সড়কে অব্যবস্থাপনার কথা সবাই মানলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
Published : 06 Oct 2024, 10:35 AM
সড়কে অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোলে যানজট রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, যেখানে সেখানে বাস-ট্রাক রাখায় বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট এলাকা থেকে বাস টার্মিনাল পর্যন্ত ২ কিলোমিটার এলাকায় এ যানজট দেখা দিচ্ছে। মাস খানেক ধরে প্রতিদিন বেলা ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সড়কে দেখা যাচ্ছে এ পরিস্থিতি।
তাতে দুর্ভোগে পোহাচ্ছেন ব্যবসায়ী ও ভারতে যাতায়াতকারীরা। তাছাড়া শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, যানজট নিরসনে বেনাপোল পৌরসভা কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ট্রাক ও বাস টার্মিনাল নির্মাণ করলেও সেখানে কেউ যায় না। ঢাকা-কলকাতা মহাসড়কের কোথাও এক সারি, আবার কোথাও দুই সারি করে গাড়ি রাখেন বেশিরভাগ চালক।
ফলে সরকারি ছুটির দিন বাদে সবসময়ই বেনাপোল বন্দর ও বাজার এলাকায় অসহনীয় যানজট লেগে থাকছে। কিন্তু তাতে নজর নেই প্রশাসন কিংবা পৌর কর্তৃপক্ষের।
বেনাপোল পরিবহন ম্যানেজার সমিতির সভাপতি বাবলুর রহমান বাবু বলেন, “মহাসড়কের দু'ধারে দূরপাল্লার বাস রাখার কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। প্রশাসন একটু নজরদারি করলে এই বাসগুলো টার্মিনাল থেকে ছাড়ার ব্যবস্থা করতে পারে।
“সকল ধরনের বাস চেকপোস্ট থেকে না ছেড়ে টার্মিনাল থেকে ছাড়ার ব্যবস্থা করলে যানজট কিছুটা কমবে।”
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ না করার কারণে সড়কে বিশৃঙ্খল দশা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজী।
তিনি বলেন, “পণ্যবোঝাই ও বাংলাদেশি খালি ট্রাকের চালকদের বারবার বলা হচ্ছে রাস্তার পাশে ট্রাক না রাখতে। তার পরও তারা কোনো কথা শুনছে না। আমাদের স্থানীয় চালকরাই বেশি সমস্যা।
“অন্যরা টার্মিনালে রাখলেও স্থানীয় চালকরা রাস্তার দুধারে রেখে যানজট বাধাচ্ছে। আমরা কয়েকবার রাস্তায় ট্রাক না রাখার জন্য মাইকিং করেছি। কিন্তু তারা কথা শুনছে না। এখন প্রশাসনই পারে ট্রাকগুলোকে রাস্তা থেকে সরিয়ে টার্মিনালে নিয়ে যেতে।”
সড়কে যে অব্যবস্থাপনা চলছে তা মানছেন যশোর জেলা মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন পাপ্পুও। তবে যানজটের জন্য লোকাল বাস দায়ী নয় বলে দাবি তার।
পাপ্পুর কথায়, “আমাদের লোকাল বাসগুলো বেনাপোল বাজার থেকে অনেক দূরে পৌরসভা নির্ধারিত স্থানে থাকে। বেনাপোল-যশোর রুটের লোকাল বাসের কারণে রাস্তায় কোনো যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে না।
“টার্মিনালে একটি কাউন্টার নিতে পৌরসভাকে অগ্রিম আড়াই লাখ টাকা দিতে হবে এবং মাসে ভাড়া ৩ হাজার টাকা। আমরা ৫ টাকা, ১০ টাকার যাত্রী বহন করি; এতো টাকা দিয়ে টার্মিনালে কাউন্টার নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।”
বাস মালিকদের এ নেতার ভাষ্য, টার্মিনালে অবকাঠামোগত নানা সমস্যা রয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা না থাকার কারণে তারা সেখানে গাড়ি রাখেন না। তবে সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া হলে টার্মিনালে যেতে তাদের আপত্তি নেই।
পৌরসভার নীরবতার কারণে যানজট সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলে দাবি করেন ভারত বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মতিয়ার রহমান।
তিনি বলেন, “বেনাপোলে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে শত শত লোকাল ও বিভিন্ন পরিবহনের বাস টার্মিনালে যায় না। প্রধান সড়কের দু'ধারে যেখানে সেখানে বাস রেখে ধোয়ামোছার কাছ চলে। এ নিয়ে পৌরসভাও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তার ফলে বেনাপোল যানজট মুক্ত হচ্ছে না।”
যানজটের কারণে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা বলছিলেন মতিয়ার।
তার কথায়, “যানজটের কারণে সকালে ট্রাকগুলো লোড (পণ্য বোঝাই) হলেও বেনাপোল বন্দর ছাড়তে ছাড়তে রাত হচ্ছে। এতে আমরা ব্যবসায়ীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
“বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ হাজার যাত্রী ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করে থাকে। যাত্রীদের বেনাপোল থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে চেকপোস্ট পর্যন্ত যেতে সময় লাগে ২ ঘণ্টা।”
জানতে চাইলে বেনাপোল পৌর প্রশাসক সুজন সরকার বলেন, “বেনাপোল পৌরসভার দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রথমে যেটা শুনেছি, সেটা হলো বেনাপোলের যানজট। যানজটের কারণ হিসেবে আমি যেটা দেখেছি, সেটা হলো বেনাপোলে যে বাস টার্মিনাল ও ট্রাক টার্মিনাল রয়েছে, সেখানে কোনো বাস বা ট্রাক না যেয়ে রাস্তার দু'ধারে রেখে যানজটের সৃষ্টি করছে।
“খুব শিগগিরই যানজট নিরসনের জন্য উপজেলা প্রশাসন, বেনাপোলের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন, বন্দর কাস্টমস, বাস ও ট্রাক মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনা করে বাস ও ট্রাকগুলোকে ট্রার্মিনালে পাঠানোর ব্যবস্থা করব।”