দিনের প্রথমভাগে বৈরী আবহাওয়ায় ভোটারের উপস্থিতি কম থাকলেও পরে ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে।
Published : 09 May 2024, 09:10 PM
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে সারাদেশে ৩৬ শতাংশ ভোট পড়লেও টাঙ্গাইলের মধুপুর ও ধনবাড়ীতে ভোটের হার তুলনামূলক বেশি ছিল। সেখানে দুই উপজেলায় গড়ে সাড়ে ৫৩ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে।
বুধবার দিনের প্রথমভাগে বৈরী আবহাওয়ায় ভোটারের উপস্থিতি কম থাকলেও পরে ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে।
ভোটার ও সংশ্লিষ্টদের অভিমত, দলীয় প্রতীক না থাকা, প্রতিদ্বন্দ্বী যোগ্য প্রার্থীর উপস্থিতি, ভোটের প্রচার-পর্বে সহিংসতা এড়ানো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারি, ভোটকেন্দ্রে যেতে প্রার্থীদের আহ্বান, নিজের ভোট নিজে দিতে পারা- এসব কারণেই এ দুই উপজেলায় ভোটারের উপস্থিতি কিছুটা ভাল ছিল।
নির্বাচন কমিশনের হিসাবে, মধুপুর উপজেলায় ৫২.২ শতাংশ এবং ধনবাড়ীতে ৫৪.৯৬ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। গড়ে দুই উপজেলায় ভোট পড়েছে ৫৩.৫৮ শতাংয়শ, যা সারাদেশের ভোটের হারের চেয়ে ১৭.৪৮ শতাংশ বেশি।
বিগত কয়েকটি নির্বাচনে এই দুই উপজেলার ভোটের হার প্রায় সারাদেশের মতোই ছিল। ভোটের মাঠ ছিল ঠান্ডা। ভোট নিয়ে ভোটারদের মাঝে ছিল না তেমন কোনো উৎসাহ-উদ্দীপনা। কিন্তু হঠাৎ করে উপজেলা নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়াকে নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগ ইতিবাচকভাবে দেখছে।
দিনভর ভোট শেষে রাতে ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, মধুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ইয়াকুব আলী এবং ধনবাড়ীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ তালুকদার সবুজ চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন।
ইয়াকুব আলী আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ৭৩ হাজার ৩২৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছরোয়ার আলম খান দোয়াত-কলম প্রতীকে পেয়েছেন ৫১ হাজার ৮৭ ভোট।
এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে তালা প্রতীকের প্রার্থী মো. সজীব ৪৪ হাজার ৪১৫ ভোট এবং সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাঁস প্রতীকের প্রার্থী নিগার সুলতানা রুবি ৭২ হাজার ৯৯০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
অপরদিকে ধনবাড়ী উপজেলায় আব্দুল ওয়াদুদ তালুকদার সবুজ মোটরসাইকেল প্রতীকে পেয়েছেন ৩০ হাজার ৭৩০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী হারুনার রশীদ হীরা পেয়েছেন ২৯ হাজার ২৯৯ ভোট।
এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে গ্যাস সিলিন্ডার প্রতীকে ২৪ হাজার ৮২১ ভোট পেয়ে মোহাম্মদ আবু তালেব এবং সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাঁস প্রতীকের প্রার্থী মোছা. কল্পনা বেগম ৪৮ হাজার ৪২০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
ধনবাড়ী উপজেলায় একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়ন রয়েছে। উপজেলায় মোট ভোটার আছেন ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৮৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭৯ হাজার ৯০২ জন এবং নারী ৮২ হাজার ৬৮৬ জন।
মধুপুর উপজেলা একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ উপজেলায় মোট ভোটার আছেন ২ লাখ ৫৫ হাজার ২১৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২৭ হাজার ৪১৯ জন এবং নারী ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৯৮ জন।
মধুপুর উপজেলার চাপরী ইউনিয়নের দরীহাতীল গ্রামের আব্বাস হোসেন বলেন, “অনেক দিন পর এবারের ভোটে কোনো দল ছিল না। দলীয় মার্কাও ছিল না। এজন্য যোগ্য ব্যক্তি বাছাই করার সুযোগ ছিল।”
একই গ্রামের মোবারক হোসেন বলেন, “আমরা যে প্রার্থীকে ডাকলেই কাছে পাব তাকে নির্বাচিত করতে পরিবারের সবাই ভোট দিয়েছি। ভোটের পরিবেশ ভাল ছিল।”
ধনবাড়ী পৌর এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “সকালে কেন্দ্রে গিয়ে দেখি ভোটের পরিবেশ স্বাভাবিক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পর্যাপ্ত ছিল। নিজের ভোট নিজে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ভোট দেওয়ার সুন্দর পরিবেশ দেখে বাড়ি ফিরে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভোট দিয়ে এসেছি।”
এই ভোটার জানালেন, তার এলাকায় ভোটের প্রচারের সময় বড় ধরনের কোনো সহিংসতা হয়নি। এটাও মানুষকে কেন্দ্রে আসতে উৎসাহিত করেছে।
ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াদুদ তালুকদার সবুজ বলেন, “আমি দীর্ঘদিন মাঠে কাজ করছি। জনগণ আমাকে ভালোবাসে। আমাকে নির্বাচিত করতেই ভোটাররা কেন্দ্রে এসেছিলো।
তার ধারণা, “দলীয় প্রতীক না থাকায় সব শ্রেণির ভোটার কেন্দ্রে এসেছিল। এজন্য ভোটারের সংখ্যা বেড়েছে।”
মধুপুর-ধনবাড়ী উপজেলা নিয় গঠিত টাঙ্গাইল-১ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। তিনিও বুধবার ধনবাড়ীর একটি কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। তার দুই আত্মীয় এবার ভোটের লড়াইয়ে ছিলেন।
ভোট দিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “কেন্দ্রে ভোটারের অংশগ্রহণ ভাল। কেন্দ্রে শান্ত পরিবেশ রয়েছে ভোট দিতে কোনো বাধা নেই। নিজেও ভোট দিয়েছি।”
নির্বাচন সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ করতে দুই উপজেলায় ৫ প্লাটুন বিজিবিসহ পর্যাপ্ত সংখ্যাক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। মধুপুর এবং ধনবাড়ীর ১৫১ কেন্দ্রের সবগুলোই গুরুত্বর্পূণ হিসেবে চিহ্নিত করে কমিশন। নির্বাচনে ২ জন বিচারিক হাকিম এবং ২০ জন নির্বাহী হাকিম দায়িত্ব পালন করেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মতিয়ুর রহমান বলেন, প্রথম ধাপে তিনটি উপজেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গোপালপুর উপজেলায় একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মারা যাওয়ায় সেখানে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। দুই উপজেলায় ভাল ভোট হয়েছে।