ছয় বছর আগে মায়ের মৃত্যুর পর পরিবারের সবাইকে আগলে রাখতো লামিসা। বৃহস্পতিবার বান্ধবীদের সঙ্গে কাচ্চি খেতে গিয়েছিল; কিন্তু সেখান থেকে আর ফেরা হয়নি। আগুনে পুড়ে মায়ের মত তাকেও পৃথিবীর সব বন্ধন কাটিয়ে যেতে হল চিরনিদ্রায়।
শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে লামিসার মরদেহ ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলীর বাড়িতে নেওয়া হলে পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের আহাজারিতে আশেপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবন ‘গ্রিন কোজি কটেজে’ লাগা আগুনে যে ৪৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের একজন বুয়েট শিক্ষার্থী লামিসা।
লামিসার চাচা রফিকুল ইসলাম সুমন বলেন, তার ভাতিজি মেধাবী ছিলেন। ভিকারুন্নেসা থেকে এসএসসি ও হলিক্রস থেকে এইচএসসি পাশ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। সে মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিল।
লামিসার বাবা নাসিরুল ইসলাম শামীম পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (এডিশনাল ডিআইজি)। দুই বোনের মধ্যে লামিসা বড়। ছোট বোন রাইসা এ বছর ভিকারুন্নেসা কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
লামিসার মা আফরিনা মাহমুদ মিতু ২০১৮ সালে মারা যান। ঢাকার বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে ছোট বোন আর বাবার সঙ্গে থাকতেন লামিসা।
চাচা রফিকুল বলছেন, “বৃহস্পতিবার রাতে বই মেলা ঘুরে বান্ধবীদের সঙ্গে বেইলি রোডে একটি রেস্তোরাঁয় কাচ্চি খেতে গিয়েছিল লামিসা। সেখানে আগুন লাগার পর লামিসা তার বাবাকে ফোন করে বলে বাবা আমি আটকা পড়েছি, আমাকে বাঁচাও।
“এরপর তার সঙ্গে আর কোনো কথা হয়নি। একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও লামিসার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।পরে তাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।”
লামিসা ছোটবেলা থেকেই খুবই শান্ত প্রকৃতির বলে তার চাচা জানান। বলেন, “ওর মা মারা গেছে ছয় বছর আগে। বড় বোন হিসেবে সবার খেয়াল রাখতো লামিসা। ওর এভাবে চলে যাওয়া কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছি না।“
বাদ জুম্মা শহরের চকবাজার জামে মসজিদে জানাজা শেষে আলীপুর কবরস্থানে লামিসাকে সমাহিত করা হয়।
জানাজায় ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ কে আজাদ, অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আলিমুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
লামিসা বুয়েট থেকে পাশ করে বের হলে হয়তো তার গ্রামের বাড়ি ঝিলটুলীতে আনন্দের বন্যা বইতো। কিন্তু ২৩ বছর বয়সী লাসিমা আর কোনোদিনই ফিরবে না; সেখানে এখন কেবলই শোকের মাতম।