কথিত প্রেমিক, প্রধান সালিশীকারী ইউপি সদস্যসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে মেয়েটির পরিবার।
Published : 03 Jan 2025, 04:42 PM
মাদারীপুরের শিবচরের ধর্ষণ-গর্ভপাতের ন্যায়বিচার না পাওয়ায় সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী এক কিশোরী ‘আত্মহত্যা’ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই ঘটনায় কথিত প্রেমিক, প্রধান সালিশীকারী ইউপি সদস্যসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে মেয়েটির পরিবার।
মেয়েটির বড় ভাই নাসির মোল্লা বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে শিবচর থানায় মামলাটি করেছেন বলে জানিয়েছেন শিবচর থানার ওসি মো. আকতার হোসেন।
মারা যাওয়া হাফিজা আক্তার (১৪) শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের বাবলাতলা গ্রামের হাজী কাইয়ুমউদ্দিন শিকদারকান্দি এলাকার চাঁনমিয়া মোল্লার মেয়ে ও বাবলাতলা জুনিয়র স্কুলের শিক্ষার্থী।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, দেড় বছর আগে ওই কিশোরীর সঙ্গে প্রতিবেশী আবুল কালাম সরদারের বড় ছেলে পিয়ার সরদারের (২০) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
এর জের ধরে একপর্যায়ে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। পরে পিয়ার বিয়ের আশ্বাস দিলে সম্প্রতি কিশোরীর গর্ভপাতও করানো হয়।
এরপর পিয়ার বিয়ে নিয়ে টালবাহানা শুরু করে। বিষয়টি পিয়ারের পরিবারকে জানানো হলে তারাও বিয়েতে অস্বীকৃতি জানায়।
এ নিয়ে বেশ কয়েকবার মেয়েটির পরিবার বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা চালায়। শেষমেশ মঙ্গলবার বিকালে প্রতিবেশি রফি মুন্সির বাড়ির উঠানে সালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
সালিশে দত্তপাড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোতাহার হোসেন, স্থানীয় মাদবর উজ্জল খান, তাজেল মাদবর, জাহাঙ্গীর খাঁসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
মেয়েটির পরিবারের অভিযোগ- পিয়ার ইতালি যেতে চেষ্টা করছে তাই ঘটনা অন্যখাতে নিতে সালিশকারীরা মেয়েটির সঙ্গে পিয়ারের ছোট ভাই আলী সরদারের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বিয়ে না হলে ১০ লাখ টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে এই সিদ্ধান্তর পরেই সালিশ বৈঠকে দুই পক্ষের হট্টগোল শুরু হয়। পরে সেখান থেকে চলে যান সালিশকারীরা।
এদিকে ন্যায়বিচার না পাওয়ায় ও অপমানে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন ওই স্কুল শিক্ষার্থী ।
নিহত মেয়েটির মা নাছিমা বেগম বলেন, “আমার মেয়ে এবার ৬ষ্ঠ শ্রেণি পাস করে ৭ম শ্রেণিতে উঠেছে। আমরা ভাবছিলাম মেয়ে পড়াশোনা করে বড় হবে। কিন্তু পিয়ারের সাথে প্রেমের সম্পর্ক হলে গত বছর অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যায় আমার মেয়ে।
“আমরা গ্রামের মানুষের কাছে বিচার দিছিলাম। কিন্তু এইডা আমাদের গ্রামের মাতবররা কী বিচার দিল? আমি আমার মেয়েকে হারানোর বিচার চাই।”
একই ধরনের দাবি জানিয়ে মেয়েটির দাদা সাইদুল মৃধা বলেন, “আমার নাতনিকে এভাবে মরতে হবে আমরা কোনদিন ভাবিনি। আমরা সরকারের কাছে এই ঘটনার ন্যায়বিচার দাবি করছি।”
এদিকে সালিশ বৈঠকের আয়োজনে অংশ নেয়ার কথা অকপটে স্বীকার করলেন স্থানীয় সালিশকারী ও মাদবররা।
সালিশকারী উজ্জ্বল খান বললেন, “সালিশ করতে গিয়ে আমরা জেনেছি, মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিল এবং কয়েক মাস আগে অ্যাবরশন করিয়েছে। তাই আমরা মেয়েটিকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম।”
এর বেশি কিছু তিনি বলতে আর রাজি হননি।
মেয়েটির বড় ভাই নাসির মোল্লা বলেন, “আমি আমার বোনকে হারিয়ে ফেললাম। গ্রামের মানুষরা সবাই মিলেও আমার বোনটিকে পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে দিতে পারলো না। এখন আমি ন্যায়বিচার পেতে থানায় মামলা দায়ের করেছি।”
শিবচর থানার ওসি মো. আকতার হোসেন বলেন, “ঘটনার পর পিয়ার হোসেন এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। মামলার অন্য আসামিদেরও আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ করছে পুলিশ।”
শুক্রবার সকালে জেলা সদর হাসপাতালে নিহতের মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।