সাত বছর আগে তিন সাঁওতাল হত্যা, বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের বিচার দাবিতে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ‘সাঁওতাল হত্যা দিবস’ পালিত হয়েছে।
সোমবার সকাল ৯টায় উপজেলার সাঁওতাল পল্লী মাদারপুর ও জয়পুর গ্রাম থেকে তীর-ধনুক, কালো পতাকা, ব্যানার এবং বিভিন্ন দাবি দাওয়া সংবলিত ফেস্টুন নিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।
মিছিলটি ১০ কিলোমিটার পথ হেঁটে গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর সড়কের কাটামোড় এলাকায় সমাবেশ মিলিত হয়। সমাবেশের শুরুতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর প্রতিবাদী সংগীত পরিবেশিত হয়।
সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, আদিবাসী-বাঙালী সংহতি পরিষদ, সামাজিক সংগ্রাম পরিষদ ও জনউদ্যোগ গাইবান্ধা যৌথভাবে দিবসটি পালন করে।
সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কের সভাপতিত্বে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, আদিবাসী বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম বাবু, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নরেন পাহান, বাসদ নেতা জয়নাল আবেদীন মুকুল, আদিবাসী নেতা বিমল খালকো, অগস্টিন মিনজী, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের গাইবান্ধা সদর উপজেলা শাখার আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী মুসা, সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্যসচিব দীপন হাসান ও মানবাধিকার কর্মী মনির হোসেন সুইট সমাবেশে বক্তব্য দেন।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, সাত বছরেও গোবিন্দগঞ্জের তিন সাঁওতাল হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়নি। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বরের ঘটনার পর থেকে নির্যাতনের শিকার সাঁওতালরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নরেন পাহান বলেন, আহতরা চিকিৎসার অভাবে কেউ পঙ্গু, কেউ শরীরে গুলির স্প্লিন্টার নিয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে জীবন অতিবাহিত করছেন। শুধু তাই নয়, সাঁওতালরা গৃহহীন হয়ে অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন।
সেই সময় সরকারের পক্ষ থেকে নানা আশ্বাস দেওয়া হলেও এ পর্যন্ত তার কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এ আদিবাসী নেতা।
সাঁওতালদের উচ্ছেদ ও হত্যার ঘটনায় দুই মামলা
২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর উচ্ছেদ করতে গেলে পুলিশ, চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারী ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হন। তাদের মধ্যে মঙ্গল মার্ডি, রমেশ টুডু ও শ্যামল হেমব্রম মারা যান।
এসব ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষে স্বপন মুরমু বাদী হয়ে ওই বছরের ১৬ নভেম্বর ৬০০ জনকে অজ্ঞাত পরিচয় আসামি করে মামলা করেন। পরে ২৬ নভেম্বর থোমাস হেমব্রম বাদী হয়ে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ এবং ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে অজ্ঞাত পরিচয় আসামি করে আরেকটি মামলা করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ও গাইবান্ধা জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বাবু জানান, ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গাইবান্ধা শাখার তদন্তকারী কর্মকর্তা এই হত্যা মামলার চূড়ান্ত অভিযোগপত্রে ১১ আসামির নাম বাদ দেন।
পরে একই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর মামলার বাদী থোমাস হেমব্রম ওই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর অধিকতর তদন্ত করতে মামলাটি ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনকে (সিআইডি) নির্দেশ দেন।
পরে সিআইডি ২০২০ সালের ২ নভেম্বর আদালতে একই ধরনের অভিযোগপত্র দাখিল করে; যা পরে ২০২১ সালের ৪ জানুয়ারি বাদী থোমাস হেমব্রম পুনরায় নারাজি দেন। এই নারাজির ওপর বেশ কয়েক দফা শুনানি শেষে আগামী বছরের ১২ মার্চ আদেশের দিন ধার্য করেন আদালত।