ঈদযাত্রায় এ মহাসড়কে যানজটের প্রধান কারণ হতে পারে অবৈধ পার্কিং, রাস্তা ঘেঁষে গড়ে ওঠা দোকানপাট ও বাজার।
Published : 20 Mar 2025, 01:05 PM
এবার ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ময়মনসিংহ অংশে অন্তত ১৫টি স্থানে যানজট ও ভোগান্তির শঙ্কা রয়েছে।
এ মহাসড়কে নিয়মিত চলাচল করা দূরপাল্লার পরিবহনের চালক, যাত্রী ও স্থানীয়রা বলছেন, রাস্তার দুই পাশ দখল করে অবৈধ দোকানপাট, কাঁচাবাজার, অবৈধ পার্কিং ও ইজিবাইকের আধিক্যের কারণে সারাবছর যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। ঈদ এলে ঘরমুখো মানুষের এ ভোগান্তি ব্যাপক আকার ধারণ করে। এবারও সে আশঙ্কাই করছেন তারা।
তবে পুলিশসহ মহাসড়ক দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন।
পরিবহন চালকরা বলছেন, শিকারিকান্দা, চুরখাই, বৈলর, ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড, রাঘামারা, ভরাডোবা, ভালুকা বাসস্ট্যান্ড, হবিরবাড়ি, সিডস্টোর, মাস্টারবাড়ি ও জৈনাবাজারসহ অনেক স্থানে মহাসড়ক দখল করে অবৈধ কাঁচাবাজার, দোকানপাট, চায়ের স্টল, গ্যারেজ, গাড়ির পার্কিং গড়ে তোলা হয়েছে।
এ ছাড়া মহাসড়কের চুরখাই এলাকায় রাস্তার দুপাশে সারিবদ্ধভাবে দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দাঁড় করানো থাকে বালুর শত শত ট্রাক। এতে প্রায় কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়।
এই মহাসড়কে চলাচল করা ইমাম পরিবহনের চালক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, “ময়মনসিংহ শহর থেকে বাস নিয়ে বের হলে প্রথমে বাইপাস ও পরে চুরখাই এলাকায় যানজটের মধ্যে পড়তেই হয়। চুরখাইয়ে রাস্তার দুই পাশে বালুর ট্রাক ঈদের আগে সরানো না হলে মানুষের ভোগান্তি কমবে না।
“এ ছাড়া মহাসড়ক থেকে অবৈধ যান ঈদের আগে উঠিয়ে দিতে হবে; না হলে স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালাতে সমস্যা হবে। যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভুগতে হবে ঘরমুখো সাধারণ মানুষের।”
বালুবাহী ট্রাকের চালক আবু ফয়সাল বলেন, “আমরা জায়গা না পেয়ে মহাসড়কের ওপর বাধ্য হয়ে ট্রাক রাখছি। যদিও তা উচিৎ নয়। এতে সাধারণ মানুষের যান-মালের ক্ষতি হচ্ছে, বুঝতে পারছি। কিন্তু প্রশাসন যদি জোড়ালো পদক্ষেপ নিত তাহলে হয়তো আমরা অন্য কোথাও গিয়ে দাঁড়াতাম।”
স্থানীয়রা বলছেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা বাসস্ট্যান্ড, সিডস্টোর বাজার জামিরদিয়া স্কয়ার মাস্টারবাড়ীতে মহাসড়কের দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা ও কাঁচামালের বাজার গড়ে উঠেছে। এতে ফুটপাত বন্ধ হয়ে পথচারী ও যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
আবার মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত তিন চাকার অটোরিকশা, মিনিবাস। এসব যানবাহন সড়কের ওপর দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করার ফলে যানজট লেগেই থাকে।
ফলে ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষজনের চরম ভোগান্তির শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয় রেজাউল করিম বলেন, “ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা, কাঁচা বাজার, মহাসড়কে অবাধে চলা ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক উচ্ছেদ করা না হলে ঈদে ভালুকা বাসস্ট্যান্ড, সিডস্টোর বাজার, স্কয়ার মাস্টারবাড়ীতে দীর্ঘ যানজটের সম্মুখীন। যা আমরা প্রতিবছর দেখে আসছি। এতে সাধারণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হবেন।”
এ মহাসড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচল করা হোসেন আলী নামে এক যাত্রী বলেন, “কিছু কিছু এলাকায় রাস্তার দুই পাশে কাঁচাবাজার বসানোর হয়েছে। এতে বিশেষ করে প্রতিদিন বিকালের দিকে যানজটের কবলে পড়তে হয়। সঠিক সময়ে আমরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারছি না। ঈদের আগে কাঁচাবাজার উচ্ছেদ না হলে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
ভালুকা হাইওয়ে থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “ঈদে ঘরমুখো সাধারণ মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। কয়েকদিন আগে ফুটপাতে বসা অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়েছে। মহাসড়কে খানাখন্দ মেরামতের পাশাপাশি ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার কাজে সড়ক ও জনপদ বিভাগকে আমরা সহযোগিতা করেছি।
“মহাসড়কে আমাদের সাধারণত দুইটি টহল টিম কাজ করতো সেই জায়গায় চারটি করা হয়েছে।”
এদিকে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল অংশের ২৫ কিলোমিটারের কাজীর শিমলা, ত্রিশালের বৈলর, কানহর, ত্রিশাল উপজেলা সদর মোড়, বাগান, বগারবাজার, সাইনবোর্ড এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ পার্কিং ও দোকানপাট।
কয়েকটি শিল্প-কারখানার সামনে রাস্তার উপর পার্কিং করে রাখা হয় বাস, কভার্ড ভ্যান ও পণ্যবাহী ট্রাক। এতে যানজটে ভোগান্তিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় চলাচল করা সৌখিন পরিবহনের চালক রানা মিয়া বলেন, “ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চার লেনের ত্রিশাল অংশে ভাঙাচোরা কিংবা গর্ত নেই বললেই চলে। তবে, মোড়ে মোড়ে অবৈধ স্ট্যান্ড বা পার্কিং বন্ধ করা না গেলে ঈদে ঘরমুখো মানুষকে ত্রিশালের এ অংশের জন্য দুর্ভোগে পড়তে হবে।”
মহাসড়কটি ব্যবহার করে নেত্রকোণা, শেরপুরগামী বিভিন্ন পরিবহনের চালকরা বলছেন, “ময়মনসিংহ নগরীর পাটগুদাম ব্রিজে যানজটের কারণে প্রতিবছর ভোগান্তি পোহাতে হয়। ব্রিজে গাড়ি চলাচলের ধীরগতির কারণে শম্ভুগঞ্জ ও বাইপাস মোড়ে গিয়ে যানজট ঠেকে।”
ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খাইরুল বাশার মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন বলেন, “ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ময়মনসিংহ অংশের ১২-১৫টি স্থানে যানজট হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে আমরা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ফুটপাত দখলমুক্তসহ অবৈধভাবে বসা বাজার ও স্ট্যান্ড সরানো হচ্ছে। এ ছাড়া রাস্তার খানাখন্দ দূরীকরণে আমাদের মোবাইল টিম কাজ করছে।”
ময়মনসিংহ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) এম এম মোহাইমেনুর রশিদ বলেন, “ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পুলিশের আলাদা একটি ‘স্পেশাল টিম’ অন্য বছর মত এবারও কাজ করবে।
“এরই মধ্যে মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। মানুষের ভোগান্তি নিরসনের লক্ষ্যে মহাসড়কের নির্দিষ্ট স্পটে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যাত্রাপথে মানুষ যেন কোনোভাবেই হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য সাদাপোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে।”