চিড়িয়াখানাটির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Published : 08 Apr 2025, 08:42 PM
ময়মনসিংহ নগরীর জয়নুল আবেদিন উদ্যানে অবৈধভাবে চলা মিনি চিড়িয়াখানাটি সিলগালা করে দিয়েছে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।
মঙ্গলবার বিকালে পরিদর্শন শেষে ১২ বছর ধরে অবৈধভাবে চলা চিড়িয়াখানাটি সিলগালা করে ৪৮টি দেশীয় বন্যপ্রাণী জব্দ করা হয়েছে।
এ সময় ঢাকার বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক নার্গিস সুলতানা বলেন, “দেশি অথবা বিদেশি যেকোনো পশুপাখির জন্যই এখানকার পরিবেশ খুবই অস্বাস্থ্যকর। এরপরও নিয়ম বহির্ভূতভাবে ৪৮টি দেশীয় প্রাণী ছিল চিড়িয়াখানাটিতে। এর মধ্যে ২৭টি আমরা নিয়ে যাচ্ছি। বাকিগুলো চিকিৎসার জন্য এখানেই থাকবে।”
এখন থেকে আর চিড়িয়াখানাটিতে দর্শণার্থী প্রবেশ করতে পারবেন না। চিড়িয়াখানাটির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান নার্গিস সুলতানা।
‘ময়মনসিংহের মিনি চিড়িয়াখানায় ভালুকের শরীরে পচন’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট এই অভিযান চালাল।
তবে অতিরিক্ত দুর্বল থাকায় এই মুহূর্তে অসুস্থ ভালুকটিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না বলে জানান বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য কর্মকর্তা রথীন্দ্র্র কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ভালুকটির নিয়মিত চিকিৎসা করবেন। যখন সুস্থ হবে তখন আমরা নিয়ে যাব।”
জব্দ করা প্রাণীগুলোর মধ্যে কিছু গাজীপুরের সাফারি পার্কে রাখা হবে; বাকিগুলো অবমুক্ত করা হবে জানিয়ে রথীন্দ্র কুমার বিশ্বাস বলেন, “মিনি চিরিয়াখানাটি অবৈধভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল। যার কারণে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।”
বিকালে জয়নুল আবেদিন উদ্যানের মিনি চিড়িয়াখানায় গিয়ে দেখা গেছে, খাঁচায় থাকা দুটি ভালুকের মধ্যে একটির শরীরে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এমনকি প্রাণীটির পায়ের অংশবিশেষ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
চিড়িয়াখানায় থাকা কামাল হোসেন নামের এক কর্মী বলেন, “পচন ধরা অংশে নিজের পা নিজেই কামড়ে ছিঁড়ে ফেলেছে ভালুকটি। তারপর স্থানীয় প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ দিয়ে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করছি। কিন্তু এরপরও ভালুকের পায়ের ক্ষত বাড়ছে।”
জানা যায়, ২০১৩ সালে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মিনি চিড়িয়াখানাটি গড়ে তোলা হয়। হরিণ, ভালুক, কুমির, হনুমান, গাধা, অজগরসহ ২৪ প্রজাতির প্রাণী ছিল চিড়িয়াখানাটিতে। তবে মেছো বাঘের মৃত্যুর পর বর্তমানে সেখানে ২৩ প্রজাতির ১১৪টি প্রাণী আছে। ৩০ টাকায় টিকিট কেটে দর্শনার্থীরা চিড়িয়াখানাটি দেখতে পারতেন। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের জায়গা ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে চিড়িয়াখানাটি।
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের অভিযানের সময় সেখানে বেশ কয়েকজন দর্শনার্থীও ছিলেন।
তাদের একজন রফিকুল ইসলাম বলেন, “এটা আমরা কোনোদিন প্রত্যাশা করিনি। সাবেক মেয়র ইকরামুল হক টিটু প্রভাব না খাটিয়ে যদি নিয়ম মেনে চিড়িয়াখানাটি পরিচালনার নির্দেশ দিতেন তাহলে তা আজ বন্ধ হত না।”
বিন্দু নামে আরেক দর্শনার্থী বলেন, “ভালুকটির শরীরে পচন ধরেছে সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে দেখে চিড়িয়াখানায় এসেছিলাম। এখানে এসে দেখি বন্যপ্রাণী দমন আইনের লোকজন তা সিলগালা করার নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
“এখানে বাচ্চাদের নিয়ে এসে জীবজন্তুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এখন তা থেকে বাচ্চারাও বঞ্চিত হবে। আমরা চাই, দ্রুত আইন মেনে চিড়িয়াখানাটি আবার পরিচালিত হোক।”
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. সিদ্দীকুর রহমান জানান, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান তার শ্যালকের নামে চিড়িয়াখানাটির জায়গা বরাদ্দ নিয়েছিলেন।
তৎকালীন পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট মাহমুদ আল নূর তারেক মিনি চিড়িয়াখানাটির অনুমতি দেন বলে জানান সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান মামুন।