৪ অগাস্ট ছাত্র-জনতার অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল এলাকায় অবস্থানের সময় গুলিতে নয়জন নিহত হন।
Published : 17 Aug 2024, 06:42 PM
ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে নির্বিচারে গুলিতে ছাত্র-জনতা নিহতের ঘটনায় আরও তিনটি হত্যা মামলা হয়েছে। এ নিয়ে ফেনী মডেল থানায় পাঁচটি হত্যা মামলা হল।
সবগুলো মামলায় ফেনী-২ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীকে প্রধান করে আওয়ামী লীগ, তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ মোট এক হাজার ৬২৩ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে ফেনী মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ রুহুল আমিন জানান।
মামলার বরাতে পুলিশ জানায়, ৪ অগাস্ট ছাত্র-জনতার অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন আন্দোলনকারীরা। একই সময়ে শহরের ট্রাংক রোডে অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শতাধিক ভারী আগ্নেয়াস্ত্র ও কয়েক শতাধিক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহিপাল ফ্লাইওভারের দিকে এগোতে থাকে।
একপর্যায়ে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলে আটজন; পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন নিহত হয়। হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় অন্তত শতাধিক ছাত্র-জনতা।
ওইদিনের হত্যার ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ডিগ্রি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সরোয়ার জাহান মাসুদের মা বিবি কুলসুম বাদী হয়ে ১৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৫০-২০০ জনকে আসামি করে শুক্রবার রাতে একটি হত্যা মামলা করেন।
নিহত মাসুদ জেলার দাগনভূঞা উপজেলার জয়লস্কর ইউনিয়নের উত্তর জয়লস্কর গ্রামের মো. শাহজাহানের ছেলে।
এর আগে নিহত ফেনী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণের মা ফাতেমা আক্তার বাদী হয়ে ১০৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৫০-২০০ জনকে আসামি করে বৃহস্পতিবার রাতে আরেকটি মামলা করেন।
শ্রাবণ জেলার ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়নের উত্তর আনন্দপুর গ্ৰামের নেছার আহমেদের ছেলে।
অপরদিকে বুধবার রাতে নিহত সাইদুল ইসলামের বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ৯৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১৫০ জনকে আসামি রেখে আরেকটি হত্যা মামলা করেন।
এই তিনটি হত্যা মামলায় জেলার অন্তত ৩০ জনপ্রতিনিধিসহ ৯৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অন্যরা হলেন- ফেনী সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, ফেনী পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান করিম উল্লাহ বিকম ওরফে রেন্সু করিম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ও যুবলীগ নেতা জিয়া উদ্দিন বাবলু।
এর আগে মঙ্গলবার নিহত সবুজ ও শাকিল হত্যার ঘটনায় ফেনী মডেল থানায় দুটি মামলা হয়। ওই দুই মামলায় নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ ১৩৬ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাত ৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছিল।
ফেনী মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, প্রতিটি মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর নিরাপত্তারক্ষী মানিক ওরফে পিএস মানিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিটি হত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।