“গোমতীর পানি কমে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে যেখানে বাঁধ ভেঙেছে সেটি এখনই মেরামত করা যাবে না।”
Published : 27 Aug 2024, 07:56 PM
নদ-নদী বিপৎসীমার নিচে নামার তথ্য এলেও কুমিল্লায় এখনো ১৪ উপজেলায় সাড়ে ১০ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন; যাদের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পেরেছেন প্রায় ৮২ হাজার মানুষ।
মঙ্গলবার বিকালে কুমিল্লা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে গোমতী নদীর পানি। যেটি সোমবার ছিল বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার উপরে। এর আগে গত ২২ অগাস্ট গোমতীর পানি সর্বোচ্চ বিপৎসীমা ১৩৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
বন্যা পরিস্থিতির কারণে এখন জেলা ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলায় চারদিকে মানুষের দুর্ভোগ আর হাহাকার। বিশেষ করে বানের পানিতে তলিয়ে থাকা মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোট উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ। এই দুই উপজেলায় এখনও ত্রাণ ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট রয়েছে।
মঙ্গলবার কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মু মুশফিকুর রহমান বলেন, “এখন পর্যন্ত জেলার ১৪টি উপজেলায় ১০ লাখ ৬১ হাজার ৬৪৪ জন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। আর আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন ৮১ হাজার ৭৬২ জন।”
জেলার বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর দুর্গত এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে শুকনা খাবার, স্যালাইন ও ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।”
গত ২২ অগাস্ট রাত পৌনে ১২টার দিকে বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া এলাকায় যেই স্থান দিয়ে গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙেছিল- সেই স্থান দিয়ে এখনও স্রোতের মতো লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। সেই সঙ্গে সালদা ও ঘুংঘুর নদীর বাঁধ ভাঙনের কারণে পানির ওপর ভাসছে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
বুড়িচং ও পাশের ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় এখনও লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। ব্রাহ্মণপাড়ায় দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।
পানি ঢুকছে দেবিদ্বার উপজেলাতেও। বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া প্লাবিত হওয়ার পর দেবিদ্বারে প্রতিদিন নতুন নতু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে মানুষজন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এ ছাড়া জেলার প্রতিটি বন্যা দুর্গত এলাকাতেই নৌযানের রয়েছে তীব্র সংকট। যার কারণে ত্রাণ সামগ্রী সমবণ্টন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বানভাসিরা।
জেলার দক্ষিণাঞ্চলের মনোহরগঞ্জ, লাকসাম ও নাঙ্গলকোট উপজেলা বন্যা পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত। জেলার চৌদ্দগ্রামে পানি কিছুটা কমেছে।
সরকারি সহায়তার পাশাপাশি বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সোমবার ও মঙ্গলবার বুড়িচংয়ে পুলিশ ও র্যাব সদস্যদেরও ত্রাণ সহায়তা দিতে দেখা গেছে।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাইবো) নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জমান বলেন, “গোমতীর পানি বর্তমানে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বিপৎসীমার নিচে আসলেও যেই স্থান দিয়ে বাঁধ ভেঙেছে সেটি এখনই মেরামত করা যাবে না। কারণ ওই স্থানে তীব্র স্রোতে লোকালয়ে পানি ঢুকছে।
“পানি না কমলে বাঁধ মেরামত করা সম্ভব না। ধারণা করছি, সেখানের বাঁধ মেরামতের উপযোগী হতে আরও অন্তত ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগবে।”