ভারতের রপ্তানিকারকরা দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করায় পাথর রপ্তানি বন্ধ রেখেছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
Published : 07 Feb 2025, 08:12 PM
লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও ভুটান থেকে সব ধরনের পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। এতে বন্দরে পাথর ভাঙায় জড়িত সাত থেকে আট হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।
আমদানি মূল্য কমানোসহ কয়েকটি দাবিতে ১ ফেব্রুয়ারি ভুটান থেকে পাথর আমদানি সাময়িক স্থগিত করেছে বুড়িমারী স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন।
অন্যদিকে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা নতুন করে পাথরের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করায় নিজেরাই বাংলাদেশে রপ্তানি বন্ধ রেখেছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বুড়িমারী স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক হোসেন বলেন, “আমরা পাথরের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি। সেই দামে পাথর সরবরাহ না করলে আমদানি বন্ধ থাকবে।”
আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, ভুটান থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রতিটন তোর্শা বোল্ডার ও সামসি স্টোন ১৬ ডলারে আমদানি করা হয়। অথচ একই পাথর পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ১৪ ডলারে আমদানি করা হয়। এই বৈষম্যের কারণে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতির মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।
এ অবস্থায় ভুটান থেকে সরাসরি পাথর আমদানি এবং দাম ১৪ ডলারে নামিয়ে আনার দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে ভুটানের পাথর ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এতে গাড়ি পরিবর্তনের সুযোগে অবৈধ পণ্য প্রবেশের ঝুঁকি তৈরি হয় বলে অভিযোগ আমদানিকারকদের।
এদিকে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের একাংশ কোনও ঘোষণা ছাড়াই ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে পাথর রপ্তানি বন্ধ রেখেছে। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, ভারতীয় তোর্শা বোল্ডার পাথর আমদানি বন্ধের বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
বুড়িমারী স্থলবন্দরে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় প্রায় সাত থেকে আট হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে শ্রমিকরা চরম কষ্টে দিন পার করছেন।
পাথর শ্রমিক কায়কোবাদ বলেন, “আমদানি বন্ধ থাকলে পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে খুবই কষ্ট হয়। এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে।”
এদিকে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় প্রতিদিন সরকার প্রায় দুই কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থলবন্দর সংশ্লিষ্টরা।
এ স্থলবন্দর দিয়ে আগের তুলনায় যাত্রী পারাপারও অনেকটা কমে এসেছে। আগে এ পথ দিয়ে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ যাত্রী ভারত ও ভুটানে যাতায়াত করত। সেখানে বর্তমানে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জন যাত্রী পারাপার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
বুড়িমারী ইমিগ্রেশন পুলিশের (ওসি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, ৫ অগাস্টের পর থেকে এই বন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপারের সংখ্যা অনেকটাই কমে এসেছে। এর মধ্যে ভারত ভিসা সীমিত করায় বন্দরে আরও প্রভাব পড়েছে।
বুড়িমারী আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আবু রাইয়ান আশয়ারী বলেন, “আমরা ভুটানের রপ্তানিকারক ও ঢাকার ভুটানি দূতাবাসে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও সাড়া মেলেনি।
তাই বাধ্য হয়ে আমদানি বন্ধ রেখেছি। অন্যদিকে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা দাম বাড়ানোর জন্য রপ্তানি বন্ধ করেছেন।”
বুড়িমারী স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) এডি মেহেদী হাসান বলেন, আমদানিকারকরা কয়েকদিন থেকে পাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন। এতে বন্দরে রাজস্ব আদায়ও কমেছে।