“আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই সমাবেশ করা হয়েছে এবং এতে ইউএনও সাহেব ইনভলব কি-না আই ডোন্ট নো।”
Published : 30 May 2024, 10:32 PM
প্রশ্ন শুনে রেগে গিয়ে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অর্থের বিনিময়ে প্রশ্ন করার অভিযোগ তুলেছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের ফটকে উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকরা এই সংসদ সদস্যকে সাম্প্রতিক উপজেলা নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন।
এ সময় কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি ও রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরইউজে) সভাপতি রফিকুল ইসলামের এক প্রশ্নের জবাবে ওমর ফারুক বলেন, “তোমার প্রবলেম হল তুমি অলওয়েজ বায়াস্ট হয়ে পয়সা খেয়ে প্রশ্ন কর। দিস ইজ ভেরি ব্যাড।”
ওমর ফারুক চৌধুরীর এমন মন্তব্যে সাংবাদিকরা তাৎক্ষণিক তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযোগের প্রমাণ করার জন্য তার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। তা না হলে সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে বলেন।
সাংবাদিকদের এমন তোপের মুখে দ্রুত সেখান থেকে চলে যান সংসদ সদস্য।
দুপুরে সংসদ সদস্যের এ মন্তব্যের একটি ভিডিও পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এদিন উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল শপথ নেওয়ার পর প্রথম তার অফিসে যান দায়িত্বগ্রহণ করতে। সোহেল এ নির্বাচনে বড় ব্যবধানে বিজয়ী হন। এ ভোটে ফারুক চৌধুরীর সমর্থিত প্রার্থী সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম পরাজিত হন।
বেলাল উদ্দিন সোহেলের দায়িত্ব গ্রহণ ও প্রথম কর্মদিবসেই উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভা ছিল। এ সভায় যোগ দিতে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীও যান সেখানে। বেলাল উদ্দিনের দায়িত্ব গ্রহণের দিন অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থান নেন সাংবাদিকরা।
অপরদিকে, দায়িত্ব গ্রহণ ও প্রথম কর্মদিবস বলে বেলা ১১টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার কয়েকশ কর্মী-সমর্থক যান উপজেলা চত্বরে। দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সহায়তায় উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে বেলালের কর্মী-সমর্থকদের বের করে দেন। ইউএনও নিজেই হ্যান্ডমাইকে বার বার নেতাকর্মীদের চলে যেতে বলেন। তবে এরপরও সেখানে বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক থেকে যান।
এর কিছুক্ষণ পর ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন চেয়ারম্যান ও ৩০-৪০ জন নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের সামনে আসেন সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী।
৩ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের এক ভিডিওতে দেখা যায়, সংসদ সদস্য এসেই “এদিকে আসো, এদিকে আসো, সাংবাদিক সাহেবরা এদিকে আসো’ বলে সাংবাদিকদের ডাকেন।
এ সময় ওমর ফারুক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “আজ সমন্বয় মিটিং। এই মিটিংয়ে এই লোকগুলো কারা? এই অবৈধ সমাবেশটা কিসের? আমি ইউএনও সাহেবের কাছে প্রশ্ন করলাম। তাকে আমি দুইবার রিং করেছি যে, এই সমাবেশ হঠাও। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই সমাবেশ করা হয়েছে এবং এতে ইউএনও সাহেব ইনভলব কি-না আই ডোন্ট নো। বাট তাকে আমি দুইবার রিকোয়েস্ট করেছি এইগুলোকে হঠানোর জন্য।”
সাধারণ জনগণ কী একজন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে প্রথম দিন আসতে পারেন না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, “না। আজকে এখানে মিটিং আছে। জনপ্রতিনিধির সাথে আসতে পারে না। মিটিংয়ের দিনে পারে না।”
এ সময় কালের কণ্ঠের রাজশাহী ব্যুরো প্রধান রফিকুল ইসলাম প্রশ্ন করেন, “আপনার সঙ্গেও অনেক লোক আছে, তারা কেন এসেছেন?”
এ প্রশ্ন শুনেই রেগে যান সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি বলেন, “এরা চেয়ারম্যান। শোনো, তোমার প্রবলেম হলো- তুমি অলওয়েজ বায়াস্ট হয়ে পয়সা খেয়ে প্রশ্ন করো। দিস ইজ ভেরি ব্যাড।”
তখন একজন ফটোসাংবাদিক বলেন, “আপনি এটা খারাপ বললেন। আপনার কথাটা ঠিক নয়। এমন কথা বলার জন্য আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে।”
এ সময় ওমর ফারুক চৌধুরী প্রতিবাদ করতে থাকা দৈনিক ইত্তেফাকের জ্যেষ্ঠ ফটোসাংবাদিক আজাহার উদ্দিনের নাম ধরে বলেন, “আমি তোমাকে এ কথা বলি নাই। যে আমাকে প্রশ্ন করেছে, আমি তাকে বলেছি।”
তখন সাংবাদিকরা সবাই বলতে থাকেন, রফিকুল ইসলাম একটি সংগঠনের সভাপতি। সংসদ সদস্য একজন সাংবাদিককে এ কথা বলতে পারেন না। তাকে সরি বলে যেতে হবে।
সাংবাদিকদের প্রতিবাদের মুখে দ্রুত সেখান থেকে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের ভেতরে চলে যান ওমর ফারুক চৌধুরী।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম বলেন, “এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী যাকে-তাকে যখন-তখন অপমানজনক কথা বলেন। তিনি কিছুদিন আগেই নিজের এলাকার এক কলেজ অধ্যক্ষকে পিটিয়েছেন। তাকে অত্যন্ত যৌক্তিক একটা প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু তার পরিপ্রেক্ষিতে যে কথা বলেছেন, তা সাংবাদিকদের জন্য অপমানজনক।”
ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সাইফুর রহমান রকি। তিনি বলেন, “এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী পুরো সাংবাদিক সমাজকে অপমান করে কথা বলেছেন। তিনি যদি সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা না চান, তাহলে তার সমস্ত ইতিবাচক সংবাদ বয়কট করা হবে। সাংবাদিক ইউনিয়নও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে।”
গোদাগাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল বলেন, ঘটনার সময় তিনি ভেতরে ছিলেন। বাইরে কী হয়েছে তা তিনি জানেন না। তিনি বলেন, “নতুন একজন জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব নিতে গেলে তার সঙ্গে অনুসারীরা প্রথম দিন গিয়ে থাকেন। এ জন্যই মানুষ ভালোবেসে আমার সঙ্গে এসেছিল। কেউ এমপিকে হত্যার উদ্দেশ্যে আসেননি। এ রকম কেউ চিন্তাও করে না।”
সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী তাকে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে সমাবেশ’ করার সঙ্গে ইউএনওর সম্পৃক্ততা থাকার ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো কথা বলতে চাননি ইউএনও আতিকুল ইসলাম।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, “এমপি সাহেব কী বলেছেন তা শুনিনি। তাই এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তবে ইউএনও আতিকুল ইসলাম ভাল কাজ করছেন। স্থানীয় রাজনীতির দলাদলির সঙ্গে তার সম্পৃক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর একজন সংসদ সদস্যকে যে সম্মান ও মর্যাদা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা আছে তা গোদাগাড়ীর ইউএনও দিচ্ছেন এবং আগামীতেও দিয়ে যাবেন।”