পুলিশ জানায়, গত ৪ অগাস্ট ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলায় মোট নয়জন নিহত হন। এসব ঘটনায় আটটি মামলা হয়েছে।
Published : 07 Sep 2024, 11:39 PM
ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে এক টমটম চালক নিহতের ঘটনায় সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ ৩৫৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে।
নিহত জাফর আহম্মদের স্ত্রী আছিয়া বেগম বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে ফেনী মডেল থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন বলে ওসি মো. রুহুল আমিন জানান।
নিহত জাফর আহম্মদ (৫৩) ফেনী সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের ওবায়দুল হকের বড় ছেলে।
ফেনী-২ আসনের সাবেক তিন বারের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী ছাড়াও এতে ফেনী-৩ সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীসহ ২০৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ছাড়া আরও ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজহারের বরাত দিয়ে ওসি রুহুল আমিন বলেন, এ মামলায় উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন- ফেনী জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল বশর মজুমদার তপন, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীল, ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল, ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হারুন মজুমদার, দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন, সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, ফেনী পৌরসভার সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী, পরশুরাম পৌরসভার সাবেক মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেল, সোনাগাজী পৌরসভার সাবেক মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন, ছাগলনাইয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. মোস্তফা, শর্শদি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঁইয়া।
আছিয়া বেগম মামলার এজহারে উল্লেখ করেন, গত ৩ অগাস্ট শহরের ট্রাংক রোডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তার স্বামী স্বেচ্ছায় অংশ নেন। আন্দোলনে তার অংশ নেওয়ার বেশকিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অনলাইনে প্রকাশ হয়। ওইদিন শর্শদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঁইয়াসহ ১০-১১ জন আসামি জাফরের বাড়িতে গিয়ে তাকে হত্যার হুমকি দেন। ভয়ে আছিয়া তার স্বামীকে সেদিন বাসায় আসতে নিষেধ করেন। জাফরও তার স্ত্রীর কথা মত সেদিন আর বাসায় ফেরেননি।
পরদিন ৪ অগাস্ট দুপুরের দিকে জাফরকে ফেনী শহরের পুরাতন জেল রোডস্থ জেলা কারাগারের সামনে পেয়ে ধাওয়া করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। স্বজনরা খবর পেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জাফরকে মৃত ঘোষণা করেন।
মামলার বাদী বলেন, তার স্বামীকে গুলি করতে প্ররোচনা, উসকানি ও নির্দেশনার অভিযোগে সাবেক সাংসদ ও জনপ্রতিনিধিদের আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গত ৪ অগাস্ট ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলায় ঘটনাস্থলে ও পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোট নয়জন নিহত হন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ফেনী মডেল থানায় এ পর্যন্ত আটটি মামলা করেছেন নিহতদের স্বজনরা।
এসব মামলায় বিভিন্ন পর্যায়ের অর্ধ শতাধিক জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আসামি হয়েছেন। মামলায় এজহারনামীয় প্রায় এক হাজার ২০০ জনসহ মোট আসামির সংখ্যা ২ হাজার ৯৪১।
ফেনী মডেল থানার ওসি রুহুল আমিন বলেন, ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে সংগঠিত ঘটনায় দায়ের করা আলাদা আটটি মামলা পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
ইতোমধ্যে ওইসব মামলায় ফেনী-২ আসনের সাবেক সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারীর একান্ত সহকারী পরিচয় দেওয়া মানিকসহ ছয়জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। মামলাগুলোর অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।