বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিনমাস অতিবাহিত হলেও প্রভাবশালী আসামিদের কেউ এখনো গ্রেপ্তার হননি।
Published : 07 Nov 2024, 05:41 PM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় ফেনী মডেল থানায় এ পর্যন্ত ১৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১৫২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
বুধবার পর্যন্ত গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে ৪৭ জন এজাহারনামীয় ও ১০৫ জনকে সন্দেহজনক আটকের পর ওইসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেনী মডেল থানার ওসি মর্ম সিংহ ত্রিপুরা।
এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে তিন হাজারের বেশি মানুষকে।
আসামিদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী, ছয় উপজেলার চেয়ারম্যান ও পাঁচ পৌর মেয়রসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রিতিনিধি আছেন।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিনমাস অতিবাহিত হলেও এই প্রভাবশালী আসামিদের কেউ গ্রেপ্তার হননি।
তবে গ্রেপ্তারদের মধ্যে হত্যার দায় স্বীকার করে পাঁচজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি মর্ম সিংহ ত্রিপুরা।
নিহতদের পরিবার ও মামলার বরাতে ওসি জানান, গত ৪ অগাস্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী সদর উপজেলার মহিপাল এলাকায় আন্দোলন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা।
সেদিন তৎকালীন সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর নির্দেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালায়।তাদের গুলিতে ওইদিন ঘটনাস্থলে ৯জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়।
ওই ঘটনার পরদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হলে ফেনীর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও পালিয়ে যান।
পরে অন্তর্বর্তী সরকার দ্বায়িত্ব নেওয়ার পর নিহত ও আহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়। যার ধারাবাহিকতায় ফেনী মডেল থানায় বুধবার পর্যন্ত আটটি হত্যা ও আটটি হত্যা চেষ্টা মামলা হয়েছে ।
ওসি মর্ম সিংহ ত্রিপুরা জানান, এর মধ্যে অটোরিকশা (টমটম) চালক জাফর হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রহিম উল্লাহ, নিজাম হাজারীর ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) ফরিদ মানিক, ফেনী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণি লিটন, ফেনী সদর উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল হক রিফাত। তাদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
নিজাম হাজারীর পিএস ফরিদ মানিককে শিক্ষার্থী সরোয়ার জাহান মাসুদ ও ওয়াকিল আহমেদ শিহাব হত্যা মামলায়ও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
মাসুদ হত্যা মামলায় দাগনভূঞার মাতুভূঞা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন মেজুকে পাঁচ দিন ও শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ হত্যা মামলায় ফেনী সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সম্রাটকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
এছাড়া ওয়াকিল আহমেদ শিহাব হত্যা মামলায় মেজবাহ উদ্দিন মেজুকে পাঁচ দিন ও এনামুল হককে দুই দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
একাধিক মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য সচিব মেসবাহ উদ্দিন ভূঞা বলেন, “শিক্ষার্থী সরোয়ার জাহান মাসুদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ নেতা আবদুর রহিম হৃদয় দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
“আরেকটি হত্যা মামলায় ফেনী সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সম্রাটও দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
“এছাড়া শিক্ষার্থী মাহবুবুল হাসান মাসুম হত্যা মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মুরাদ হাসান বাবু।”
এসব মামলায় এজহারনামীয় অপরাপর আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে বলেও জানান ওসি মর্ম সিংহ ত্রিপুরা।
পুরানো খবর
ফেনীতে নিজাম হাজারীসহ ৩৫৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা নারীর
ফেনীতে ছাত্র আন্দোলনে হত্যার ঘটনায় আরও এক মামলা: ৩ সংসদ সদস্য আসামি
৫ হত্যা মামলায় সাবেক এমপি নিজাম হাজারীসহ আসামি ১৬২৩
ছাত্র আন্দোলন: ফেনীতে ২ হত্যা মামলায় আসামি সাবেক এমপিসহ ৮৫০
ফেনীতে আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৮