খুলনার সার্কিট হাউস মাঠে মহানগর বিএনপির সম্মেলনে সোমবার ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
Published : 24 Feb 2025, 07:58 PM
দেশের গণতন্ত্রকে যেকোনো মূল্যে ফিরিয়ে আনতে দলের সবাইকে অব্যাহতভাবে চেষ্টা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, “দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গণতন্ত্রের সপক্ষের শক্তি হিসেবে দলের সবাইকে অব্যাহতভাবে চেষ্টা করতে হবে, যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র যাতে ফিরে আসে। যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার যাতে প্রতিষ্ঠিত হয়।”
খুলনার সার্কিট হাউস মাঠে মহানগর বিএনপির সম্মেলনে সোমবার দুপুরে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “আমরা যদি মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশ যে সর্বনাশের খাদের কিনারে চলে গেছে, সেখান থেকে উঠিয়ে আনতে সক্ষম হব।”
তারেক রহমান বলেন, “আজ আমরা দলের ভেতরে গণতান্ত্রিক চর্চা করছি। দলকে গণতান্ত্রিকভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। কিন্তু এই যে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, কথা বলার অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের হাজারো নেতাকর্মী খুন হয়েছে, গুম হয়েছে, আমাদের লাখ লাখ মানুষ বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছে, বিভিন্ন গায়েবি মামলা, মিথ্যা মামলায় হাজিরা দিতে হয়েছে, এখনো প্রতিনিয়ত আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে।”
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “অতীতে কী হয়েছে, আমরা দেখেছি। কীভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে, কীভাবে মানুষের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন হয়েছে- আমরা দেখেছি।
“কিছুদিন আগেও কীভাবে অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে। আমাদের বহু সহকর্মীকে আমরা হারিয়েছি। বিশেষ করে জুলাই-অগাস্ট মাসে আমরা দেখেছি কীভাবে নিরীহ সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন হয়েছে।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “কীভাবে এক হাজার ৪০০ মানুষ শহীদ হয়েছেন আজকের এই মুক্ত পরিবেশকে উপহার দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমাদেরকে থেমে থাকলে চলবে না, সামনে এগোতে হবে।”
তারেক রহমান বলেন, “রাজনীতির একটি অংশ-বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে, তর্ক হবে, বিতর্ক হবে। তবে আমাদের খেয়াল করতে হবে তর্ক-বিতর্ক করতে গিয়ে দেশে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব যাতে না হয়, যাতে করে সেই স্বৈরাচার হোক অথবা এমন হোক যারা বাংলাদেশের ভালো চায় না, এমন কেউ সুযোগ পেয়ে যাক। এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
“একই সঙ্গে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে আরও একটি বিষয়ে, আমরা অযাচিত তর্ক-বিতর্ক করে জনগণ এবং দেশের স্বার্থ রক্ষা থেকে যাতে দূরে সরে না যাই।”
দেশের মধ্যে স্থিতিশীলতা আনতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা, কৃষিব্যবস্থার দিকে নজর দিতে হবে। নজর দিতে হবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির দিকে, সাধারণ মানুষ প্রতিদিন যুদ্ধ করছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে।”
রাষ্ট্রের সংস্কারের বিষয়ে তারেক বলেন, “আজ আমরা সংস্কারের কথা বলেছি। কিন্তু সংস্কার নিয়ে যদি প্রতিনিয়ত শুধু অবান্তর আলোচনা করতে থাকি, তাহলে আমাদের যে মূল কাজগুলো তা দূরে সরে যাব। সঠিক ব্যক্তিদের নির্বাচিত করতে হবে, যারা দেশের মানুষের জন্য কাজগুলো করবে।”
দেশের অধিকাংশ মানুষ বিএনপির নেতাকর্মীদের দিকে তাকিয়ে আছেন বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এখানে যারা হাজির, তারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সৈনিক, আপনারা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কর্মী। দেশের অধিকাংশ মানুষ আজ আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে। অধিকাংশ মানুষ মনে করে, দেশে যদি একটি সঠিক ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে বিএনপিই সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পাবে।
“সহকর্মীরা, এই আশা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। সেই জন্য আমাদের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে তৈরি হতে হবে। দেশের মানুষ আমাদের কাছে যে প্রত্যাশা করে, সেই প্রত্যাশা অনুযায়ী আমাদের গড়ে তুলতে হবে। আমাদের কথাগুলোকে পৌঁছে দিতে হবে।”
তারেক বলেন, “দেশের মানুষ আমাদের দায়িত্ব দিলে সেই দায়িত্ব যাতে আমরা সফলভাবে পালন করতে পারি, তার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।”
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
খুলনা নগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা সম্মেলনে সভাপতিত্বে এবং নগর বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল আলমের (তুহিন) সঞ্চালনায় সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বেবী নাজনীন, দলের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম (বকুল), গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক শামীমুর রহমান, খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু ও খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু।