Published : 14 Apr 2025, 09:27 AM
গাছে গাছে বাতাসে দুলছে ফুল, ত্বীন গাছে এসেছে ফল, ডালে-ডালে ঝুলে আছে ছোট-ছোট লেবু; সবুজ কাঁচা মরিচে ভরে উঠেছে গাছ- এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের দেখা মিলছে সিলেটের আদালত প্রাঙ্গণে।
তবে ঠিক প্রাঙ্গন নয়, নগরীর বন্দরবাজার এলাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দশ তলা ভবনের ছাদ জুড়ে গড়ে উঠেছে ফুলে-ফলে ভরা ‘স্কাই গার্ডেন’ নামের এ বাগান।
এ আদালতের নাজির মো. ফাইজুল ইসলাম বলেন, “চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আ.ন.ম ইলিয়াসের উদ্যোগেই আদালত ভবনের ছাদের ১৬ হাজার বর্গফুট জায়গাতে বাগানটি করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “স্যার গত সেপ্টেম্বরে সিলেটে যোগদানের পর নভেম্বর মাসে নিজ উদ্যোগে ছাদ বাগান করার কাজ শুরু করেন। তিনি নরসিংদী থেকে আগের বাসার গাছের চারাও নিয়ে এসেছেন ছাদ বাগানে।
“তিনি নিজেই বাগানের পরিচর্যা করছেন, তা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এই কাজে আদালতের সব কর্মকর্তা-কর্মচারিরা সহযোগিতা করেছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারিরা ছাদ বাগান থেকে শাক-সবজি নিয়ে খাচ্ছেন।’’
সরেজমিনে ছাদ বাগানে দেখা যায়, ছাদের উপরে থাকায় পর্যাপ্ত সূর্যের আলোর সঙ্গে রয়েছে বাতাস। তাতে দুলছে বাগানের চারপাশে থাকা নানা জাতের ফুল-ফলের গাছ। সারি-সারি টবে থাকা গাছগুলোয় ফুটেছে ফুল, ধরেছে নানা রকমের ফল এবং শাকসবজি।
গাছগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে: জবা, ধানলিলি, গোলাপ, হাসনাহেনা, মাধবীলতা, গন্ধরাজ, রঙ্গন, জুঁই, বাগান বিলাস, কৈলাশ ফুল।
ফলের মধ্যে আছে- আমলকি, পেয়ারা, সিজিয়াম, কলাগাছ, সুপার ভাগোয়া আনার, আমড়া, আঙ্গুর, ড্রাগন, পেঁপে, মাল্টা, বিভিন্ন রকমের কুল বড়ই ও চার প্রজাতির আম।
আছে কাঁচা মরিচ, লেবু, বেগুন, বাঁধাকপি, টমেটো, লাউ, শসা, করলা, পুইশাক, লাল শাক, সিম, ঢেড়স, রসুন গাছসহ নানা মৌসুমি শাক-সবজি।
বাগানে আরও রয়েছে বাসক-মেহেদীসহ বিভিন্ন জাতের ঔষধি গাছের পাশাপাশি
বনসাই, অ্যালোভেরা, এরিকা পাম, তাল পামসহ নানা ধরনের ক্যাকটাস।
বাগান দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা কর্মচারিরা জানান, অফিসের সবাই এখান থেকে সবজি নিয়ে খাচ্ছেন। গত কয়েকদিনে ছাদ বাগান থেকে অন্তত ১৫ কেজি বেগুন, ৭ কেজি টমেটো, ১৫টি লাউ, শসা, করলা, বাঁধাকপি, পুইশাক, লাল শাক, সিম, ঢেড়স, রসুন খাওয়া হয়েছে।
ফল গাছগুলোতে ফল এসেছে; কিছুদিন পর ফলও খাওয়া যাবে। সারা বছরই বাগান থেকে সবজি নিতে পারবেন বলে আশা তাদের।
নাজির মো. ফাইজুল ইসলাম বলেন, “ইলিয়াস স্যারের গাছের প্রতি আলাদা ভালো লাগা রয়েছে। ছাদ বাগান করার আগে আমরা প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করেছি, যাতে ভবনের কোনো ক্ষতি না হয়। তাদের পরামর্শ মেনে বাগানে পানি দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলে, “চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শুধু ছাদ বাগান নয় তিনি নিজ প্রচেষ্টায় আদালতের বিচারপ্রার্থী জনগণের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছেন। আদালতের গেইটে ডিজিটাল সাইনবোর্ড স্থাপন, হলরুমের কাজও করিয়েছেন।”
সিলেটের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আ.ন.ম ইলিয়াস বলেন, “আমি বিশ্বাস করি একটি বাগান বিশুদ্ধ বাতাসের অফুরন্ত ভান্ডার। আমরা প্রতিনিয়ত নানাভাবে পরিবেশ দূষণ করেই চলেছি। আমার ক্ষুদ্র চেষ্টায় যদি সবুজায়নে সামান্য অবদান রাখতে পারি তবে কিছুটা হলেও নৈতিক দায়মুক্তি ঘটবে।”
যারা বিচারাঙ্গণে করায় বাহিরে যাওয়ার তেমন একটা সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের নিয়মের মধ্যে চলতে হয়। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার প্রতি বিবেকের দায়বদ্ধতা আর আমাদের নিজস্ব রিফ্রেশমেন্টের একটি দারুণ উপজীব্য হতে পারে ছাদ বাগান। সে উপলবদ্ধি থেকেই ছাদ বাগান করার পরিকল্পনা হাতে নেই।
“এরপর আমি সিলেটের বন বিভাগ ও কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাদের সঙ্গে কথা বলে দুই ট্রাক মাটি নিয়ে আসা হয়। তারপর সিলেটের বিভিন্ন নার্সারি থেকে ঔষধি-ফুল-ফলসহ নানা ধরনের ২৫০ থেকে ৩০০টি গাছ এনে বাগানটি তৈরি করি।”
ছাদ বাগানটি তৈরি করতে আদালতের সবাই সহযোগিতা করেছে সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা পাচ্ছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “আমি মনে করি ছাদ বাগান করার এই প্রবণতা শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে। আর কেবলমাত্র বাসা-বাড়িতে নয়, অফিস আদালতেও বাগান করা সম্ভব। সবাই এগিয়ে আসলে ইট-সুড়কির শহরে নীরবে এক সবুজ বিপ্লব গড়ে উঠবে।”
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক দীপক কুমার দাস বলেন, “এটি একটি ভালো উদ্যোগ। আমরা উনাদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি। সিলেটে এ রকম আরও ছাদ বাগান হলে পরিবেশ ভালো থাকবে; শহরের চারপাশ সবুজে ভরে উঠবে। কৃষি বিভাগ ছাদ করতে সবাইকে সহযোগিতা করবো।”