“আমরার টিনশেডের বাসার কর আগে দিতাম ৫০০ টেখা; আর অখন প্রায় ৫ হাজার টেখা হইছে।”
Published : 07 May 2024, 11:31 PM
সিলেট নগরীর গৃহকর নিয়ে নাগরিকদের ক্ষোভের মধ্যে এ নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
তিনি বলেন, “হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে যদি কোনো অসঙ্গতি বা অমিল পাওয়া যায় অবশ্যই ফরম-ডি এর মাধ্যমে আপত্তি করার সুযোগ রয়েছে। জনগণের ভোগান্তি বা কষ্ট হয় এমন কোনো কাগজে আমি স্বাক্ষর করবো না। নগরবাসীর সঙ্গে আলোচনা করে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাব।”
এ সময় অ্যাসেসমেন্ট/রি-অ্যাসেসমেন্ট নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, “আমি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। নগরীর সর্বস্তরের জনগণ মেয়র পদে আমাকে নির্বাচিত করেছেন। জনগণের ভোগান্তি বা ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ আমাকে দিয়ে হবে না।”
মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর ক্বিন ব্রিজ এলাকায় সুরমা নদী পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
নগরীতে আগাম বন্যার আশঙ্কা কম জানিয়ে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “অপ্রত্যাশিত বন্যা হয়ে গেলেও সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নীচে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এরই মধ্যে আলোচনা হয়েছে।”
‘আগে দিতাম ৫০০ টেখা, অখন হইছে ৫ হাজার’
সিলেট সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৯-২০ সালে মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধান শেষে হোল্ডিং সংখ্যা পুনর্র্নিধারিত হয়। এতে পুরোনো ২৭টি ওয়ার্ডে হোল্ডিং নির্ধারিত হয় ৭৫ হাজার ৪৩০টি। এসবের গৃহকর আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১১৩ কোটি ২৭ লাখ ৭ হাজার ৪০০ টাকা।
নতুন গৃহকর ধার্যের সময় ধরা হয় ২০২১-২২ সাল। সেই করারোপের তালিকাই ৩০ এপ্রিল প্রকাশ করা হয়েছে। তবে নতুনভাবে যুক্ত হওয়া ১৫টি ওয়ার্ডের হোল্ডিংয়ের সংখ্যা বর্তমান তালিকায় আসেনি।
নতুন গৃহকরে আবাসিক ভবনের প্রতি বর্গফুট পাঁচ টাকা এবং বাণিজ্যিক ভবনের প্রতি বর্গফুটের জন্য আট টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে আবাসিক ভবনের প্রতি বর্গফুট তিন টাকা ও বাণিজ্যিক ভবনের প্রতি বর্গফুটের জন্য পাঁচ টাকা নির্ধারিত ছিল।
তবে মেয়রের কাছে আবেদন করে নির্ধারিত থেকে অনেকে কম গৃহকর দিতেন।
নগরীর কালীবাড়ির বাসিন্দা আহমেদ হোসেন বলেন, “আমরার টিনশেডের বাসার কর আগে দিতাম ৫০০ টেখা (টাকা)। আর অখন (বর্তমানে) সেটি বেড়ে প্রায় ৫ হাজার টেখা হইছে। জিনিসপত্রের দামের কারণে সংসার চালানো দিন-দিন আরও কঠিন হইযার, ভাই। যে হারে কর ধরা হইছে, লাগে ভুতে লিখছে কাগজে। এই সিদ্ধান্ত বাতিল করা দরকার।”
নগরীর বাগবাড়ি এলাকায় টিনশেডের বাসা আছে আব্দুল কাদির মিয়ার। তিনি বিগত বছর ১২০ টাকা গৃহকর দিয়েছেন।
বলছিলেন, “বর্তমানে আমি জেনেছি, আমার বাসার কর নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার টাকা। চিন্তা করেন আমাদের অবস্থা। আমাদের ঘাড়ে হুটহাট করে বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার মানে কী? দ্রুত বাতিল করা হোক এ ধরনের সিদ্ধান্ত।”
নগরীর কুমারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ তৌফিক এলাহী চৌধুরী বলেন, টিনশেডের বাসায় তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন। আগের বছর ৭০০ টাকা গৃহকর দিয়েছেন। এখন তাকে ৪ হাজার ৩২০ টাকা দিতে বলা হয়েছে। অথচ তার বাসার ধরন কিংবা আয়তন কোনোটাই বদলায়নি।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, হোল্ডিং কর বৃদ্ধি হওয়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, স্বাভাবিক হারে সেটি সব জায়গায় বৃদ্ধি করা হয়।
“আমাদের ১০০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখনো সময় আছে মেয়র এটি বন্ধ বা বাতিল করে নগরবাসীকে নিয়ে বসে যৌক্তিক কর নির্ধারণ করার। অন্যথায় তিনি একজন বিতর্কিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে পরিচিতি লাভ করবেন।”
প্রতিবাদ-সমাবেশ অব্যাহত
নতুন গৃহকরকে ‘লাগামহীন ও অযৌক্তিক’ অভিযোগ করে কয়েকদিন ধরেই সিলেট নগরীতে প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ এসব প্রতিবাদে সামিল হচ্ছেন।
মঙ্গলবার মেয়র সঙ্গে দেখা করে গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে রাখার দাবি করেছে সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ।
বিকালে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে সংগঠনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে লিখিত দাবি জানানো হয়।
সংগঠনের প্রথম সহসভাপতি ও আব্দুল জব্বার জলিল কল্যাণ ট্রাস্ট্রের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জব্বার জলিল লিখিত আবেদনে বলেন, “মানবিক দৃষ্টিতে হোল্ডিং ট্যাক্স পুনঃনির্ধারণ করে জনসাধারণকে অতিরিক্ত করের বোঝা থেকে মুক্তি দিয়ে জনসাধারণের ভালোবাসায় আবদ্ধ থাকবেন এটা আমরা প্রত্যাশা করি।”
এ সময় মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক সিলেট সিটি করপোরেশন নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করেই হোল্ডিং ট্যাক্সসহ সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এ ব্যাপারে আমার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।”
এর আগে সোমবার বিকালে নগরীর আম্বরখানা এলাকায় বাসদ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সেখানে বাসদ সিলেটের আহ্বায়ক আবু জাফরের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তারা নতুন গৃহকরকে ‘অযৌক্তিক ও গণবিরোধী’ বলে অভিহিত করেন।
সন্ধ্যায় ‘সচেতন মহানগরবাসী’র ব্যানারে নগরীর ভাতালিয়া এলাকায় সাবেক প্যানেল মেয়র আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকির বাসভবনে প্রতিবাদ সভা হয়।
এদিন রাত ৮টায় জিন্দাবাজারে সিলেট নজরুল একাডেমিতে জাসদ জেলা সভাপতি লোকমান আহমদের আহ্বানে ‘লাগামহীন ও অযৌক্তিক গৃহকরের পরিপ্রেক্ষিতে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে রোববার গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে রাখতে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর কাছে স্মারকলিপি দেয় দুর্নীতি মুক্তকরণ ফোরাম নামের একটা সংগঠন।