বৃষ্টি শুরু হলেও প্রায় দেড় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী।
Published : 04 Jul 2024, 11:41 PM
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার সকালে ১০টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে মানববন্ধন করেন তারা। পরে মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনের ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
এর মধ্যে বৃষ্টি শুরু হলেও প্রায় দেড় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। এ সময় কোটাপদ্ধতির সংস্কার চেয়ে ৪ দফা দাবি তুলে ধরেন।
এর মধ্যে প্রথমত, ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে সরকারি চাকুরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কার করতে হবে। কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধা কোটায় শূন্যপদ পূরণ করতে হবে,
দ্বিতীয়ত, ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সব ধরনের সরকারি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় একবার কোটা সুবিধা ব্যবহার করতে পারবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
তৃতীয়ত, প্রতি জনশুমারির সঙ্গে অর্থনৈতিক সমীক্ষার মাধ্যমে বিদ্যমান কোটার পুনর্মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে এবং সর্বশেষ, দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রাকিবুল সরকার বলেন, “কয়েকদিন পরই আমার একটি চাকরিতে লিখিত পরীক্ষায় বসার কথা, কিন্তু আমি এই বৃষ্টির মধ্যেও শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে শরীক হয়েছি। কেননা আগামী প্রজন্ম চরম ঝুঁকির মধ্যে আছে।
“আমাদের মেধার অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে, এই কোটার সিদ্ধান্ত পুনর্বহালের মধ্যে দিয়ে। আমরা চাই দ্রুতই এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে, এ কোটা পদ্ধতি সংস্কার করা হোক।"
পপুলেশন সায়েন্সে অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আমানুল্লাহ খান বলেন, “আমরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না। এই বৈষম্যের দ্রুত অবসান চাই। নাহলে আবারও এই আন্দোলন ভয়াবহ রূপ নিবে।"
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা পরিপত্রে সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা কোটার পাশাপাশি বাতিল হয় ১০ শতাংশ করে নারী ও জেলা কোটাও।
তবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল হলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে কোটা ব্যবস্থা আগের মতই বহাল থাকবে বলে ওই পরিপত্রে বলা হয়।
ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাই কোর্ট রুল দেয়।
রুলে ওই পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।ৎ
চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত রুল অ্যাবসলিউট বা যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেয় বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ।
এর ফলে সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্র অবৈধ হয়ে গেছে।
এরপর থেকেই ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি মুলতবি হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ চেম্বার আদালত এ আদেশ দেন। ফলে আপাতত হাইকোর্টের রায় বহাল রয়েছে।
এর প্রতিবাদে সকালে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল ও ক্যাম্পাস সংলগ্ন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
আরও পড়ুন:
মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের রায় আপাতত বহাল
কোটার রায় বহাল: জাবি শিক্ষার্থীদের ৩০ মিনিট ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবর
কোটা বাতিলের দাবিতে কুমিল্লা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ, তীব্র যানজট