ওসি জানান, ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় যারা সামাজিক বিচারক হিসেবে ছিলেন তাদের প্রত্যেককে নোটিশ পাঠানো হবে।
Published : 13 Mar 2025, 07:53 PM
বান্দরবানে রোয়াংছড়ি উপজেলায় খিয়াং সম্প্রদায়ের মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা সালিশ বসিয়ে ‘টাকার বিনিময়ে মীমাংসা’র অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
কিশোরীর বড় ভাই বৃহস্পতিবার রোয়াংছড়ি থানায় ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেছেন।
গ্রেপ্তার জামাল হোসেন পটুয়াখালী জেলার গাছনি ইউনিয়নের দক্ষিণ দাসপাড়ার বাসিন্দা। তিনি রোয়াংছড়ি-রুমা সড়কে সংস্কার কাজে নিয়োজিত শ্রমিক ছিলেন। তিনি বান্দরবান পৌর এলাকায় ৮ নাম্বার ওয়ার্ডের ওয়াপদা ব্রিজ এলাকায় থাকতেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সোমবার সন্ধ্যা পাড়ার রাস্তায় জামাল হোসেন খিয়াং সম্প্রদায়ের ১৭ বছর বয়সি এক কিশোরীকে একা পেয়ে টানাহেঁচড়া করে শ্মশানঘাটের পাশে জঙ্গলের দিকে নিয়ে যায়। তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তখন কিশোরীর চিৎকার শুনে পাড়ার লোকজন এগিয়ে এলে আসামি জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যায়। পরে কিশোরীকে উদ্ধার করে ঘরে নিয়ে আসা হয়।
পরে আসামিকে আশপাশের এলাকায় খোঁজাখুঁজি করে স্থানীয় লোকজন। পরদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জামালকে রাস্তায় পেয়ে আটক করে মারধর করে স্থানীয় লোকজন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাকে গ্রেপ্তার করে।
এ বিষয়ে রোয়াংছড়ি থানা ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, “ঘটনার পরের দিন জামালকে আটক করা হয়। পরে ভিক্টিমের পরিবারে কেউ থানায় কোনো অভিযোগ করতে না আসায় তাকে ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠানো হয়।
“বৃহস্পতিবার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের জামালকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তিনি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।”
এর আগেও জামালের বিরুদ্ধে বান্দরবান সদর থানায় চুরি, মাদক, ধর্ষণ ও মারামারি ঘটনায় চারটি মামলা রয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
ওসি আরও বলেন, ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় যারা সামাজিক বিচারক হিসেবে ছিলেন তাদের প্রত্যেককে নোটিশ পাঠানো হবে।
ধর্ষণচেষ্টার ঘটনার পরের দিন ঘটনাটি মীমাংসার জন্য সালিশ বসিয়ে জামালকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করে একটি আপসনামার কপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হয়। এতে চারজন পাড়াপ্রধান, একজন আনসার সদস্য, একজন শিক্ষক এবং দুজন ছাত্রপ্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন বলে সেখানে বলা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কিশোরীর বড় ভাই বলেন, “সালিশ বসার দিন আমি পাড়ায় ছিলাম না। উপজেলা সদরে আসছিলাম। এ বিষয়ে পাড়ার মুরুব্বিরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জরিমানা হিসেবে যে আপসনামায় ৪০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে সেটাও বাস্তবে দেওয়া হয়নি।
“এক দেড় বছর আগে বাবা মারা গেছে। মাও অসহায়। দৌড়ঝাঁপ করার মানুষ নেই। সেসব কথা বিবেচনা করে প্রথমে মামলার দিকে যাইনি। যে মুহূর্তে আসামিকে পাড়ায় ঘুরানো হয় তখন পুলিশ এসে তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।”
তিনি বলেন, “আমার বোন ছোটবেলায় সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিল। দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। তিন বছর আগে থেকে তার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। দেড় বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তার এই সমস্যা আরও বেড়েছে।”
জরিমানার বিষয়ে জানতে শ্রমিকদের মাঝি (দলনেতা) মো. মহিউদ্দিনকে ফোন করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এলাকার কয়েকজনের ভাষ্য, নিজেদের মত করে রীতিনীতি অনুযায়ী সামাজিক বিচার করে থাকেন তারা। কিন্তু ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টার মত ঘটনা সামাজিকভাবে বিচার করার কোনো সুযোগ নেই। পাড়ার মুরুব্বিদেরকে বাইরে থেকে কেউ সালিশ বসিয়ে সামাজিক বিচার করার জন্য বাধ্য করে থাকতে পারে। কিন্তু তারা কেউ এ বিষয়ে কোনোভাবে মুখ খুলছেন না।
মানবাধিকার কর্মী ও অনন্যা কল্যাণ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ডনাইপ্রু মারমা নেলী বলেন, “খিয়াং সম্প্রদায়ের মধ্যে এমনিতে বিভিন্ন ব্যাপারে কুসংস্কারের প্রভাব থাকে। সামাজিক রীতিনীতি পালন করা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু ধর্ষণ এবং ধর্ষণচেষ্টার মত ঘটনা সামাজিক বিচার করা একটি অপরাধ। এসব অপরাধ করলে তাদের বিরুদ্ধে যে কেউ আইনের আশ্রয় নিতে পারে।”