ঈদে মহাসড়কের চার লেন চালুর কথা বললেও বেশির ভাগ অংশে মূল সড়কের কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
Published : 21 Mar 2025, 09:55 PM
টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত চার লেন সড়কের কাজ এখনো অর্ধেকও শেষ হয়নি। ঈদের সময় স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় তিনগুণ যানবাহন চলে উত্তরের এই পথ ধরে। ফলে এখানে ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন টাঙ্গাইল ও উত্তরবঙ্গের যাত্রীরা।
যদিও ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সল্লা, আনালিয়াবাড়ী ও ভাবলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সাউথ এশিয়ান সাব রিজিওনাল কো-অপারেশন বা সাসেক-২ প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
বিগত কয়েকটি ঈদযাত্রার অভিজ্ঞতা থেকে পরিবহন যাত্রী ও শ্রমিকরা বলছেন, যানবাহনের ব্যাপক চাপে পদ্মা সেতুতে টোল আদায় শ্লথ এবং অনেক সময় বন্ধও হয়ে যায়। তখন সেতুর দুই পাশেই ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়ে ভোগান্তি হয়।
এদিকে যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় সভা করেছে পুলিশ। ঈদে সড়কে অতিরিক্ত সদস্যও দায়িত্ব পালন করবে বলে জানান পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, “যানজট নিরসনে টাঙ্গাইলের অংশে ৬৫ কিলোমিটারে সাড়ে ৭০০ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া মহাসড়কে মোবাইল টিম কাজ করবে। মহাসড়ককে চারটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে।
“২৫ মার্চ থেকে মহাসড়কে পুলিশ ২৪ ঘণ্টা কাজ করবে। ঈদের পরও যানজট নিরসনে পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। আশা করছি, মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হবে না।”
সাসেক-২ প্রকল্পের আওতায় টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল হয়ে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হবে। এর আওতায় এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত ফেইজ-৫ অংশে চার বছরে কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ।
২০১৬ সালে একনেকে অনুমোদন পাওয়ার পর ২০২১ এর ডিসেম্বরে এই অংশের কার্যাদেশ পায় আব্দুল মোনেম নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২৫ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ কাজ বাকি রয়েছে।
ঈদে মহাসড়কের চার লেন চালুর কথা বললেও বেশির ভাগ অংশে মূল সড়কের কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এদিকে যমুনা সেতু সূত্র জানায়, স্বাভাবিক সময়ে যমুনা সেতু দিয়ে ২৪ ঘণ্টায় ১৮ থেকে ২০ হাজার যানবাহন পারাপার হয়। তবে বিগত ঈদে ৫৫ হাজারের অধিক যানবাহন সেতু পারাপার হয়েছে।
পুলিশ জানায়, যমুনা সেতুতে টোল আদায়ের সফটওয়ারে সমস্যার কারণে অনেক সময় টোল আদায় দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকে এবং সেতুর ওপর দীর্ঘ সময় গাড়ি আটকা থাকে।
অপরদিকে যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ে সিরাজগঞ্জ অংশে গাড়ি ঠিকমতো না চললেও যানজটের শঙ্কা রয়েছে। গত কয়েক ঈদে সিরাজগঞ্জের অংশে গাড়ি ঠিকমতো না চলায় যমুনা সেতুতে টোল আদায় বন্ধ থাকে। এতে করে টাঙ্গাইলের অংশে দীর্ঘ যানজট হয়।
এর বাইরে এই সড়কে প্রচুর ফিটনেসবিহীন গাড়ি বের হয়। কারণ, গাজীপুর, কালিয়াকৈর, সাভার, আশুলিয়ার মত বড় বড় শিল্পাঞ্চল থেকে শ্রমিকরা এসব গাড়িতে করেই কম পয়সায় উত্তরাঞ্চলের পথে যাত্রা করে। সড়কে কোনো একটি গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়লে, পেছনে শত শত গাড়িকে তার মাসুল গুনতে হয়।
যদিও যাত্রীদের অভিযোগ, এসব ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে উঠানোর ক্ষেত্রে অসাধু পরিবহন মালিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সহায়তা করে থাকে।
এনা পরিবহনের চালক আজগর আলী বলেন, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন ও বেপরোয়া গতির যানবাহন, যেখানে সেখানে ওভারটেকিংসহ নানা কারণে যানজটের ভোগান্তি হতে পারে। পুলিশের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
“এ ছাড়া মহাসড়কের পাশে নির্মাণ কাজের জন্য অনেক স্থানে বালু রয়েছে। একটু বৃষ্টি বা অন্য কোনো পানি পেলে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
শ্যামলী পরিবহনের চালক মিনহাজ উদ্দিন বলেন, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও তদারকির অভাবে এই মহাসড়কে ধীরগতিতে কাজ হচ্ছে। এতে এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু সড়কে মাঝে মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হচ্ছে।
তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার রবিউল আওয়ালের দাবি, ঈদে চার লেনের সুবিধা পাবে ঘরমুখো মানুষ। এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত চার লেন সড়কের কাজ ৪০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
“তবে ঈদের আগেই মহাসড়কের এই অংশের উত্তরঙ্গগামী পুরো লেন চলাচলের জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে। আশা করছি, দ্রুতই এই লেনে যানবাহন চলাচল করতে পারবে।”
যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, ঈদযাত্রায় যমুনা সেতু দিয়ে সার্বক্ষণিক টোল চালু রাখার চেষ্টা করা হবে। এবার সেতুর দুই প্রান্তে নয়টি করে বুথ দিয়ে যানবাহন পারাপার হবে।
এর মধ্যে মোটরসাইকেলের জন্য দুটি করে আলাদা বুথ থাকবে। এ ছাড়া যাতায়াতের সুবিধার্থে সেতুর উপরে অব্যবহৃত রেললাইনের সাড়ে তিন মিটার জায়গাও ব্যবহার করা হবে বলে জানান প্রকৌশলী পাভেল।