আলোচনা না করেই বাস বন্ধ করে দেওয়া সঠিক কাজ হয়নি, বলেন পৌর প্রশাসক।
Published : 23 Nov 2024, 11:11 PM
যাত্রীদের চেকপোস্টে না নিতে দিয়ে গভীর রাতে পৌর বাস টার্মিনালে নামাতে বাধ্য করার অভিযোগে বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার সব বাস বন্ধ রেখেছে মালিক সমিতি।
এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন পাসপোর্টধারী যাত্রীরা।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, যানজট নিরসনের লক্ষে এক সপ্তাহ আগে যশোরের ডিসির সঙ্গে স্থানীয় নাগরিক ও পরিবহন কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়।
বৈঠকে চেকপোস্ট এবং বাজার থেকে দূরপাল্লার ও লোকাল যেসব বাস বেনাপোল-যশোর-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ছেড়ে যায় সেসব বাস এখন থেকে বেনাপোল বাজার থেকে দুই কিলোমিটার দূরে পৌর বাস টার্মিনাল থেকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়।
আর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রাতে আসা দূরপাল্লার বাসগুলোর যাত্রী বেনাপোল চেকপোস্টে নামিয়ে দিয়ে পরে টার্মিনালে ফিরে যাবে।
কিন্তু শুক্রবার রাত তিনটার দিকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পরিবহনগুলোর যাত্রীদের টার্মিনালে জোর করে নামিয়ে দিতে বাধ্য করার অভিযোগ ওঠে দায়িত্বে থাকা পৌরসভার লোকজনের বিরুদ্ধে।
এতে যাত্রী হয়রানির প্রতিবাদে মালিক সমিতি সব ধরনের দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
বেনাপোল পরিবহন সমিতির সভাপতি বাবলুর রহমান বাবু বলেন, “প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর থেকে আমরা তাদের নির্দেশনা মত চলছিলাম। ঢাকা থেকে রাতে ছেড়ে আসা বাসগুলোর পাসপোর্টযাত্রীদের বেনাপোল চেকপোস্টে নামিয়ে দিয়ে খালি বাস পৌর টার্মিনালে চলে যাচ্ছিল।
“কিন্তু হঠাৎ শুক্রবার রাত ৩টার দিকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বাসগুলোর যাত্রীদের জোর করে পৌর টার্মিনালে নামিয়ে দেওয়া হয়। এতে যাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন এবং হয়রানির শিকার হন।
“পরে সেইসব যাত্রীদের আবার লোকাল বাসে করে চেকপোস্টে পাঠান টার্মিনালের থাকা পৌরসভার লোকজন।”
দূরপাল্লার পরিবহনের স্টাফরা বলছেন, ওই রাতে লোকাল বাস যদি চেকপোস্টে যেতে পারে, তাহলে দূরপাল্লার বাসগুলোই তো সরাসরি চেকপোস্টে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে আসতে পারত।
ঢাকার পাসপোর্টযাত্রী মেহেদী হাসান বলেন, “ঢাকা থেকে এসে বর্ডার থেকে দুই কিলোমিটার দূরে পৌর টার্মিনালে বাস থেকে রাত ৩টার সময় নামিয়ে দিয়েছে। পরে দুই ঘণ্টা একটি চায়ের দোকানে বসে সকাল হওয়ার পর ইজিবাইক নিয়ে বর্ডারে এসেছি।”
এসব ঘটনায় পৌরসভার লোকজনদের বিরুদ্ধে যাত্রী হয়রানির অভিযোগ তুলে শুক্রবার রাত থেকে দূরপাল্লার বাস বন্ধ করে রাখে মালিক সমিতি।
শুক্রবার রাতে বেনাপোলের উদ্দেশে কোনো গাড়ি ছাড়েনি এবং শনিবার বেনাপোল থেকে সব ধরনের পরিবহন এবং দূরপাল্লার বাস বন্ধ ছিল।
এ ব্যাপারে বেনাপোল পৌর প্রশাসক ও শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী নাজিব হাসান বলেন, “আমরা তো চেকপোস্টের টার্মিনাল বন্ধ করিনি। বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশনা অনুযায়ী টার্মিনালের গেইট বন্ধ রেখেছে। গেইট বন্ধ থাকার কারণে শুক্রবার গভীর রাতে গাড়িগুলোর যাত্রী পৌর বাস টার্মিনালে নামিয়ে দিয়েছিল।”
রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত যাত্রীবাহী বাস চেকপোস্টে গেলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, “শনিবার ভোরের দিকেও চেকপোস্টে যাত্রী নিয়ে গেছে দূরপাল্লার বাসগুলো।”
তিনি আরো বলেন, “একটা সমস্যা হলে তার সমাধানও আছে। বাস মালিকের প্রতিনিধিরা তো আমার সাথে আলোচনা করতে পারত। তারা এলাকায় একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করার জন্য এসব করেছেন। আলোচনা না করেই বাস বন্ধ রাখছে, এটা সঠিক কাজ হয়নি।”
এদিকে, অনেক পাসপোর্টধারী যাত্রীর ভাষ্য, ভারতের পেট্রাপোলে যাত্রীদের সুবিধার্থে ইমিগ্রেশনের পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে বাস টার্মিনাল।
কিন্তু বাংলাদেশে সীমান্তের টার্মিনাল বন্ধ করে দিয়ে দুই কিলোমিটার দূরের টার্মিনালে পাঠানো হচ্ছে যাত্রীদের।
এতে চরম ভোগান্তি ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের।