“২০১৩ সালেও এই ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগেছিল, সেবার পুরোপুরি নেভাতে পাঁচদিন সময় লেগেছিল।”
Published : 24 Mar 2024, 08:15 PM
আট ঘণ্টার বেশি পেরিয়ে গেলেও নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার সুপার বোর্ড কারখানায় লাগা আগুন।
রোববার বেলা ১টার দিকে উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের সিকিরগাঁও এলাকায় ‘টিকে গ্রুপের’ মালিকানাধীন ওই কারখানায় আগুন লাগার পর থেকে ফায়ার সার্ভিসের এক ডজন ইউনিট কাজ করে যাচ্ছে।
রাত ৯টা পর্যন্ত আগুন পুরোপুরো নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি বলে গজারিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন অফিসার ইনচার্জ রিফাত মল্লিক জানিয়েছেন।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে সাতজন আহত হয়েছেন। বাতাসের কারণে আগুনের ফুলকি পড়ে কারখানার পাশে মেঘনা নদীতে রাখা তিনটি ট্রলার পুড়ে গেছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা রিফাত বলছেন, “আগুন নিয়ন্ত্রণে গজারিয়া ও নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করছে। পাশাপাশি দুটি জাহাজ চেষ্টা করেও আগুন নেভাতে পারেনি।
“আগুন নেভাতে গিয়ে কারখানার শ্রমিক ও স্থানীয় লোকজনসহ সাতজন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।”
আহতদের মধ্যে তিনজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন-মাহিম (৩৫), শরিফুল ইসলাম (৩০) ও মো. হিরণ (৩২)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, মেঘনার তীরে অবস্থিত কারখানাটিতে সকাল থেকে কাজ করছিলেন শ্রমিকরা। বেলা ১টার দিকে আগুন জ্বলতে দেখে শ্রমিক ও স্থানীয় লোকজন তা নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আগুন ছড়িয়ে পড়লে কর্মীরা ছুটাছুটি শুরু করে। আগুনের মধ্যে পানি ছিটিয়ে ছোট ছোট ক্রেনযুক্ত গাড়িতে করে কিছু মালামাল সরানোর চেষ্টা করা হয়।
কারখানার পাশেই নদীতে পাটখড়ি বোঝাই ইঞ্জিনচালিত তিনটি ট্রলার রাখা ছিল। এক পর্যায়ে কারখানার আগুনের ফুলকি পড়ে পাটখড়িসহ ট্রলার তিনটি ভস্মীভূত হয়।
আবুল কাসেম নামে কারখানাটির এক কর্মী সাংবাদিকদের বলেন, “ভেতরে প্রচুর পরিমাণে পাটখড়ি মজুদ ছিল। এগুলো দিয়েই সুপার বোর্ড তৈরি করা হয়। সকালে কাজ করার সময় একপাশে সামান্য আগুনের ফুলকি দেখি। সেটা অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র দিয়ে নেভানোর চেষ্টা করি।
“কিন্তু পাটখড়িতে লাগা আগুন মুহূর্তেই পুরো কারখানায় ছড়িয়ে যায়। কিন্তু আমরা যারা ভেতরে ছিলাম, তারা নিরাপদে বের হতে পেরেছি।”
তিনি বলেন, “মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষা এই ফ্যাক্টরিটি আগুন থেকে বাঁচানোর জন্য অনেক উপকরণ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়, পরে সেখানেও আগুন জ্বলতে থাকে। সন্ধ্যায় আকাশ ভেঙে বৃষ্টি শুরু হলে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে, তবে নেভানো এখনও সম্ভব হয়নি।”
মুন্সীগঞ্জে সুপার বোর্ড কারখানায় অগ্নিকাণ্ড
কারখানার আরেক শ্রমিক তরিকুল ইসলাম বলেন, কারখানার গোডাউনে অনেক পাটখড়ি রয়েছে। যদি কোনো কারণে আগুনের ফুলকি গোডাউনের পাটখড়িতে এসে পড়ে, তাহলে সেখান থেকে আবার আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।
এদিকে হোসেন্দী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠুর অভিযোগ, “কারখানাটিতে প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। আমরা একাধিকবার তাদের সতর্ক করেছি, কিন্তু কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নেয়নি।”
টিকে গ্রুপের ডিরেক্টর মো. সফিউল আতাহার তাসলিম বলেন, কারখানার মালামালের যা অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে না, একদিনে এ আগুন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। ক্ষতির পরিমাণ এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না, কালকে জানতে পারব। “
“২০১৩ সালেও এই ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগেছিল, সেবার পুরোপুরি নেভাতে পাঁচদিন সময় লেগেছিল।” যোগ করেন তিনি।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদুল আলমকে প্রধান করে জেলা প্রশাসনের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি, আগামী সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে বলে গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তার জানিয়েছেন।
সুপার বোর্ড কারখানাটিতে আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষণিক জানা না গেলেও কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।
এ প্রসঙ্গে ইউএনও বলেন, “কীভাবে আগুন লেগেছে বা কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা এখনই জানা সম্ভব নয়।”