Published : 05 May 2025, 10:45 AM
সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে চট্টগ্রামের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।
চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম এস এম আলাউদ্দিন সোমবার সকালে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। চিন্ময় দাসকে ভার্চুয়ালি শুনানিতে হাজির করা হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের সহকারী পিপি রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুনানি শেষে আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলায় চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।”
এর আগে রোববার আলিফ হত্যা মামলা, পুলিশের কাজে বাধাদান, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলাসহ মোট চারটি মামলায় চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে পুলিশ। এরমধ্যে হত্যা মামলার শুনানি সোমবার হল। বাকি তিন মামলার শুনানি মঙ্গলবার হবে বলে সহকারী পিপি রায়হান জানান।
জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে করা একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।
ওই মামলায় গত বুধবার তাকে স্থায়ী জামিন দেয় হাই কোর্ট। সেই জামিন স্থগিতের জন্য ওই দিনই আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
সেই আবেদনের ওপর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে রোববার শুনানির দিন ধার্য ছিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আই ফারুকীর মৃত্যুতে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সুপ্রিম কোর্টে বিচারিক কার্যক্রম দুপুরের পর স্থগিত রাখা হয়। তাই চিন্ময় দাসের বিষয়ে শুনানি আর হয়নি।
এরমধ্যেই আলিফ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রোববার চট্টগ্রামের আদালতে চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। সেখানে বলা হয়, "চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী হত্যা মামলার ঘটনায় জড়িত আছে মর্মে তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাইতেছে বিধায় আসামিকে উক্ত মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো একান্ত প্রয়োজন।"
সোমবারের শুনানি বিষয়ে সহকারী পিপি রায়হান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আসামি চিন্ময় দাসকে কারাগার থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত করা হয় এবং শনাক্ত করা হয়। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে আমরা গ্রেপ্তার দেখানোর প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করি। পরে আদালত আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দেন।"
গত বছরের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন। পরে এ মামলায় চিন্ময়সহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে চিন্ময়ের অনুসারীদের হট্টগোলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
তার জামিন নামঞ্জুর হলে তার অনুসারীদের হট্টগোলের মধ্যে গত বছরের ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষ হয়। আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় দাসকে কারাগারে নিয়ে যায়।
বিক্ষোভকারীরা আদালত সড়কে রাখা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর করে। এরপর আদালতের সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীরা মিলে তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
ওই ঘটনায় ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন আলিফের বাবা জামাল উদ্দিন। মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫/১৬ জনকে আসামি করা হয়।
সেদিন আইনজীবীদের ওপর হামলা, বিস্ফোরণ ও ভাঙচুরের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন আলিফের ভাই খানে আলম, যেখানে ১১৬ জনকে আসামি করা হয়।
এর বাইরে আদালত এলাকায় সংঘর্ষ, ভাংচুর ও পুলিশের কাজে বাধার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। ওই তিন মামলায় মোট ৭৬ জনের নামসহ অজ্ঞাত ১ হাজার ৪০০ জনকে আসামি করা হয়।
আদালত এলাকায় সহিংসতার ঘটনায় সবশেষ ৩ ডিসেম্বর মোহাম্মদ উল্লাহ নামের এক ব্যক্তি ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ ২৯ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন।
আলিফ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত আসামি চন্দন দাস, রাজীব ভট্টাচার্য্য ও রিপন দাশ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে গত ২ জানুয়ারি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময়ের জামিন আবেদন নাকচ করে দেয় চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ আদালত। এরপর গত ১২ জানুয়ারি হাই কোর্টে আবেদন করেন তার আইনজীবী অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য।
এ বিষয়ে শুনানি করে গত ৪ ফেব্রুয়ারি রুল জারি করে হাই কোর্টের এই বেঞ্চ। চিন্ময় দাসকে কেন জামিন দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয় সেখানে।
সেই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বুধবার চিন্ময়কে জামিন দেয় হাই কোর্ট। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ চেম্বার আদালতে যাওয়ায় তার মুক্তির প্রক্রিয়া আটকে যায়। এখন নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোয় তার মুক্তির সুযোগ আরো অনিশ্চিত হয়ে গেল।
আরও পড়ুন