Published : 30 Apr 2025, 06:59 PM
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় দুই দিন আগে শিলাবৃষ্টিতে পাট, বোরো ধান ও তিলসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে পাটের বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান বোয়ালমারী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ইলা রানী।
এর আগে সোমবার দুপুরে হঠাৎ ৮ থেকে ১০ মিনিট এই উপজেলায় বৃষ্টির সঙ্গে ব্যাপক শিলা বর্ষণ হয়।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছর জেলার নয়টি উপজেলায় ৮৬ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এ ছাড়া ২৩ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।
দুই দিন আগে বোয়ালমারীতে শিলাবৃষ্টিতে তিন হেক্টর জমির পাট এবং শূন্য দশমিক ১৮ হেক্টর জমির বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া তিল ও মরিচেরও ক্ষতি হয়েছে।
বুধবার সকালে বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের নয়নীপাড়া ও উমরনগর এবং শেখর ইউনিয়নের দূর্গাপুর ও তেলজুড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে পাট, ধান, তিল ও মরিচের ক্ষেত। শিলাবৃষ্টিতে এসব ফসলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাটের ডগা ভেঙে গেছে।
এ ছাড়া কাঁচা-পাকা অবস্থায় থাকা বোরো ধান জমিতে পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক জমিতে ধানের শীষ ভেঙে পড়েছে। কৃষকের চোখেমুখে চরম হতাশা দেখা গেছে; যাদের অনেকেই এনজিও থেকে ঋণ করে এবং জমি ভাড়া নিয়ে চাষাবাদ করেছেন।
স্থানীয় কৃষক ইউসুফ শেখ বলেন, “বৃষ্টির সঙ্গে ৮ থেকে ১০ মিনিট শিলা পড়ে। বৃষ্টি থামলে ক্ষেতে গিয়ে দেখি পাটের বেশি অংশের মাথা ভেঙে নুইয়ে পড়েছে। আমি, আমার ভাই ও বাবা মিলে ১৯ পাখি জমিতে পাট চাষ করেছি।
“ক্ষেতের ফসলের প্রায় সব পাটের আগা ভেঙে গেছে। এমন ক্ষতি হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকাই কষ্ট হবে। এখন এই জমিতে অন্য ফসল আবাদেরও সুযোগ নেই।”
আরেক চাষি মান্নান শেখ বলেন, “আট পাখি জমিতে পাট আবাদ করেছিলাম। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। শিলাবৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেছে। টাকাও গেল, ফসলও গেল।”
চাষি আরশাদ মোল্লা বলেন, ক্ষেতের চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারছি না। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পাট এবং ধানের চাষ করেছেন তিনি। ধান ঘরে তোলার সময় এমন ক্ষতি অপূরণীয়।
ধানের কিছু অংশ বিক্রি করে দেনা শোধ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু শিলাবৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেছে আরশাদ মোল্লার।
বোয়ালমারী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ইলা রানী বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নিয়ে পাট ও ধান ক্ষেত পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকার কাজ চলছে। তালিকা হলে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, শিলাবৃষ্টিতে বোয়ালমারী উপজেলায় তিন হেক্টর জমির পাট আক্রান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আগাম পাটের বেশি ক্ষতি হয়েছে। তবে পাটের চারা ছোট থাকায় ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে।
দ্রুত ক্ষতির তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে; সেখান থেকে যে নির্দেশনা পাওয়া যাবে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।