কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে ওই রোগী পাঁচতলার বারান্দায় পাতা শয্যায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন বলে জানান স্বজনরা।
Published : 08 Mar 2025, 01:44 PM
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি ভবনের পাঁচতলা থেকে পড়ে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে তিনি বারান্দায় অরক্ষিত শয্যায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন বলে জানান স্বজনরা।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. শাহজাহান।
নিহত ওসমান গণি (৪৭) কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি হাতের অপারেশনের জন্য এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সার্জারি বিভাগের এক রোগীর স্বজন জামাল হোসেন বলেন, এক সপ্তাহ আগে গণি হাতের অপারেশনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে বেড না পাওয়ায় ওয়ার্ড মাস্টারকে ম্যানেজ করে বারান্দায় একটি বেড নেন তার স্বজনরা। অপারেশনের পর থেকে গনি সেখানেই ছিলেন।
“বেডটি বারান্দার রেলিংয়ের সঙ্গে হওয়ায় খুব ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। রাতে বারান্দার দেয়ালে হেলান দিতে গিয়ে ফসকে নিচে পড়ে যান গনি। পাঁচ তলা থেকে পড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।”
রোগীর দুই হাতে ব্যান্ডেজ থাকায় ভবনের কার্নিশ কিংবা দেয়াল ধরে বাঁচতে পারেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে গনির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তার স্ত্রী কোহিনুর বেগমের। তিনি বলেন, “আমার স্বামী চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। কিন্তু হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার কারণে বেড পাননি।
“পাঁচ তলার বারান্দায় যে বেড দেওয়া হয়েছিল; সেখানে কোনও সুরক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। রাতে তার যখন অস্বস্তি লাগছিল, তখন নড়েচড়ে বসে হেলান দিতে গিয়ে নিচে পড়ে যায় তিনি।”
গণির ছেলে রাব্বি বলেন, “বাবাকে নিয়েছিলাম চিকিৎসা করাতে, এমন দুর্ঘটনায় মারা যাবে বুঝতে পারিনি। ঘটনার পর পর ওয়ার্ড মাস্টার ঘটনাস্থল থেকে বেডটি সরিয়ে নিয়েছেন।”
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শাহজাহান বলেন, সেলুলাইটিসে আক্রান্ত হয়ে ৩ জানুয়ারি ওসমান গনি হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি হন। ওয়ার্ডের ভেতরে শয্যা না থাকায় তাদের চাহিদা মোতাবেক ওয়ার্ড মাস্টার বারান্দায় শয্যার ব্যবস্থা করেন।
সেখান থেকে পড়ে গিয়ে গনির মৃত্যুকে দুর্ঘটনা বলে মনে করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০০ সিটের বিপরীতে এক হাজার ২৪ জন ভর্তি আছেন। সংকট রয়েছে বলে বারান্দায় রোগীদের সিট দিতে হয়।
তবে বারান্দায় রাখা বেডগুলো ভবিষ্যতে যাতে ঝুঁকিপূর্ণ উচ্চতায় না থাকে এবং মেঝেতে দেওয়া হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখার কথা বলেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শাহজাহান।