সংহিসতার ঘটনায় সদর থানায় চার মামলায় দুই শতাধিক ব্যক্তির নাম উল্লেখসহ এক হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
Published : 26 Jul 2024, 02:34 AM
ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিসংতায় মাদারীপুরে ৪০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে প্রশাসনের তদন্ত কমিটি।
ছাত্রদের আন্দোলনে নাশকতাকারী দুর্বৃত্তরা প্রবেশ করে শহরের সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর করায় ঘটনায় এই ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও তদন্ত কমিটির প্রধান নাজমুল হোসেন।
তিনি বলেন, পুরো এই ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের জন্য জেলা প্রশাসন তিন সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এর মধ্যেই কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে ৪০ কোটি ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতির চিত্র উঠে এসেছে।
এদিকে জেলা পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, সংহিসতার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সদর থানায় চারটি মামলা করেছে। এসব মামলায় দুই শতাধিক ব্যক্তির নাম উল্লেখসহ এক হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছে ৬৯ জন।
জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই বিকাল ৪টার দিকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মস্তফাপুর বাসস্ট্যান্ডে ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে একদল নাশকতাকারী তাতে যোগ দেয়।
তারা মস্তফাপুর বাসস্ট্যান্ডে সার্বিক পরিবহনের কাউন্টার ও পুলিশ বক্স ভেঙে সহিংসতার শুরু করে। তারা কয়েক হাজার আন্দোলনকারীকে প্রলুব্ধ করে জেলা শহরের দিকে এগোতে থাকে।
এসময় শেখ হাসিনা আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশ ঘিরে গড়ে ওঠা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা করতে থাকে নাশকতাকারীরা। একে একে তারা মাদারীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, ডাল গবেষণা কেন্দ্র, খাগদী আবাসিক হোটেল, যুব উন্নয়ন কেন্দ্রে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে।
বিকাল ৫টার দিকে নাশকতাকারীরা স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সার্বিক ফিলিং স্টেশনে হামলা চালায়। তারা ফিলিং স্টেশনটির পেছনে থাকা সার্বিক পরিবহনের বাস ডিপোতেও অগ্নিসংযোগ করে। এতে ডিপোতে রাখা ৪২টি বাস সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।
এর আগের দিন ১৮ জুলাই শহরের লঞ্চঘাট পুলিশ ফাঁড়ি পুড়িয়ে দেয় নাশকতাকারীরা। ভাঙচুর চালায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পুরান বাজারে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে।
এছাড়া ২০ জুলাই ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে শহরের শকুনি লেকের দক্ষিণ পাড়ের আট কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পৌর মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়াম সম্পূর্ণভাবে পুড়িয়ে দেয় দুবৃর্ত্তরা।
এসব ঘটনায় অনেক পরিবহন শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। সহিংসতার ঘটনার পর থেকেই স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে চলছে নানা উদ্বেগ উৎকন্ঠা। ব্যবসায়ী নেতারা সরকারের কাছে ব্যবসা বাণিজ্য বান্ধব পরিবেশ তৈরি করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
এ বিষয়ে মাদারীপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হাফিজুর রহমান খান বাচ্চু বলেন, শহরে এমন ভয়ংকর পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় শহরের ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ ও উৎকন্ঠায় আছেন। তাই দ্রুত ব্যবসা-বাণিজ্যবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির দাবি করছি, যাতে মাদারীপুরের ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারে।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা বলেন, “শহরের পরিস্থিতি এখন প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সার্বক্ষণিক কাজ করছেনপুলিশ সদস্যরা।
“এর মধ্যে সদর থানায় চারটি মামলা করেছে। এসব মামলায় দুই শতাধিক ব্যক্তির নাম উল্লেখসহ এক হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।”
তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।