“যেটুকু নদী এখন রয়েছে সেটুকুকে বাঁচাতে হলে বনের ধানসাগর স্টেশন থেকে জিউধরা পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার এলাকার এই ভোলা নদী খনন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।”
Published : 07 May 2024, 09:46 PM
সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলায় আমুরবুনিয়া গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ভোলা নদী। পলি জমে নাব্যতা হারিয়ে এক সময়ের প্রবল প্রমত্তা ও খরস্রোতা নদীটি এখন খালে রূপ নিয়েছে।
ভোলা নদীর ওপারেই পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া বন। সোমবার সেখানে আগুন লাগার পর জোরালো হয়েছে ভোলা নদীটিকে আগের অবস্থায় ফেরানোর দাবি।
দীর্ঘদিন ধরে যে দাবি করে আসছিলেন উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আমুরবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দারা।
মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এক সময় এ নদী দিয়ে বড় বড় নৌযান (লাইটার জাহাজ, লঞ্চ) চলাচল করত। কিন্তু নদীতে এখন খরস্রোত নেই, দীর্ঘদিন খনন না হওয়ায় নদীটি তার যৌবন হারিয়েছে।
জোয়ারের পানিতে নদীতে ভরলেও ভাটার সময় একবারেই হাঁটু পানি হয়ে যায়। তখন পায়ে হেঁটেই পার হওয়া যায়। আর শীত মৌসুমে পানি একেবারেই শুকিয়ে যায়।
এ বিষয়ে আমুরবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব আব্দুল মজিদ বলেন, “আমাদের কৈশোরকালে এই ভোলা নদী এতোটাই খরস্রোতা ছিল যে, এপার থেকে ওপার সাঁতরে যাওয়া যেত না। জোয়ারের সময় নদীর পানি সুন্দরবনের ভেতরে উঠে যেত, আর ভাটার সময় নেমে যেত। সুন্দরবনে প্রবেশ ছিল একেবারেই দুঃসাধ্য।
“কিন্তু এখন নদীটি মরে এখন সমতল ভূমি হয়ে গেছে। নদীর সীমানার পাশেই বেশকিছু বসত ঘর গড়ে উঠেছে। এখানকার মানুষের সুন্দরবনে প্রবেশ একেবারেই সহজ হয়ে গেছে। তারা চাইলেই নদী পার হয়ে যখন তখন ঢুকতে পারে।“
তিনি বলেন, “এই নদীটিকে আগের অবস্থায় আর ফেরানো সম্ভব হবে না। তবে যেটুকু ভোলা নদী এখন রয়েছে সেটুকুকে বাঁচাতে হলে বনের ধানসাগর স্টেশন থেকে জিউধরা পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার এলাকার খনন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
“এছাড়া সুন্দরবনে মানুষের প্রবেশ ঠেকাতে নদী খনন ও সীমানা সুরক্ষিত করতে কাঁটাতারের বেড়ার কোনো বিকল্প নেই।”
নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, “সুন্দরবন এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। সুন্দরবন আমাদের আগলে রাখে। ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বরের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর থেকে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের লাখ লাখ মানুষকে কীভাবে রক্ষা করেছে তা এখানকার মানুষ তা জানে। সুন্দরবন না থাকলে সেদিন কত মানুষের প্রাণহানি ঘটত তা ভাবলে আমার গা শিউরে ওঠে।
“এই সুন্দরবনকে রক্ষা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।কিন্তু সুন্দরবনের আমুরবুনিয়া এলাকাটি অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। মানুষের প্রবেশ হয়ে উঠেছে অবাধ। প্রবল প্রমত্তা ভোলা নদীটি বলতে গেলে মৃত অবস্থায় রয়েছে।”
তাই নদীটিকে খনন এবং আমুরবুনিয়া এলাকাকে সুরক্ষিত করতে তারকাঁটার বেড়া দিয়ে সুরক্ষিত করতে সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন ও দীর্ঘদিন খনন না হওয়ায় ভোলা নদীটি মরে গেছে। যার কারণে নদীতে পানি আগের মত থাকে না। শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমে নদীটি একেবারেই শুকিয়ে থাকে।
“নদীটিকে খনন করার পরিকল্পনা বনবিভাগের রয়েছে। এই নদীটিকে খনন এবং বনকে সুরক্ষিত করতে কাঁটাতারের বেড়া দিতে প্রকল্প করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই আগুনের ঘটনার পর বনবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এই পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি হয়েছে।”
কমিটি যেসব সুপারিশ দিবে সেইসব সুপারিশ মাথায় রেখে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে আশা করেন এই বন কর্মকর্তা।