন পর শনিবার রংপুরের পরীগঞ্জে আবু সাঈদের বাড়িতে যান মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে গিয়ে তিনি আবু সাঈদকে বাংলাদেশের সব পরিবারের সন্তান বলে উল্লেখ করেন।