এক ক্রেতা বলেন, “যুদ্ধ পরিস্থিতির কথা বইলা আমাদের পকেট কাটে ব্যবসায়ীরা।”
Published : 21 Jul 2023, 01:12 PM
নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জের পাইকারি বাজারে গমের দাম মণপ্রতি অন্তত ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। ফলে দেশের খাদ্যপণ্যের অন্যতম বৃহৎ এ পাইকারি বাজারে আটা ও ময়দার বাজার কিছুটা অস্থিতিশীল রয়েছে।
যদিও আটা-ময়দা মিল মালিকরা বলছেন, আগের কেনা গমই তারা ভাঙাচ্ছেন। ফলে আটা-ময়দায় এখনও বাড়তি দাম ধরছেন না। তবে গমের দাম বাড়া অব্যহত থাকলে আটা-ময়দার দামও বাড়বে।
এদিকে, কৃষ্ণসাগর দিয়ে আমদানির ব্যাপারে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেইনের শস্য চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত সোমবার। রাশিয়ার আপত্তিতে নতুন করে আর চুক্তিটি নবায়ন হয়নি।
এ চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় বাংলাদেশের গমের বাজার গত দুই-তিন ধরে অস্থিতিশীল।
ওই দুদেশের মধ্যে চুক্তির মেয়াদ শেষের পরদিনই গমের দাম বাড়ার আভাস দিয়েছিলেন নিতাইগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
বাজারটির বড় কয়েকটি পাইকারি গম বিক্রি প্রতিষ্ঠানের একটি হচ্ছে এমএস নিজাম এন্টারপ্রাইজ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কথা হয় এর ব্যবস্থাপক (বিপণন) শাহ্জাদা শিবলুর সঙ্গে।
তার দাবি, গমের দাম মণ প্রতি অন্তত ২০ টাকা বেড়েছে।
শাহ্জাদার ভাষ্য, “আমরা সরাসরি গম আমদানি করি না। আমদানিকারকদের থেকে কিনে বাজারে বিক্রি করি। আমদানিকারকরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। যদিও তাদের কাছে আগামী অন্তত দুই মাসের গম মজুদ আছে। যুদ্ধ পরিস্থিতিকে ইস্যু করে তারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, এই কারণে আমাদেরও বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। এমন চলতে থাকলে গমের বাজার আরও বাড়বে।”
বৃহস্পতিবার সারাদিন ইউক্রেইন ও রাশিয়ার গম মণ প্রতি ১ হাজার ৪২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা তিনদিন আগেও ছিল ১ হাজার ৪০০ টাকা। এছাড়া কানাডার গমও অন্তত ৩০ টাকা বাড়িয়ে প্রতি মণ ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জ আটা-ময়দা মিল মালিক সমিতির হিসাব অনুযায়ী, নিতাইগঞ্জে অন্তত ৭০টি ফ্ল্যাওয়ার মিল আছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধশত মিল নিয়মিত চলে।
গমের দাম বাড়ানোর পেছনে আমদানিকারকদের পাশাপাশি পাইকারি ব্যবসায়ীদেরও দুষছেন আটা-ময়দা মিল মালিকরা।
মিম শরৎ গ্রুপের গম ভাঙার চারটি মিল রয়েছে নিতাইগঞ্জে।
এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফিরোজ আলম বলেন, “এখনও গম ব্যবসায়ীরা স্টক করা শুরু করেনি। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। সুযোগ পেলেই স্টক করা শুরু করবে। তখনই আসলে বাড়বে গমের দাম। গমের দাম বাড়লে অটোমেটিক আটা, ময়দা ও ভুসির দাম বেড়ে যাবে। চলতি সপ্তাহে আটা প্রতি মণ ১ হাজার ৯০০ এবং ভুসি মানভেদে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করছি। সামনের সপ্তাহে কী হবে বলা মুশকিল।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিতাইগঞ্জের একটি মিলের মালিক বলেন, “গমের বাজার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলছে। নিতাইগঞ্জের বড় কয়েকটি ট্রেডার্সের (পাইকারি গম বিক্রির প্রতিষ্ঠান) কাছে মিল মালিকরা জিম্মি। ইউক্রেইন-রাশিয়ার চুক্তি নতুন করে হয়নি, কয়দিন পরে হয়তো আবার চুক্তি হবে। কিন্তু চুক্তির খবর পাওয়ার পর থেকেই মজুদ থাকলেও পূর্বে কম দামে কেনা গমই বেশি দামে মিল মালিকদের কাছে বিক্রি করছে বড় ট্রেডার্সগুলো। গত দু’দিন ধরে মণ প্রতি অন্তত ২০ টাকা বেশি দামে গম বিক্রি করছেন তারা। কেউ কেউ আবার ৪০ টাকা বেশিতেও বিক্রি করছেন।”
গম ব্যবসায়ীদের কাছে মিল মালিকদের জিম্মি হওয়ার ব্যাপারটিও ব্যাখ্যা করেছেন এই মিল মালিক।
তিনি বলেন, “বেশিরভাগ লেনদেন হয় বাকিতে। এ কারণে মিল মালিকরাও ট্রেডার্সগুলোর বিরুদ্ধে যেতে পারেন না। এ ব্যাপারে কিছু বলতে গেলেই পুরোনো হিসেব টান দেন। তখনই মিল মালিকরা জিম্মি হয়ে পড়েন। সরকারিভাবে এইসব বিষয়ে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হলে এমনটা হয় না।”
নারায়ণগঞ্জ আটা-ময়দা মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন বলেন, “নিতাইগঞ্জে গমের বাজার অস্থিরতা আছে। তবে এখনই দাম অতিরিক্ত বাড়বে না বলে মনে করছি। মিল মালিকরা পুরোনো স্টক দিয়েই কাজ চালাচ্ছেন। কেউ কেউ একটু বাড়তি দামে নতুন করে গম কিনছেন। দাম আরও বাড়লে সেক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। যদিও আমরা এখনও আগের দামেই আটা ও ময়দা বিক্রি করতেছি।”
আটা ও ময়দার খুচরা বাজারে দামের তেমন একটা প্রভাব না পড়লেও কোনো কোনো বিক্রেতা বেশি দামে খোলা আটা বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
শহরের সবচেয়ে বড় দ্বিগুবাবুর খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, আটা ৪৫ থেকে ৫০ ও ময়দা ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এই বাজারে কথা হলে মো. আলিমুজ্জামান নামে এক ক্রেতা বলেন, “দুই তিন পরপরই সবকিছুর দাম বাড়ে। আটার দামও বাড়াইছে। এক সপ্তাহ আগে যেই আটা ছিল ৪৮ টাকা ওইটাই এখন হইছে ৫৫ টাকা। যুদ্ধ পরিস্থিতির কথা বইলা আমাদের পকেট কাটে ব্যবসায়ীরা।”
তবে এখনও দাম বাড়েনি দাবি করে মোহাম্মদ আরিফ নামে এক বিক্রেতা বলেন, “পাইকারি বাজার যেমন থাকে আমরাও সেইভাবেই বিক্রি করি। তবে আটার দাম পাইকারি বাজারে না বাড়ায় আমরাও মানভেদে ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি করছি। পাইকারি দাম বাড়লে আমাদেরও বাড়াতে হবে।”