ওই প্রকল্পের কারণে ছ-আনী পাড়ার ছয়টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে; যাদের সম্মানজনক পুনর্বাসনের দাবি ওঠেছে।
Published : 17 Jun 2023, 07:48 PM
পায়রা বন্দর প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় উচ্ছেদ হওয়া পটুয়াখালীর ছ-আনী পাড়ার রাখাইনদের ‘সম্মানজনক পুনর্বাসন ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণের’ দাবি জানিয়েছে নাগরিকদের প্রতিনিধি দল।
শনিবার বিকালে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে মতিবিনিময় সভায় এ দাবি জানান তারা।
সভায় কলাপাড়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি হুমায়ন কবীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ নাজমুল হক প্রধান এবং নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
নাজমুল হক প্রধান বলেন, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় পাহাড়ের চাকমা জনগোষ্ঠীদের যেভাবে পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ করা হয়েছিল তা এখনও তাদের ভুগাচ্ছে। এখানেও পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ ছ-আনী পাড়ার মাত্র যে ছয়টি পরিবার ছিল তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে।
“এটা একেবারেই দুঃখজনক। আমরা চাই দেশটা ফুলের বাগানের মত হোক। ফুলের বাগানে কেবল গোলাপ থাকে না। সব ফুলই যেন বিকশিত হতে পারে। তার জন্য সাংবাদিকদেরকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে । তবেই আমরা সংখ্যালঘু সকল জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারব।”
এক সময় এই পটুয়াখালীর কলাপাড়া খেপুপাড়া রাখাইন অধ্যুষিত হলেও এখন তাদের সংখ্যা পাঁচ হাজারের নিচে উল্লেখ করে অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, “নৃবিজ্ঞানের ভাষায় ‘আনপিপলিং’ বলে একটা কথা আছে। এর মানে হল একসময় কোনো একটা অঞ্চলে কোনো এক জনগোষ্ঠীর মানুষ ছিল, কিন্তু বর্তমানে তারা আর সেখানে নেই। তাদের সাংস্কৃতিক কিছু বিষয় অবশিষ্ট আছে কেবল। এই পটুয়াখালী অঞ্চলে এসে আমরা তার প্রমাণ দেখতে পাই।
“এখানে ছ-আনী পাড়া নামে একটা গ্রাম ছিল। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদেরকে উচ্ছেদ করেছে। অনেক চেষ্টা ছিল তাদেরকে যেন উচ্ছেদ করা না হয়। কিন্তু অনেক দেন-দরবারের পর এই রাখাইন আদিবাসীরা তাদের বাস্তুভিটা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু তারা নিজেদের বাস্তুভিটা ছেড়েছে সম্মানজনক পুনর্বাসনের শর্তে, যেই শর্ত এখনও পর্যন্ত পূরণ করা হয়নি।”
অধ্যাপক রোবায়েত জানান, ছ-আনী পাড়ার রাখাইনদের অনেক ‘কমন প্রপার্টি’ ছিল। সেগুলোর কোনো ধরনের পুনর্বাসন হয়নি। তাদের এখন ভাড়া বাড়িতে রাখা হয়েছে। কিন্তু ২০ মাস পরও তাদেরকে সম্মানজনক পুনর্বাসন করা হয়নি।
“আমরা নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে এখনো দাবি করছি যেন এই সংখ্যালঘু রাখাইন আদিবাসীদের সংখ্যাশুন্য করা না হয়,” বলেন তিনি।
ছ-আনী পাড়ার উচ্ছেদের শিকার সিং দা মো রাখাইন বলেন, “পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে বলেছিল সম্মানজনক পুনর্বাসন করবে।তার আগ পর্যন্ত ভাড়া বাড়িতে রাখার যে কথা তাও তারা রাখেনি।
“ছয় মাস বাসা ভাড়া দিয়ে তারা আর কোনো ধরণের খরচ দেয়নি। আমরা চাই আমাদেরকে সম্মানজনক পুনর্বাসন করা হোক। আমাদেরকে এমন রাখাইন পাড়ায় পুনর্বাসন করা হোক, যেখানকার শ্মশান, বৌদ্ধ মন্দির ও পুকুর আমরা ব্যবহার করতে পারি।”
নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন বলেন, “রাষ্ট্র কতটা অমাণবিক হতে পারে আমরা তা দেখলাম। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ ছ আনী পাড়ার রাখাইনদের উচ্ছেদ না করেও স্থাপনা করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে রাখাইন আদিবাসীদের উচ্ছেদ করছেন।
“আমরা অনেকটা মেজোরেটারিয়ান দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেশটাকে এগিয়ে নিচ্ছি। আমরা বহুত্বকে গ্রহণ করছি না, সংবিধান মানছি না। আমরা শুধুমাত্র কয়েকটা পদ্মা ব্রিজ দেখে খুশি হতে পারি না। কেননা, যে বহুত্বের জন্য আমরা লড়াই করেছি সেই বহুত্ব আর টিকে থাকছে না। আমরা নাগরিকরা এখনও সংহতি জানাচ্ছি যে, যেন বাংলাদেশের যে বহুত্বের সৈন্দর্য সেটা রক্ষা হয়।”
সভায় সাংবাদিক হারুন-অর রশীদ, কালের কন্ঠের স্থানীয় প্রতিনিধি জসিম পারভেজ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের বরিশাল অঞ্চলের সভাপতি মং চোথিন তালুকদার, ছ আনী পাড়ার উচ্ছেদের শিকার ও শিক্ষানবিশ নারী আইনজীবী লাখাইন রাখাইন বক্তব্য দেন।