দিনটি উদযাপন উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
Published : 14 Apr 2025, 01:38 PM
শুরু হয়েছে ১৪৩২ বঙ্গাব্দ। নতুন বছরের প্রথম মাসের নাম বৈশাখ। আর বৈশাখের প্রথম এই দিনটিকে বর্ষবরণ উৎসব হিসেবে পালন করে থাকেন বাংলা ভাষাভাষীসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষ।
সোমবার সকাল থেকে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সারাদেশে পালিত হচ্ছে বর্ষবরণ উৎসব। দিনটি উদযাপন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কোথাও কোথাও আবার বসেছে গ্রামীণ মেলা; যা বৈশাখী মেলা হিসেবে পরিচিত। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।
চুয়াডাঙ্গা:
চুয়াডাঙ্গায় বর্ষবরণ উপলক্ষে সকাল ৮টায় ভিজে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহীদ হাসান চত্বর ও কবরী রোড ঘুরে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় বাঙ্গালির বিভিন্ন সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়।
এতে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং উন্নয়ন সংস্থা অংশ নেয়। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি, চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ, অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠন, চুয়াডাঙ্গা জিমনেশিয়াম নানা আয়োজনে নববর্ষকে বরণ করছে।
চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শেখ সেলিম বলেন, “নতুন বছরে আমরা আমাদের পেছনের দুঃখ ভুলে যেতে চাই। আমরা আমাদের ঐহিত্য টিকিয়ে রাখার অঙ্গীকার করছি। আমরা চাই, দূর হয়ে যাক সব অনাচার।”
নারায়ণগঞ্জ:
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন, চারুকলা ইনস্টিটিউট, সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়েছে। এতে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক ও কর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেন।
সকাল ৯টায় চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে জেলা প্রশাসন। হাতি, পালকি, ঢেঁকি ও বাঙালি সংস্কৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গ নিয়ে শোভাযাত্রাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে লোকজ মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন রয়েছে।
‘জীর্ণ পুরাতন যাক ভেসে যাক’ প্রতিপাদ্যে চাষাঢ়া থেকে শোভাযাত্রা বের করে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। নববর্ষ উপলক্ষে তৈরি মোটিফ নিয়ে ঢাকের তালে শোভাযাত্রাটি নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন সবাই। এর আগে চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকেও আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়।
সমমনা সাংস্কৃতিক সংগঠন শিহরণ সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদের ব্যানারে বর্ষবরণে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করেন জামায়াতে ইসলামী। লোকজ সংস্কৃতির ছাপ রাখতে মাথাল, লুঙ্গি, গামছা পরে এ শোভাযাত্রায় অংশ নেন দলটির নেতাকর্মীরা।
এ ছাড়া নববর্ষ উপলক্ষে জেলার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা আয়োজন করেছে।
ফরিদপুর:
ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্লার নেতৃত্বে সকাল ৮টায় বর্ষবরণের শোভাযাত্রা বের হয়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে শোভাযাত্রাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে অম্বিকা ময়দানে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় ফরিদপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বাকাহিদ হোসেন, স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক রওশন আলী, সিভিল সার্জন মাহমুদুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইয়াছিন কবির, রামানন্দ পাল, মো. সোহরাব হোসেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোদাররেস আলী ইসা, যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন জুয়েল, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসের শুরা সদস্য অধ্যাপক আব্দুত তাওয়াবসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক কামাল হাসান মোল্লা বলেন, “এই দিনে আমাদের যত গ্লানি, যত দুঃখ, যত বিনোতা, যত অপূর্ণতা সব কিছু ধুয়ে মুছে নববর্ষের নতুন কিরনে নিজেদেরকে আলোকিত করব। আমাদের মধ্যে এই দিন যেন সুখ-সমৃদ্ধি বয়ে নিয়ে আসে, এমনটি প্রত্যাশা করি।”
ময়মনসিংহ:
ময়মনসিংহে বর্নিল ও বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রাসহ নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। সকালে জেলা প্রশাসন ও বাংলা ১৪৩২ বর্ষবরণ উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে আলাদা আলাদা আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়।
সকাল ৮টায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগরের ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয় থেকে বিশাল বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। এদিকে নববর্ষ উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া প্রাঙ্গণ থেকে আরেকটি বিশাল বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়।
শোভাযাত্রা দুটি নগরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে শিল্পচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কের বৈশাখী মঞ্চে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ, অতিরিক্ত রেঞ্জ ডিআইজি আবু বকর সিদ্দিক, জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম, পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম, সিভিল সার্জন সাইফুল ইসলাম, জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর কামরুল হাসান মিলন, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ, মাহবুবুর রহমান, বিএনপি নেতা মিলন আকন্দসহ রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
শোভাযাত্রায় আবহমান গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলা হয়। এতে শান্তির প্রতীক হিসেবে পায়রাকে রাখা হয়। এ ছাড়া বাংলার ঐতিহ্য বায়স্কোপ, শাপলা, দোয়েল, মাছ স্থান পায় শোভাযাত্রায়। শোভাযাত্রা দেখতে রাস্তার দুই ধারে শতশত উৎসুক নগরবাসী ভিড় জমান।
পরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন উদ্যানে বৈশাখী মঞ্চে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উদ্যানজুড়ে বসে রঙ বেরঙের বর্ণিল বাংলার ঐতিহ্য মেলা।
এ ছাড়া পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ময়মনসিংহ প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে পদযাত্রা ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠিত হয়। বিকালে সার্কিট হাউজ মাঠে বাংলার ঐতিহ্য ঘুড়ি উড়ানো, লাঠি খেলা, রশি টানাটানি ও হা-ডু-ডু প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কার বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে।
রাজশাহী:
রাজশাহীতে সকাল সাড়ে ৬টায় পদ্মা নদীর পাড়ে রবীন্দ্র নজরুল মঞ্চে রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলিত পরিষদের আয়োজনে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে রবীন্দ্র, নজরুল, লালনগীতিসহ ছিল বাংলার গান ও নৃত্য।
এদিকে সকাল সাড়ে ৭টায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে নগরের সিঅ্যান্ডবির মোড় থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শিশু একাডেমিতে গিয়ে মিলিত হয়। সেখানে বাঙালির ঐতিহ্যের অনুষঙ্গ নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সকাল ৯টায় রাজশাহী কলেজ থেকে বের করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। এতে কলেজটির শিক্ষক শিক্ষার্থীর রোভার স্কাউটসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেন।
সকাল ১০টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে বের করা হয় রাজশাহী অঞ্চলের সবচেয়ে বড় শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আবার চারুকলায় গিয়ে মিলিত হয়।
দিনটি উপলক্ষে শিশু একাডেমিতে শিশুদের জন্য আয়োজন করা হয় চিত্রাংকন, রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা। এ ছাড়া জেলা কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু সদনে দেয়া হয়েছে উন্নত মানের খাবার।
সিলেট:
সিলেট জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সকাল সাড়ে ৭টায় জাতীয় সঙ্গীত ও বৈশাখের গান ‘এসো হে বৈশাখ’ গাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় নববর্ষের আনুষ্ঠানিকতা।
পরে সকাল ৮টায় সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গণ থেকে বর্ষবরণের আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি নগরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে সুবিদবাজারে ব্লু-বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে গান ও নৃত্যের মাধ্যমে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এ ছাড়া সিলেটের সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠনগুলোর আয়োজনে নগরীতে শোভাযাত্রা বের করা হয়।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারো শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজে বর্ষবরণ উৎসব আয়োজন করেছে আনন্দলোক সিলেট। চৌহাট্টা এলাকায় ভোলানন্দ নৈশ স্কুল প্রাঙ্গণে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে বর্ষবরণের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া শ্রুতির আয়োজনে নগরের ক্বীন ব্রিজ এলাকার সারদা স্মৃতি হল প্রাঙ্গণে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান চলছে।
কুমিল্লা:
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে সকালে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
এ সময় কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার, পুলিশ সুপার মো. নাজির আহমেদ খাঁন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সদস্য আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী আবু এবং জামায়াতের সেক্রেটারি মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
পহেলা বৈশাখ ঘিরে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন, প্রেস ক্লাব, সচেতন সাংস্কৃতিক ফোরাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ও মহানগর বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে কুমিল্লা টাউন হল প্রাঙ্গণে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া নগরের রাজগঞ্জ এলাকায় চলছে দুই দিনব্যাপী মাছের মেলা।
রংপুর:
রংপুরে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেন নগরবাসী। সকাল ১০টায় জেলা স্কুল ও টাউন হলের সামন থেকে শোভাযাত্রার শুরু হয়। এতে হাজারো মানুষ অংশ নেয়।
শোভাযাত্রায় গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি, মুখোশ, পাপেট, পাখি, মাছসহ নানা শিল্পকর্মের মাধ্যমে বাংলার ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়।
এতে অংশ নিতে হলুদ, লাল, সবুজ ও কমলা রঙের পোশাকে সেজেছেন সবাই। নারীদের মাথায় ফুলের মালা, হাতে রঙিন চুড়ি এবং শিশুদের চোখে মুখে ছিল উচ্ছ্বাস। ছোট ছোট মুখোশ পরে এবং হাতে পতাকা নিয়ে আনন্দ মিছিলে অংশ নেন তারা।
সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাংবাদিক রেজাউর করিম জীবন বলেন, “শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে খুবই ভালো লাগছে। বন্ধু-বান্ধব সবাই মিলে উপভোগ করেছি।”
শিক্ষার্থী কোহিনুর আক্তার কেয়া বলেন, “এত মানুষ একসঙ্গে হওয়ার আনন্দ অনেক। ঐতিহ্যকে এভাবে উদযাপন করার অনুভূতি অন্যরকম।”
এদিকে পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে বসেছে বৈশাখী মেলা। মেলায় স্টলগুলোতে গ্রামীণ বিভিন্ন খাবার, ফলমূল ও জিনিসপত্র রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বিকালে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
জয়পুরহাট:
জয়পুরহাট জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সকালে শহরের রামদেও বাজলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে জেলা প্রশাসন, বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠন, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশগ্রহণ করে।
পরে কালেক্টরেট মাঠে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিপুল কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক আফরোজা আক্তার চৌধুরী, পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব, বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুর রহমান চন্দন, দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সল আলীম এবং জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন।
অনুষ্ঠানে জেলা শিল্পকলা একাডেমি, জেলা জাসাসসহ ১৯টি সংগঠন সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করে।
এ ছাড়া জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে পান্তা, চিড়া-দইসহ বাঙালি খাবারের আয়োজন করা হয়। বসেছে দুই দিনব্যাপী গ্রামীণ মেলা। মেলায় মিঠাই মিষ্টান্নসহ গ্রামীণ ঐতিহ্যের বেশ কিছু স্টল অংশ নিয়েছে।
চাঁদপুর:
চাঁদপুর স্টেডিয়ামে সকাল ১০টায় বেলুন উড়িয়ে শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিনসহ অতিথিরা।
পরে সেখান থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চাঁদপুর সরকারি কলেজে গিয়ে শেষ হয়।
শোভাযাত্রা উদ্বোধনের আগে জেলা প্রশাসক বলেন, “পহেলা বৈশাখ শুধুমাত্র নববর্ষ নয়, এটি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি। এই দিনে আমরা জাতিসত্তা ও নিজেদের সংস্কৃতি ফুটিয়ে তুলব। অসম্প্রদায়িক চেতনা বেশি কোনো দেশ যদি ধারণ করে, সেটি বাংলাদেশ। কারণ এই উৎসবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলেরই অংশগ্রহণ রয়েছে।”
চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাখাওয়াত জামিল সৈকতের পরিচালনায় এতে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব, জেলা বিএনপি সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক।
এ ছাড়া নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের নানা কর্মসূচির মধ্যে উল্লেখযোগ্য আয়োজন হচ্ছে- ডাকাতিয়া নদীর তীরে ঘুড়ি উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এর আগে ১২ এপ্রিল থেকে চাঁদপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চাঁদপুর উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে ও জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বৈশাখী মেলা শুরু হয়; যা চলবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত।
যশোর:
যশোরে বর্ষবরণ উৎসবে শোভাযাত্রার রূপকার চারুপীঠের পরিচালক ভাস্কর মাহবুব জামাল শামিমকে সম্মাননা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
যশোর জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম তার হাতে সম্মাননা স্মারক ও ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন।
এর আগে জাতীয় সঙ্গীত ও এসো হে বৈশাখ গানের মধ্যে বাংলা বর্ষবরণ উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক। এরপর শুরু হয় আনন্দ শোভাযাত্রা।
এ সময় জেলা প্রশাসক ছাড়াও পুলিশ সুপার রওনক জাহান, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেরুল হক সাবু এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আহ্বায়ক রাশেদ খান উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে শহরের পৌর উদ্যানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উদীচী। সকাল থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। এ ছাড়া অন্য সংগঠনগুলোও বিভিন্ন স্থানে সকাল থেকে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
লক্ষ্মীপুর:
নাচ, গান, কবিতা, লাঠিখেলা আর লোকজ মেলার মধ্য দিয়ে লক্ষ্মীপুরে বাংলা বর্ষবরণ পালন করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সকালে সদর উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে নানা সাজে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ অংশ নেয়। বিলুপ্তপ্রায় দৃষ্টিনন্দন লাঠিখেলা উপস্থিতি লোকজনের মন কাড়ে।
শোভাযাত্রাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় ফিতা কেটে তিনি দিনব্যাপী লোকজ মেলার উদ্বোধন করা হয়।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকারের নেতৃত্বে শোভাযাত্রায় জেলা পুলিশ সুপার মো. আক্তার হোসেন, জেলা সিভিল সার্জন আবু হাসান শাহীন, পৌরসভার প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন এবং সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামশেদ আলম রানাসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বলেন, “বাংলা নববর্ষ আবহমান কাল থেকে আমাদের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। নাগরিক জীবনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে এর ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। বাংলা নববর্ষ ভালোবাসা-সম্প্রীতির প্রেরণা যোগায়।”
এদিকে সকালে জেলা বিএনপির আয়োজনে লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে একটি বৈশাখী শোভাযাত্রা বের করা হয়। এটি উত্তর তেমুহনী এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।
এতে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সাহাবুদ্দিন সাবু, যুগ্ম-আহ্বায়ক হাছিবুর রহমানসহ দলের বিপুল নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়:
উৎসবমুখর পরিবেশ ও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নববর্ষ পালিত হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টায় শিক্ষাভবন 'ই' এর সামনে থেকে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হয়ে একই স্থানে গিয়ে শেষ।
এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সাজেদুল করিম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ইসমাইল হোসেন, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক এছাক মিয়া, প্রক্টর অধ্যাপক মো. মোখলেসুর রহমান, বিভিন্ন হলের প্রভোস্ট ও রেজিস্ট্রারসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।
চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্যকে ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চেতনা একাত্তর এলাকায়, অর্জুনতলা ও শিক্ষাভবন 'ই' এর সামনে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে পিঠা-পুলি, হস্তশিল্প, ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও পণ্যের স্টল বসে।
এ ছাড়া বেরা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যান্ডবল মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা গান, কবিতা, নৃত্য ও নাটক পরিবেশ করেন।
নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব। এই আয়োজন আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি দায়বদ্ধতা এবং ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার সম্মিলিতভাবে যেভাবে এই উৎসব উদ্যাপন করেছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।”