মেহেরপুরের ডিসি বলেন, বিষয়টি নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটিকে জানিয়েছেন; তারাই আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
Published : 25 Dec 2023, 04:46 PM
মেহেরপুর-১ আসনে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে সরকারি চিকিৎসককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও দুই বারের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল মান্নান ১৭ ডিসেম্বর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অলোক কুমার দাসকে মোবাইল ফোনে এই হুমকি দেন।
এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কাছে আইনি ব্যবস্থার জন্য দুজনের কথোপকথনের অডিও ক্লিপটি দিয়েছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা অডিও ক্লিপটি এই আসনের জন্য গঠিত নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির কাছে পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
এখানে নৌকার বিরুদ্ধে আরেক আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন ঈগল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অনেকেই এখানে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আশা করছেন।
এর মধ্যেই অধ্যাপক আব্দুল মান্নানের এই হুমকির অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে।
১ মিনিট ৫ সেকেন্ডের অডিওতে অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চিকিৎসক অলোক কুমার দাসকে মোবাইলে বলছেন, “হ্যালো ডাক্তার অলোক, (পাশে আওয়াজ) এই আস্তে (ধমক)। আমি প্রফেসর আব্দুল মান্নান কথা বলছি।… তুমি বাইরে থেকে এসে মেহেরপুরে বেশ আরামেই আছ। বাড়িঘর করে পয়সা-টাকা অনেক কামাই করেছ। আমি কিন্তু যেমন ভালো লোক, তেমনি খারাপ লোক। তোমাকে মন্ত্রী (ফরহাদ) প্রমোশন করেনি। বাংলাদেশ গর্ভমেন্ট তোমার প্রমোশন করি দিইছে।…
“মন্ত্রীকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে যদি আর একটা কথা শুনি, মন্ত্রীকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে, তাহলে আমি এমপি হই আর না হই, তোমার মেহেরপুরের বাসা আমি উঠিয়ে দেব। আর তুমি যদি সাবধান হয়ে যাও, তাহলে আমার প্রিয় পাত্র হয়ে থাকবে। এইটুকু তোমাকে আমি বললাম।
“তুমি পারলে তোমার মন্ত্রীকে বলো। পারলে তোমার যেখানে শেখ হাসিনাকে বলো। আমি শেখ হাসিনার প্রার্থী। এটা তোমাকে মনে রাখতে হবে। আমি ভারতের প্রার্থী। এটা তোমাকে মনে রাখতে হবে। আমি এখানে হারার জন্য আসিনি। সাবধান হয়ে যাও তুমি।
“আমি তোমার কোনো কথা শুনবো না। আমি যে রিপোর্ট পেয়েছি। আমি খুব অসন্তুষ্ট তোমার উপরে। তুমি সাবধান হয়ে যাও”, বলেন ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী।
চিকিৎসক অলোক বিষয়টি আওয়ামী লীগ প্রার্থী জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে জানান এবং অডিওটি তাকে দেন।
বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তা বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে না দিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকে কেন দিলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে অলোক কুমার দাস বলেন, “আমি কোনো ঝামেলায় পড়তে চাইনি। বিষয়টি সাধারণ ঘটনা বলে মনে করি। আমার ফোনে অটোকল রেকর্ডিং হয়। আমি শান্তি প্রিয় মানুষ। শান্তিতে থাকতে চাই।
“এ কারণে কাউকে কোনো অভিযোগ জানাইনি। আমি শুধু আওয়ামী লীগের প্রার্থী জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে বিষয়টি জানিয়েছি। কারণ তিনি আমার অভিভাবক।
চিকিৎসক আরও বলেন, “রিটার্নিং কর্মকর্তা অডিওটি মেহেরপুরের দায়রা জজ আদালতের যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি মো. কবির হোসেনকে দিয়েছেন বলে শুনেছি।”
তবে অভিযোগের বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মান্নান বলেন, “একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে অলোক কুমার দাশ সারাদিন প্রতিমন্ত্রীর বাসায় বসে থাকেন। অলোক নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে এবং নিজের চেম্বারে তিনি রোগীদের নৌকায় ভোট দান করতে বলে বেড়াচ্ছেন। বলছেন, নৌকায় ভোট না দিলে চিকিৎসা দিবেন না।
“গ্রামের মানুষজন-ভোটাররা অসংখ্যবার ডাক্তার অলোকের এই কাণ্ড আমাকে জানায়। এ কারণে অলোককে বোঝানোর জন্য আমি ফোন দিয়েছিলাম। এটি উভয়ের পার্সোনাল প্রোপার্টি ছিল। কিন্তু এটি সোসাল মিডিয়ায় বিকৃত আকারে ছড়ানো হয়েছে। প্রতিপক্ষ প্রার্থী আমাকে হেয়-প্রতিপন্ন করার জন্য এ কাজ করেছেন।
সাবেক সংসদ সদস্য বলেন, “মূলত: বলেছি আমি ভারতের প্রার্থী না। অথচ ‘না’ শব্দটি কেটে ফেলা হয়েছে। এখন এই ইস্যুটিকে পুঁজি করে প্রতিপক্ষ প্রার্থী জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী আমাকে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে প্রকাশ্য নির্বাচনি সভায় বক্তব্যে দিয়ে বেড়াচ্ছেন।”
এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও নৌকার প্রার্থী ফরহাদ হোসেন বলেন, “আব্দুল মান্নান যেটি করেছেন তা নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন। উনি সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হয়ে এমন কথা বলতে পারেন না। আর উনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রার্থী দাবি করে যে কথা বলেছেন সেটা মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই না।
বিষয়টি নিয়ে রির্টানিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানান ফরহাদ হোসেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও মেহেরপুরের ডিসি শামিম হাসান বলেন, তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি জেনে তা নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির প্রধান যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ কবির হোসেনকে জানিয়েছেন। সেই কমিটি পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।