দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধে ভারত-বাংলাদেশে যাতায়াতকারী যাত্রীরা পড়েছেন সীমাহীন দুর্ভোগে।
Published : 25 Nov 2024, 07:57 PM
যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে চতুর্থ দিনের মত দূরপাল্লার সব বাস বন্ধ রয়েছে।
এতদিন বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও ভারত ফেরত অনেক যাত্রী ১২ কিলোমিটার দূরে নাভারন সাতক্ষীরা মোড় থেকে সাতক্ষীরা রুটের গাড়ি ধরে বাড়ি ফিরছিলেন। সোমবার থেকে সেটাও বন্ধ হয়ে গেল।
এতে হাজার হাজার যাত্রীর দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
যাত্রীদের চেকপোস্টে না নিতে দিয়ে গভীর রাতে পৌর বাস টার্মিনালে নামাতে বাধ্য করার অভিযোগে শুক্রবার রাত থেকে বেনাপোলের দূরপাল্লার সব বাস বন্ধ রেখেছে মালিক সমিতি।
‘বেনাপোল পরিবহন ম্যানেজার সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, “দাবি-দাওয়া না মানায় পরিবহন মালিকরা তাদের গাড়ি এই রুটে চালাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সোমবার থেকে সাতক্ষীরা রুটও বন্ধ করে দিয়েছে মালিক সমিতি।”
সাতক্ষীরা কে লাইন পরিবহনের জামতলা কাউন্টার প্রধান আনোয়ার হোসেন বিদ্যুৎ বলেন, “বেনাপোলের সমস্যার সমাধান না হওয়ায় সাতক্ষীরা থেকে দূরপাল্লার পরিবহনের সব বাস বন্ধ করে দিয়েছে মালিক সমিতি। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো টিকিট বিক্রি করছি না।”
বেনাপোল চেকপোস্টে শ্যামলী এনআর বাস কাউন্টারের স্টাফ মনজিল হোসেন বলেন, “যাত্রী ভোগান্তি এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ না থাকার কারণে ঢাকার মালিকদের নির্দেশে চার দিন ধরে বেনাপোল রুটে কোনো যাত্রীবাহী বাস ছাড়েনি। তারা পরবর্তীতে নির্দেশ দিলে পরিবহন সেবা আবারো শুরু করা হবে।”
বেনাপোলে যানজট নিরসনে পৌর বাস টার্মিনাল ব্যবহারে নির্দেশনা দেয় জেলা প্রশাসন।
পরিবহন কর্তৃপক্ষ এতে সহমত পোষণ করে দিনের বাসগুলো ছাড়ছিল সেখান থেকেই। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সুবিধায় রাতের বাস চেকপোস্ট টার্মিনালে এসে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে ফিরে যাচ্ছিল পৌর টার্মিনালে।
এর মধ্যে ২২ নভেম্বর গভীর রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসের যাত্রীদের হঠাৎ করে পৌর বাস টার্মিনালে নামিয়ে নেওয়া হয়। চেকপোস্ট টার্মিনালে বাস প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে দূর পাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রাখে মালিক সমিতি।
ঢাকার ফজলুর রহমান শেখ বলেন, “ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় কারণে দ্রুত ফিরতে হয়েছে। এখানে এসে দেখি, বাস বন্ধ। আরেক বিপদ, হাতে টাকা পয়সা কম। তারপরও ট্রেনে যশোর যাচ্ছি, দেখি, সেখান থেকে কীভাবে বাড়ি যাওয়া যায়।”
যশোর জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন পাপ্পু বলেন, “বেনাপোল চেকপোস্টে বন্দর ভেহিক্যাল টার্মিনাল চালু হওয়ায় কমে গেছে গাড়ির জট। বাস চলাচলে কোনো যানজট হয় না। ভারত-বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাকের কারণে সৃষ্টি হত যানজটের।
দূরপাল্লার যাত্রীদের নিরাপত্তা ও দুর্ভোগের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বিশেষ বিবেচনার দাবী জানান মুসলিম উদ্দিন পাপ্পু।
এদিকে, টানা চার দিন ধরে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধে ভারত- বাংলাদেশ যাতায়াতকারী যাত্রীরা পড়ছেন সীমাহীন ভোগান্তিতে।
গন্তব্যে যেতে তারা প্রাইভেট কার, মাইক্রো বাস, ট্রেন ব্যবহার করছেন। এতে ভোগান্তি, সময় অপচয়ের পাশাপাশি খরচও বেশি হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করছেন।
বেনাপোল চেকপোস্টে কথা হয় ভারত ফেরত যাত্রী নেত্রকোণার জিতেন সাহা, নারায়ণগঞ্জের সাদ্দাম হোসেন টিপু, ঢাকার ফজলুর রহমান শেখ, লাল্টু হোসেন ও বিনয় পালের সাথে।
জিতেন সাহা বলেন, “ভারত থেকে দেশে ফিরে এখন দেখছি দুর্ভোগের শেষ নেই। পরে তিনজন মিলে একটি প্রাইভেট কার নিয়ে যশোর যাচ্ছি। সেখান থেকে বাস ধরে বাড়ি যাব।”
আরও পড়ুন:
বেনাপোলে তৃতীয় দিনের মত বাস বন্ধ, যাত্রী ভোগান্তি চরমে
'যাত্রী হয়রানি', বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার বাস বন্ধ, ভোগান্তি