বাধার মুখে পড়েছেন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও। এমনকি অগ্নিকাণ্ডের ছবি-ভিডিও ধারণ করতে পারেনি কেউ।
Published : 17 Jan 2025, 09:21 PM
ঢাকা থেকে বরিশালের গৌরনদীতে দাদাবাড়ি বেড়াতে যাওয়া শিশুকে হত্যার মামলার দুই আসামির বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় বিক্ষুদ্ধরা।
বাধার মুখে পড়েছেন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও। এমনকি বাধার মুখে অগ্নিকাণ্ডের ছবি-ভিডিও ধারণ করতে পারেনি কেউ।
শুক্রবার বিকালে উপজেলার মধ্য হোসনাবাদ গ্রামে শিশুটির জানাজা নামাজের আগে এমন ঘটনা ঘটে বলে গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক শেখ মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন।
নিহত ১০ বছর বয়সী এসএম সাফওয়ান আহমেদ মধ্য হোসনাবাদ এলাকার বাসিন্দা ইমরান সিকদারের ছেলে। বৃহস্পতিবার সকালে একটি ডোবা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় শিশুটির বাবা ইমরান সিকদার স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ ৬ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। ওই মামলার আসামি হিসেবে ইউপি সদস্য ও দুই নারীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা হলেন- ওই গ্রামের লোকমান চৌধুরীর ছেলে রোমান চৌধুরী, তার স্ত্রী আঁখি বেগম, বোন রাবিনা আক্তার ও শরিকল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য একই গ্রামের বাসিন্দা মৃত মালেক চৌধুরীর ছেলে মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
বাবার চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকত সাফওয়ান আহমেদ। সেখান থেকে বরিশালে দাদা বাড়িতে বেড়াতে আসা শিশুটি বুধবার দুপুরের পর নিখোঁজ হয়।
পরদিন ভোরে ফজরের নামাজ শেষে স্থানীয়রা মান্না বেপরীর ঘরের পাশে ডোবায় সাফওয়ানের লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
শিশুটির লাশ উদ্ধারের পর তাকে খুনে জড়িত সন্দেহে প্রতিবেশী রোমান চৌধুরী ও ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে মারধর করে এলাকাবাসী। খবর পেয়ে পুলিশ ও র্যাব তাদের উদ্ধার করে।
গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক শেখ মাহবুবুর রহমান বলেন, মামলায় বাদী অভিযোগ করেছেন, জমির সীমানা নিয়ে তাদের সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত চারজনসহ অপর নামধারী পলাতক আসামি লোকমান চৌধুরী ও শাহাদাত প্যাদার বিরোধ রয়েছে।
এর জেরে আসামিরা বাদীর বাবা বারেক সিকদারকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। ধারাবাহিকতায় তার সন্তানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ গুমের চেষ্টা করেছে।
মামলায় বাদী আরও উল্লেখ করেছেন, সাফওয়ান নিখোঁজ হওয়ার আগে স্থানীয়রা তাকে রোমান চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলতে দেখেছে।
পরিদর্শক মাহবুবুর বলেন, সাফওয়ানের লাশের ময়নাতদন্ত শুক্রবার দুপুরে সম্পন্ন করা হয়। পরে তার পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। আসর নামাজের পর জানাজা শেষে তার লাশ দাফন করা হয়েছে।
“তবে জানাজার আগে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা ইউপি সদস্য ও রোমান চৌধুরীর ঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে। ফায়ার সার্ভিস অগ্নিনির্বাপণে কাজ করছে।”
তবে নাম প্রকাশ না করে ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্য জানিয়েছেন, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে গেলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা নিহত শিশুর জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। এমনকি অগ্নিকাণ্ডের ছবি-ভিডিও ধারণ করতে গেলেও বাধা দেওয়া হয়।
এছাড়া সাফওয়ানের হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে সন্ধ্যায় উপজেলার হোসনাবাদ বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী। এ সময় তারা হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে, আদালতের জিআরও এএসআই মু. বেল্লাল হোসেন জানান, হত্যার রহস্য উদ্ধারে তাদের গ্রেপ্তার আসামিদের আদালতে হাজির করে পাঁচ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। তবে শুক্রবার বন্ধের দিন থাকায় রিমান্ডের শুনানি হয়নি।
পরে আসামি চারজনকে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোখলেচুর রহমানের আদালতে হাজির করা হলে তিনি তাদের কারাগারে পাঠিয়েছেন।
পুরানো খবর