ক্ষোভে মানুষ বিএনপিপন্থি প্রার্থীকে ভোট দেবে: কায়সার

“মনিরুল হক সাক্কু এখন বিএনপির কেউ না। তিনি এক সময় বিএনপির ছিলেন, এখন সাবেক হয়ে গেছেন।”

আবদুর রহমানকুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2024, 11:20 AM
Updated : 8 March 2024, 11:20 AM

মানুষের মধ্যে ‘ক্ষোভ’ আছে, ৭ জানুয়ারির ‘ডামি নির্বাচনে’ তারা ভোট দিতে যায়নি, সেই ‘ক্ষোভ মেটাতেই’ মানুষ কেন্দ্রে গিয়ে বিএনপিপন্থি প্রার্থীকে ভোট দেবে বলে মনে করছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন উপনির্বাচনের মেয়র পদপ্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার।  

দলের সিদ্ধান্ত না মেনে প্রথমবার নির্বাচনে এসে পদ হারালেও কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক এই সভাপতি বিপুল ভোট পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন; দেড় বছরের মাথায় দ্বিতীয়বার আবারও ভোটের মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।

তার দাবি, টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী দুইবারের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এখন আর ‘বিএনপির কেউ না’; তিনি ‘সাবেক’ হয়ে গেছেন। ফলে এবার আর বিএনপির ‘ভোট ব্যাংকটি’ ভাগ হবে না। ঘোড়া প্রতীকে পড়বে।

কুমিল্লা নগরীতে জন্ম ও বেড়ে উঠা নিজাম উদ্দিন কায়সার ছাত্রদলের মাধ্যমে রাজনীতিতে আসেন। তিনি একসময় সংগঠনটির কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন। পরে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

প্রায় আড়াই দশক ধরে রাজনীতির মাঠে থাকা নিজাম ২০২২ সালের ১৫ জুনের আগে কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। নির্বাচনে আসার পর ওই বছরের ১৯ মে তাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।

তবে দল বহিষ্কার করলেও কায়সার অন্য কোথাও যাননি। বরং সবসময় বিএনপির পক্ষেই নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখেছেন। এর ফলে বিএনপির নেতাকর্মীদের একটি অংশ এবার প্রকাশ্যেই তার নির্বাচনের প্রচারে এসে ঝড় তুলেছেন।

কায়সার কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের শ্যালক। এ কারণে ইয়াছিনের সমর্থকদেরও একটা বড় অংশকে ঘোড়া প্রতীকে নির্বাচন করতে দেখা গেছে।  

শনিবার অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই নেতা এবং বিএনপির সাবেক দুই নেতা লড়াইয়ের ময়দানে আছেন। সবাই স্বতন্ত্র।

অন্য তিন প্রার্থী হলেন- সাবেক দুইবারের মেয়র ও কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কু, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসিন বাহার সূচনা, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম।

ভোটের শেষ মুহূর্তের প্রচারে প্রার্থীরা সমর্থকদের নিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত অবধি ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির পুরনাবৃত্তির পাশাপাশি ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ারও অনুরোধ জানাচ্ছেন। 

চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যে বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার।

প্রশ্ন: প্রচারের শেষ প্রান্তে চলে এসেছেন। আপনি প্রতিদিন প্রচুর গণসংযোগ করেছেন, ভোটারদের কাছে গেছেন। নির্বাচনের পরিবেশ কেমন দেখছেন?

নিজাম উদ্দিন কায়সার: দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভয় আর আতঙ্ক আছেই। সার্বিক পরিস্থিতি বলতে গেলে নির্বাচন কমিশন আমাদেরকে সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে আশ্বাস দিয়েছিল, তারা যদি সেই আশ্বাস অনুযায়ী কাজ করে তাহলে নির্বাচনের দিন ভোটের পরিবেশ ঠিক থাকবে।

প্রশ্ন: দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রচুর নেতাকর্মী আপনার প্রচারে অংশ নিয়েছেন। তাহলে বিএনপির নির্বাচনে না আসার ঘোষণাটি কি ‘লোক দেখানো’?

নিজাম উদ্দিন কায়সার: জাতীয় নির্বাচনের পরে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির দলীয় ফোরামে এখনও কোনো আলোচনা হয়নি। অনেকটা দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যেই আছে আগামী স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে কী করবে। ৭ জানুয়ারির ডামি জাতীয় নির্বাচনের অল্প সময়ের পরেই কুমিল্লা সিটি নির্বাচন চলে আসায় বিএনপির দলীয় ফোরাম এ নির্বাচন নিয়ে নিরব রয়েছে। আমার মনে হয়, বিএনপি এ নির্বাচনকে পর্যবেক্ষণ করছে। 

প্রশ্ন: আপনি বিএনপি নেতা হাজী ইয়াছিনের (কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক) নিকটাত্মীয়। এর সুবাদে ভোটের মাঠে বাড়তি কোনো সুবিধা পাবেন বলে মনে হয়?

নিজাম উদ্দিন কায়সার: আমি নিজেই ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটে দায়িত্ব পালন করে আজকের এই জায়গায় এসেছি। ইয়াছিন সাহেব আমার আত্মীয় এটা যেমন সত্য, একই সঙ্গে আমিও ২৬ বছর ধরে তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে আসছি, সেটাও সত্য। কোনোটাকেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। তবে ইয়াছিন সাহেবের ভাল ইমেজের কারণে ভোটের মাঠে কিছুটা সুবিধা পাচ্ছি- এটাও সত্য। 

প্রশ্ন: ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোট নিয়ে আপনার কোনো শঙ্কা আছে?

নিজাম উদ্দিন কায়সার: ইভিএম নিয়ে তো শঙ্কা আছেই। কারণ, আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর টার্গেটই হচ্ছে ভোট লুট করা। যদি সিইসির কথা অনুযায়ী গোপন কক্ষে ভোট ডাকাত থাকে- তাহলে শঙ্কা তো থাকবেই। ডাকাত ঠেকানো গেলে কোনো শঙ্কা থাকবে না।    

প্রশ্ন: ভোট সুষ্ঠু হবে কিনা- এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে ‘শঙ্কা’ আছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী? 

নিজাম উদ্দিন কায়সার: এই নির্বাচনকে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে মেলানোর কোনো সুযোগ নেই। ওইটা ছিল ডামি একটা নির্বাচন। এই নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করায় স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা আমাকে সমর্থন দিয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশপাশি সাধারণ মানুষও এখন জেগে ওঠেছে। সুতরাং নির্বাচনের দিন ভোটারদের শঙ্কার কোনো কারণ নেই। আমি আশাবাদী, ভোট সুষ্ঠু হবে। সাধারণ মানুষ নির্ভয়ে এসে ভোট দিতে পারবে। 

প্রশ্ন: আওয়ামী লীগের দুজন নেতা নির্বাচন করছেন। আওয়ামী লীগের ভোট ভাগ আপনাকে কতটা সুবিধা দেবে বলে মনে করেন?

নিজাম উদ্দিন কায়সার: এটা তো আওয়ামী লীগের লোকেরাই ভালো বলতে পারবে। তবে আমার মনে হয় যে, এবারের নির্বাচনে ব্যক্তি ইমেজটাই বেশি কাজ করবে। মানুষ দলমত নির্বিশেষে আমাকে ভোট দেবে। কারণ মানুষ পরিবর্তন চায়।

প্রশ্ন: বিএনপিপন্থি আরেকজন প্রার্থী আছেন। তিনি গত নির্বাচনে ভালো ভোট পেয়েছেন। ফলে বিএনপির ভোট ভাগ হলে আপনার জন্য কতটা অসুবিধা হবে বলে মনে করেন?

নিজাম উদ্দিন কায়সার: আমার মনে হয় এবার বিএনপির ভোট ভাগ হবে না। বিএনপির সব নেতাকর্মী আমার সঙ্গে আছেন এবং আমার জন্য মাঠে কাজ করছেন। পাশাপাশি গত নির্বাচনে যে অপপ্রচারগুলো ছিলো- এবার ভোটাররা অনেক বেশি সচেতন। এ ছাড়া তিনি (মনিরুল হক সাক্কু) এখন বিএনপির কেউ না। তিনি এক সময় বিএনপির ছিলেন, এখন সাবেক হয়ে গেছেন।

প্রশ্ন: সিটি নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রে আনার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। এখানে শুধু মেয়র প্রার্থী- সেটা কি ভোটার উপস্থিতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে?

নিজাম উদ্দিন কায়সার: একটা শঙ্কা তো থেকেই যায়। তবে আমার মনে হয় এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে অতীতের চেয়ে। কারণ, মানুষের মধ্যে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ আছে। মানুষ ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনে ভোট দিতে যায়নি। আমি আশাবাদী বিএনপির সমর্থক প্রার্থী থাকাতে মানুষ ওই ক্ষোভ থেকেই কেন্দ্রে যাবে এবং ঘোড়া প্রতীকে ভোট দেবে। 

প্রশ্ন: এই উপনির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাকে কীভাবে দেখেন। তারা কি নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করতে পেরেছে বলে মনে করেন?

নিজাম উদ্দিন কায়সার: নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান যখন কুমিল্লা এসে আমাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন- তখন সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তার কিছু সিদ্ধান্ত আমাকে আশ্বস্ত করেছে। তবে তিনি চলে যাওয়ার পর রিটার্নিং কর্মকর্তার ভূমিকা আমার কাছে মনে হয়েছে, তিনি ইসির সিদ্ধান্তগুলো সেভাবে বাস্তবায়ন করতে পারছেন না।  

প্রশ্ন: মেয়র নির্বাচিত হলে প্রথম কোন সিদ্ধান্তটা নেবেন?

নিজাম উদ্দিন কায়সার: আমি নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশনকে একক মালিকানা থেকে যৌথ নেতৃত্বে কুমিল্লার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে সমন্বয় করে উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি গঠন করব। এরপর নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো আগে সমাধান করব। যেমন জলাবদ্ধতা, যানজটসহ বিভিন্ন সমস্যা দ্রুত সমাধান করব। আর সিটি করপোরেশনটাকে অবশ্যই দুর্নীতিমুক্ত রাখব। কাজ ভাগাভাগির হাত থেকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনকে আমি পুনরুদ্ধার করব।  

প্রশ্ন: ভোটের ফলাফল যাই হোক, মেনে নেবেন কিনা?

নিজাম উদ্দিন কায়সার: জনগণ যদি ভোট দিতে পারে। তাহলে জনগণের রায় অবশ্যই মেনে নেব। আমি আশাবাদী মানুষ, পরিবর্তনের প্রতীক ঘোড়া মার্কায় তাদের রায় দেবেন।

প্রশ্ন: ব্যস্ততার মধ্যেও সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

নিজাম উদ্দিন কায়সার: আপনাকেও ধন্যবাদ।