“শেখ হাসিনা তার চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী ব্যাগের মধ্যে রুমালে লেবুর পানি ভিজিয়ে চোখে কান্নাকাটি করবেন, নাটক করবেন– এই নাটক দেশে যেন না হয়।”
Published : 15 Aug 2024, 10:10 PM
শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের পর বাংলাদেশে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হয়েছে, যায়যায়দিনের সাবেক সম্পাদক শফিক রেহমানের ভাষায়, তা কোনো স্বাভাবিক সরকার নয়, এটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারও নয়; এটি ‘বিপ্লবী সরকার’।
আর এ সরকারের অধীনে বিপ্লবী আইনে শেখ হাসিনার বিচার দাবি করে তিনি বলেছেন, “আমি পক্ষপাতী নই যে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিয়ম মেনে বিচার চলবে। না! বিচার করতে হবে, দেশে পাঠাতে হবে এবং ফাটাফাট এগুলো শাস্তি দিয়ে দিতে হবে, রায় দিয়ে দিতে হবে।”
গ্লোবাল বাংলাদেশি অ্যালায়েন্স ফর হিউম্যান রাইটস (জিবিএএইচআর) নামের একটি ‘মানবাধিকার জোট’ বুধবার বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে পূর্ব লন্ডনে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানেই এ বক্তব্য দেন শফিক রেহমান।
এই সাংবাদিক গত আট বছর ধরেই যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। ২০২৩ সালের অগাস্টে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের’ মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ওই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০১৬ সালে পাঁচ মাস কারাগারেও থাকতে হয়েছিল শফিক রেহমানকে। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ওই বছরই তিনি যুক্তরাজ্যে চলে আসেন।
৯০ বছর বয়সী শফিক রেহমানকে গত কয়েক বছরে প্রকাশ্যে কোনো অনুষ্ঠানেও দেখা যায়নি। 'জিবিএএইচআর'-এর সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসেছিলেন অতিথি বক্তা হয়ে।
সংবাদ সম্মেলনে 'জিবিএএইচআর'-এর আহ্বায়ক ও সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটন বলেন, “আজকের সংবাদ সম্মেলন ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছে এবং অনুরোধ জানানো হচ্ছে, গণহত্যার নির্দেশদাতা পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিন দিনের মধ্যে ভারত সরকার যেন গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়, এজন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের জন্য। কারণ, বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে।”
ভারতের সঙ্গে বন্দি প্রত্যার্পণ চুক্তির অধীনে অনুপ চেটিয়াসহ অনেক বন্দি বিনিময়ের দৃষ্টান্ত মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক ছাত্র গণহত্যার বিচারে ভারত সরকারের উচিত বাংলাদেশকে সহায়তা করা। দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যেও এই উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
পরে বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়ে ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ‘বিপ্লবী সরকার’ হিসেবে বর্ণনা করেন শফিক রেহমান।
তিনি বলেন, “তারা যতদিন থাকা দরকার, ততদিন থাকবেন- যেটা তারা বলেছেন, দেশের পুনর্গঠনের কাজটা করে তারা তারপর বের হয়ে যাবেন। তাহলে এটা কী সরকার? এই সরকার হচ্ছে বিপ্লবী সরকার।”
আর এ সরকারের অধীনে সব বিচার ‘বিপ্লবী আইনে’ করার দাবি জানিয়ে শফিক রেহমান বলেন, “এই যে বিচারের কথা হচ্ছে, সেখানে শেখ হাসিনা তার চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী ব্যাগের মধ্যে রুমালে লেবুর পানি ভিজিয়ে চোখে কান্নাকাটি করবেন, নাটক করবেন, তার বোন সেই নাটকে যোগ দেবে, সারা দেশবাসী আবার কান্নাকাটি শুরু করবে- এই নাটক দেশে যেন না হয়।”
এক্ষেত্রে ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠাকালীন আইন ও কিউবার বিপ্লবী সরকারের বিচারের প্রসঙ্গ টেনে শফিক রেহমান বলেন, “প্রসঙ্গত আমি জানিয়ে রাখি, এটার বৈধতা আছে। কারণ, ইসরায়েল যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, যেহেতু তারা গ্যাস চেম্বারে জার্মানি দ্বারা অনেকে নিহত হয়েছিল, সেজন্য তারা আইন করেছিল তাদের প্রথম সংবিধানে যে, কোনো মৃত্যুদণ্ড হবে না। আশ্চর্য হবেন- আজকে তারা বহু মৃত্যুর জন্য দায়ী।
“কিউবান বিপ্লবের পর একটা স্টেডিয়ামের মধ্যে সবার সামনে বিচার করেছিল। আমার বিশ্ববাসীর কাছে প্রমাণ করার দরকার নাই, কারণ আমরা জানি কী হয়েছে। আমাদের ভাইবোন আহত হয়েছে, বহু গুম হয়েছে। এরা অপরাধী, জাস্ট ধরে নিয়ে এসে স্টেডিয়ামে এদের বিচার করতে হবে।”
প্রবল গণ আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে গত ৫ অগাস্ট ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। সেখান থেকে তাকে দেশে ফেরানোর দাবির পাশাপাশি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও পরবর্তী পরিস্থিতিতে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেছে জিবিএএইচআর।
দাবিগুলো হচ্ছে- ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে’ সকল শহীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং আহতদের চিকিৎসা এবং পুনর্বাসন; সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যা, গুম ও বিচার বহির্ভূত সকল হত্যাকাণ্ডে জড়িত এবং তাদের সহযোগীদের আন্তর্জাতিক মানবতা বিরোধী আদালতে অবিলম্বে বিচার শুরু; গত ১৫ বছরে স্বৈরশাসন আমলে আটক সকল রাজবন্দীর মুক্তি এবং তাদের নিপীড়নের শিকার হয়ে নির্বাসিত শথ শত লেখক, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান; আগামী ১ বছরের মধ্যে দেড় কোটি প্রবাসীর এনআইডি ও ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে তাদের ভোট প্রদানের নিশ্চয়তা বিধান এবং মানবাধিকারের সকল আন্তর্জাতিক ঘোষণা,কনভেনশন এবং বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা অনুসারে সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সমাজের সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে প্রয়োজনে নতুন সংবিধান প্রণয়ন।
অন্যদের মধ্যে তালেয়া রেহমান, জিবিএএইচআর-এর সংগঠক ব্যারিস্টার জাকির হাসান শিশির, সিনিয়র ফেলো শেখ আখলাক আহমেদ, রাকেশ রহমান ও হাসনাত আরিয়ান খান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।