“চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অপসারণ করা হলে তৃণমূল পর্যায়ে মানুষ সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়বে।”
Published : 21 Oct 2024, 05:09 PM
ইউনিয়ন পরিষদ বহাল রাখার দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালন করেছেন জনপ্রতিনিধিরা।
বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
রোববার দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।
জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য।
খাগড়াছড়ি: শহরের শাপলা চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে ৩৮টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন খাগড়াছড়ির সদস্যসচিব এবং ভাইবোনছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুজন চাকমা বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে জন্ম ও মৃত্যুসনদ, ওয়ারিশ সনদ, বিবাহিত ও অবিবাহিত সনদ, ট্রেড লাইসেন্স প্রদানসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করে। চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অপসারণ করা হলে তৃণমূল পর্যায়ে মানুষ সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়বে।
“আমরা গণমাধ্যমে দেখছি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের অপসারণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমরা দাবি জানাব, আমাদের অপসারণ না করে, সহযোগী ভাবুন।”
সংগঠনের খাগড়াছড়ির আহ্বায়ক ও লক্ষ্মীছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রবিল কুমার চাকমা বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদ সরকারের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও শক্তিশালী কাঠামো। স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলেও পঞ্চায়েত প্রথা এবং ইউনিয়ন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কার্যক্রম পরিচালিত হত। স্বাধীনতার পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং মেম্বারদের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালিত হয়ে আসছে। দেশের এ প্রাচীন প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ জনগনের আশা ও ভরসার আশ্রয়স্থল।”
এই কাঠামো ভেঙে আমলাতান্ত্রিক উপায়ে ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনা করলে গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ আশাহত হবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রবিল বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও চেয়ারম্যানের জায়গায় আমলাতান্ত্রিক ভাবে পরিচালিত হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। জনগণের ভোটে নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও চেয়ারম্যানগণ জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। ইউনিয়ন পরিষদ কাঠামো ভেঙে দিলে সামাজিক অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা যেতে পারে।
পরে বিভিন্ন দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি করে জনপ্রতিনিধিরা।
লালমনিরহাট: একই দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বাংলাদেশ ইউনিয়ন সদস্য সংস্থা (বাইসস) জেলা শাখার আয়োজনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে ৪৫টি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেন।
পরে তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
সংগঠনের জেলা শাখার আহ্বায়ক আব্দুল করিম, সদস্য সচিব মন্তাজুর রহমান, সদর উপজেলা শাখার আহ্বায়ক মো. আব্দুর রহিম, ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম, আজিজুল ইসলাম, লোকমান হাকিম ও হাফিজুল ইসলাম বক্তব্য দেন।
মানববন্ধনে আব্দুল করিম বলেন, “সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমরা ইউপি সদস্যরা জনগণের সেবা করি। কিন্তু সম্প্রতি মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম, ইউনিয়ন পরিষদ বিলুপ্তি ঘোষণা করা হবে। আমরা এই ঘোষণার নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
“এই সরকারের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। ইউনিয়ন পরিষদের সেবার কথা চিন্তা করে জনগণের দোড়গোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে ইউনিয়ন পরিষদ বিলুপ্তি বা জনপ্রতিনিধিদের অপসারণের চিন্তা থেকে সরকারকে সরে আসতে অনুরোধ করছি।
আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুর রহিম বলেন, “আমরা আমাদের পদের মেয়াদ পর্যন্ত থেকে জনগণের সেবা করতে চাই। পরিষদের বিভিন্ন সেবা সদস্যরা দিয়ে আসছে। তাই ইউনিয়নের নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত বহাল রাখার অনুরোধ জানাই অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে।”
জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি পেয়েছি। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অবগতির জন্য পাঠানো হবে।”
শেরপুর: বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
শহরের শহীদ দারোগ আলী পৌর পার্ক মাঠে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার অ্যাসোসিয়েশন জেলা শাখার আয়োজনে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
সংগঠনের সদর উপজেলা শাখার সভাপতি এস এম শামসুল ইসলামের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক এস আই শাহীন সাফওয়ান, জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মিজান খন্দকার, সদর উপজেলা শাখার সভাপতি এস এম শামছুল হক, ইউপি সদস্য মো. লাল মিয়া, হাসনা হেনা, বুলবুল আহমেদ, মো. রনি মিয়া, আরজু মিয়া, ওয়াসিম মিয়া, মোশারফ হোসেন মোমিন।
এ সময় বক্তারা বলেন, দেশে একমাত্র ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরাই তৃণমূল জনগণের সার্বিক সেবা দিয়ে থাকেন। এই জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করা হলে তৃণমূল পর্যায়ের জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।
তাই বর্তমান সরকারের কাছে দাবি ইউনিয়ন পরিষদ যেন বাতিল না করা হয়। অন্যথায় পরবর্তীতে আরও কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেন জনপ্রতিনিধিরা।