২০০৫ সালে ভারতের মাদ্রাজ ক্রোকোডাইল ব্যাংক থেকে মিঠা পানির ছয়টি কুমির এনে দীঘিতে ছাড়া হয়েছিল বলে জানান মাজারের খাদেম।
Published : 20 Oct 2023, 12:17 AM
বাগেরহাটের ঐতিহাসিক হযরত খানজাহান (রহ.) মাজারের দীঘির মিঠা পানির একটি কুমির মারা গেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরের পর মাজারের দীঘির দক্ষিণ পশ্চিম পাড়ে কুমিরটির মৃতদেহ ভেসে উঠে বলে জানিয়েছেন মাজারের প্রধান খাদেম শের আলী ফকির।
খবর পেয়ে বিকালে কুমিরটি পানি থেকে তুলে বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকার ফরেনসিকে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
জানা গেছে, মাজার দীঘির পাড়ে যুগ যুগ ধরে বসবাস করা কুমিরগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন খাদেমরা। দর্শনার্থীদের কুমির দেখিয়ে খাদেমরা আয় রোজগার করে থাকেন। পুরুষ কুমিরটি মারা যাওয়ায় পর সেখানে আরেকটি নারী কুমির রয়েছে।
মাজারের প্রধান খাদেম শের আলী বলেন, “২০০৫ সালে মিঠা পানির ছয়টি কুমির ভারতের মাদ্রাজ ক্রোকোডাইল ব্যাংক থেকে এনে দীঘিতে ছাড়া হয়। কুমিরগুলো ছিল হিংস্র স্বভাবের। নিজেদের মধ্যে মারামারির কারণে দুটির মৃত্যু হয়। দুটি সরিয়ে সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রে নেওয়া হয়। বাকি দুটি দীঘিতেই বসবাস করছিল। এই দুটির একটি পুরুষ, একটি নারী।
“বৃহস্পতিবার দুপুরে পুরুষ কুমিরটির মৃতদেহ দীঘির দক্ষিণ পশ্চিম পাড়ের মোস্তফা ফকিরের ঘাটের অদূরে ভাসতে দেখা যায়। কবে কখন কুমিরটি মারা গেছে বলতে পারব না, তবে গত সাত ধরে ওই পাড়ের খাদেম মোস্তফা ফকিরের নিয়ন্ত্রণে ছিল কুমিরটি।
“মোস্তফা এই কুমিরটিকে তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আটকে রাখেন। বারবার বলার পরও তিনি কুমিরটির নিয়ন্ত্রণ ছাড়েননি। তিনি কুমিরটিকে আটকে রেখে মাজারের আসা দর্শনার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে আসছিলেন।”
তিনি আরও বলেন, “এই মাজারের দীঘির কুমির দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। খাদেম মোস্তফার জন্য অন্য খাদেমরা কেন সমস্যায় পড়বে। এটা আমরা মেনে নেব না।”
এ ঘটনা সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রশাসনের কাছে মোস্তফার বিচার দাবি করেন মাজারের প্রধান খাদেম।
ঘাটে আটকে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে মোস্তফার স্ত্রী সাকিলা বেগম বলেন, “সদ্য নাতি হওয়ায় প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে আমরা সবাই হাসপাতালে। দুপুরে কুমির মারা যাওয়ার খবর পাই। এই দীঘির কুমিরটি আমাদের ঘাটে থাকত।
“আমার স্বামী মোস্তফা কুমিরটিকে খাবার দিত, খাবার খেয়ে আবার কুমিরটি দীঘিতে চলে যেত। কুমিরটি মৃত্যু কেন হল তা বলতে পারব না।”
বাগেরহাট প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভেটেরিনারি কর্মকর্তা মনোহর চন্দ্র মণ্ডল বলেন, “মারা যাওয়া কুমিরটি পুরুষ। অন্তত ৬০ ঘণ্টা আগে কুমিরটির মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছি। কুমিরটির দৈর্ঘ্য ১২ ফুট। বয়স আনুমানিক ৪৫ বছর।
“কুমিরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকার ফরেনসিকে পাঠানো হচ্ছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।”
বাগেরহাট সদর মডেল থানার ওসি কে এম আজিজুল ইসলাম বলেন, কুমিরটির মৃত্যু নিয়ে স্থানীয় খাদেমরা বিচার দাবি করেছেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।