সোমবার গাইবান্ধা শহরের বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ও দীপ্তর বন্ধু সঞ্জয় পাল জয়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
Published : 02 Sep 2024, 11:57 PM
সড়ক দুর্ঘটনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহসানুল ইসলাম দীপ্তর মৃত্যুর সঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভাঙচুর ও হামলার কোনো সম্পর্ক নেই বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন দীপ্তর বাবা শহীদুল ইসলাম রাজু। এ সময় তার সঙ্গে দীপ্তর বন্ধুরাও ছিলেন।
শহীদুল ইসলাম রাজু এ সংক্রান্ত মামলায় দীপ্তর বন্ধুদের না জড়ানোর আহ্বান জানিয়ে হাসপাতালে ভাঙচুর ও হামলার ঘটনার প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শনিবার রাতে তিন দফায় চিকিৎসকদের ওপর হামলা ও মারধরের প্রতিবাদে রাতেই কাজ বন্ধ করে দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তখন থেকেই সেখানে চিকিৎসা সেবার অচলাবস্থা শুরু। রোববার ঢাকা মেডিকেলের অন্য চিকিৎসকরাও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এই কর্মবিরতিতে সংহতি জানান।
হামলাকারীদের আটক ও শাস্তির দাবিতে দুপুরে সারাদেশে সব চিকিৎসাকেন্দ্রে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এর সঙ্গে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা।
সন্ধ্যায় হাসপাতালের ছয় চিকিৎসকের সঙ্গে বৈঠকে বসে সংকটের সমাধান করেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে কিছু শর্ত জুড়ে দিয়ে কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দেন চিকিৎসকরা।
এরপর সোমবার ভোরে গাইবান্ধা শহরের বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ও দীপ্তর বন্ধু সঞ্জয় পাল জয়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সঞ্জয় গাইবান্ধা শহরের মাস্টার পাড়ার রঞ্জিত পালের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে দীপ্তর বন্ধু রাশেদ স্বর্ণ বাবু লিখিত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আহসানুল ইসলাম দীপ্ত শুক্রবার রাতে ঢাকার কুর্মিটোলায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। দুর্ঘটনার পর দীপ্তর মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন হাতিয়ে নেয় কেউ। পরে নিলয় নামে এক পথচারী তাকে উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ বন্ধে একটি অস্ত্রোপচার ও আইসিইউ সেবা পেতে সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।”
তার ভাষ্য, “ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ বেড ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা বাবদ নগদ সাত হাজার টাকা দাবি করা হয়। কিন্তু এ সময় সেখানে দীপ্তর কোনো স্বজন উপস্থিত ছিলেন না। তাই টাকা না পাওয়ায় তাকে চিকিৎসা সেবা না দিয়ে জরুরি বিভাগের মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। বিনা চিকিৎসায় দীপ্ত পরের দিন শনিবার সকালে মারা যান।”
খবর পেয়ে শনিবার দুপুর নাগাদ দীপ্তর বন্ধু সঞ্জয় পাল জয়সহ অন্য বন্ধুরা হাসপাতালে যান। তারা বিনা চিকিৎসায় দীপ্তর মৃত্যুর বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন এবং সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, অপরদিকে ওইদিন রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও দুটি রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজনা তৈরি হয়। এ সময় হাসপাতালে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
রাশেদ স্বর্ণ বাবু দাবি করেন, “বিনা চিকিৎসায় দীপ্তর মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতেই তার বন্ধুদের মামলায় জড়ানো হয়েছে। এমনকি কাতার প্রবাসী এক বন্ধুকেও এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।”
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নিহত দীপ্তর বন্ধু আব্দুল্লাহ সানি ও মো. তামিজিদ রায়হান এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন:
ঢাকা মেডিকেলে হামলার ঘটনায় গাইবান্ধায় একজন গ্রেপ্তার
বহির্বিভাগ ৩ ঘণ্টা খোলা রাখার ঘোষণা চিকিৎসকদের
ঢাকা মেডিকেলে বহির্বিভাগ বন্ধ, ভোগান্তিতে রোগীরা
কমপ্লিট শাটডাউন: সারাদেশে সব চিকিৎসাকেন্দ্রে কর্মবিরতির ডাক
আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা, 'শাটডাউন' তুলে নিন: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা