“বিএনপিতে আরও একজন ভদ্রলোক আছেন, নাম তার গয়েশ্বর রায়। তিনি বলেছেন, হঠাৎ বাংলাদেশ হয়ে গেছে। এ রকম কথা সহ্য করা যায়?”, বলেন জনতা লীগ সভাপতি।
Published : 11 Feb 2023, 08:49 PM
‘পাকিস্তান আমল ভালো ছিল’ বলে কয়েক মাস আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি বক্তব্যে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী।
বিএনপি নেতাকে পাকিস্তানে গিয়ে রাজনীতি করার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। এমনও বলেছেন, ‘বিএনপিকে ক্ষমতায় আনা যায় দেশকে পাকিস্তান বানাতে।’
'হঠাৎ বাংলাদেশ হয়ে গেছে' এমন বক্তব্য দেওয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়েরও কড়া সমালোচনা করেছেন ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়া এই নেতা। বলেছেন, “তার কিছু কথা সহ্য হয় না।”
শনিবার বিকেলে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হামিদপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কাকড়াজান ইউনিয়ন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আয়োজিত এক জনসভায় কাদের সিদ্দিকী এসব কথা বলেন।
এসময় কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও। বলেন, জাতির পিতার মেয়ে তার বোন। বোনের সঙ্গে ‘রাজনীতি নিয়ে তর্কাতর্কি হতে পারে’। কিন্তু তার সম্মানহানি হয় এমন কাজ তিনি করবেন না।
ফখরুলকে ‘পরামর্শ’
কাদের সিদ্দিকী বলেন, “কয়েকদিন আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তানই ভালো ছিল। আমি ওই ভদ্রলোককে বলতে চাই, আপনার কাছে পাকিস্তানই যদি ভালো হয়, তাহলে আপনি বাংলাদেশে কেন, পাকিস্তানে গিয়ে রাজনীতি করুন। আজকাল যার যা ইচ্ছে তাই বলে যাচ্ছে।”
মির্জা ফখরুল পাকিস্তান বিষয়ে বক্তব্যটি রেখেছিলেন প্রায় পাঁচ মাস আগে।
২০২২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “পাকিস্তান সরকার থেকে বর্তমান সরকার আরও নিকৃষ্ট। আমরা পাকিস্তান আমলে আর্থিক ও জীবনযাত্রার দিক থেকে এর থেকে ভালো ছিলাম।
“তার পরও পাকিস্তান সরকার যেহেতু আমার অধিকার ও সম্পদ হরণ করত, সে কারণে আমরা যুদ্ধ করেছি। কিন্তু এখন তার থেকেও খারাপ অবস্থায় আমরা আছি।”
‘সহ্য হয় না’ গয়েশ্বরের কথা
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্রের সমালোচনা করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, “বিএনপিতে আরও একজন ভদ্রলোক আছেন, নাম তার গয়েশ্বর রায়। তিনি বলেছেন, হঠাৎ বাংলাদেশ হয়ে গেছে। আরে ভাই! হঠাৎ বাংলাদেশ হয়?
“বাংলাদেশ স্বাধীন করতে কত মানুষ মারা গেছে, কত লোকের রক্ত গেছে, কিন্তু আপনার কাছে মনে হয়েছে হঠাৎ বাংলাদেশ হয়ে গেছে! এ রকম কথা সহ্য করা যায়? পাকিস্তান বানানোর জন্য বিএনপির হাতে ক্ষমতা দেওয়া যায়।”
শেখ হাসিনার সম্মানহানি ‘কভু নয়’
জনতা লীগ নেতা জানান, রাজনীতি নিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে তার মতভেদ থাকতেই পারে। কিন্তু সে জন্য তিনি তার সম্মানহানির কারণ হতে পারবেন না।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, “বর্তমান আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমার অনেক জায়গায় মিল নেই, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমার অনেক মিল। তার কন্যা শেখ হাসিনা আমার বোন, বোনের সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে তর্কাতর্কি হতে পারে, কিন্তু তার সম্মানহানি হয় এমন কাজ আমি করতে পারি না।”
জনসভায় দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সরকারের সমালোচনাও করেন বঙ্গবীর।
কাকড়াজান ইউনিয়ন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন মাস্টারের সভাপতিত্বে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার খোকা বীর প্রতীক, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার, শামীম আল মনসুর আজাদ সিদ্দিকী, দলটির জেলা কমিটির সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিম সরকার, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এটিএম সালেক হিটলু, সখীপুর উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আবদুস ছবুর খান, সানোয়ার হোসেন মাস্টার, দুলাল হোসেনও বক্তব্য রাখেন।
কাদের সিদ্দিকী নতুন করে আলোচনায় যেভাবে
১৯৯৬ সালে টাঙ্গাইল-৮ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য হন কাদের সিদ্দিকী। দলের সঙ্গে বিরোধের জেরে তিন বছর পর আওয়ামী লীগ ছেড়ে তিনি গঠন করেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। ২০০১ সালে সেই দলের হয়েই নির্বাচিত হন সংসদ সদস্য। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের কট্টর সমালোচক হয়ে উঠেন তিনি। যোগাযোগ বাড়ে বিএনপির সঙ্গে।
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপির ২০ দলীয় জোটের পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে যে জোট গঠন করা হয়, তাতেও অংশ নেন কাদের সিদ্দিকীর দল। জোট থেকে তাকে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) ও টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল সখীপুর) আসন থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবে খেলাপি ঋণের অভিযোগে দুটি মনোনয়নই বাতিল হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সপরিবারে কাদের সিদ্দিকীর সাক্ষাৎ
বঙ্গবন্ধুর আদর্শে পথ চলতে চাই: কাদের সিদ্দিকী
পরে টাঙ্গাইল-৮ আসনে মনোনয়ন পান জনতা লীগ সভাপতির মেয়ে কুঁড়ি সিদ্দিকী। তবে নৌকার প্রার্থীর কাছে হেরে যান বড় ব্যবধানে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোয়াহেরুল ইসলাম পান ২ লাখ ৮ হাজার ৩৩৪ ভোট। কুঁড়ির বাক্সে পড়ে ৭২ হাজার ২১১ ভোট।
ভোটের পরে সবার আগেই ঐক্যফ্রন্ট ছাড়েন কাদের সিদ্দিকী। পরে এক আলোচনায় বলেন, “আমি একজন গাধা। এ জন্য ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টে গিয়েছিলাম।”
২০২২ সালের ২৩ ডিসেম্বর রাজনীতিতে শুরু হয় নতুন আলোচনা। সেদিন গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সপরিবারে দেখা করেন জনতা লীগ নেতা। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী নাসরিন সিদ্দিকী এবং তাদের দুই কন্যা।
আওয়ামী লীগ ও জনতা লীগের ‘কাছাকাছি আসার’ বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় পরে। ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র জমাদানের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত ২৫ জানুয়ারি টাঙ্গাইলে যে অনুষ্ঠান হয়, তাতে প্রধান অতিথি হয়ে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
সেদিন কাদের সিদ্দিকী বলেন, “বাংলার বাপ একটাই। বাংলার বাপ ২, ৩, ৪টা নয়, তিনি হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শে পথ চলতে চাই।”