২০১৬ সালে এ কার্যক্রম শুরু করেন প্রবাসী শিবব্রত নন্দী দুলাল।
Published : 08 Oct 2024, 03:35 PM
কানাডার টরন্টো থেকে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ছোট শহর গুয়েলফ। প্রায় এক লাখ ৪২ হাজার জনসংখ্যার এই শহরে বাঙালি পরিবারের সংখ্যা শতাধিক।
অপরিচিত কেউ এই শহরের আনাচে কানাচে ঘুরে খুব সহজেই বাঙালি পরিবার খুঁজে বের করতে পারবেন। গ্রীষ্মের মাঝামাঝি বাড়ির পেছনে উঁকি দিয়ে যদি লাউ, শিম, করলা, ঝিঙা, চিচিঙ্গা কিংবা জাংলা দেখা যায়, তবে নিশ্চিত হওয়া যায় এটি কোন বাঙালি পরিবারের বাড়ি।
বাংলাদেশের প্রচলিত সবজি টরন্টোতে সহজলভ্য হলেও গুয়েলফের মতো ছোট শহরে সহজলভ্য ছিল না। এখন প্রায় প্রতিটি পরিবার তাদের ব্যাকইয়ার্ড বা বাড়ির উঠোনে দেশি সবজির চাষাবাদ করেন।
এটি সম্ভব হয়েছে ‘আঙিনার কৃষি’ নামে একটি অলাভজনক সংগঠনের সহায়তা ও সম্প্রসারণমূলক কাজের কারণে। এই সংগঠনটির স্লোগান- ‘মানুষের আদি সংস্কৃতি কৃষি, প্রবাসে এই সংস্কৃতির চর্চা করে আঙিনা কষি’।
স্বল্প পরিসরে ‘আঙিনার কৃষি’ যাত্রা শুরু করে ২০১৬ সালে। সেবার ঘরে উৎপাদিত দেশি সবজির চারা গুয়েলফবাসীর মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। এটি বাঙালি কমিউনিটিতে আগ্রহের সৃষ্টি করে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ২০১৭ সাল থেকে গ্রিন হাউজ ভাড়া নিয়ে চারা উৎপাদন শুরু করেন তারা।
উৎপাদন খরচের ভিত্তিতে স্বল্পমূল্যে সেসব চারা বিতরণ করা হয় বাঙালি কমিউনিটির সদস্যদের মধ্যে। লাউ, কুমড়া, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, করলা, শিম, মরিচ, বেগুন, টমেটো ও পুঁইশাকসহ ১৩ প্রজাতির প্রায় দেড় হাজার চারা তৈরি করে বিতরণ করা হয়। প্রতি বছর মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে গুয়েলফ জুড়ে চলে চারা বিতরণ উৎসব।
এই উৎসব শুধু চারা বিতরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। রুক্ষ প্রকৃতিকে জয় করে কীভাবে দেশি সবজির চাষ করা যায়, তার উপর সেমিনারের আয়োজন করে ‘আঙিনার কৃষি’। প্রথিতযশা কৃষি বিজ্ঞানীরা প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে সেসব সেমিনার পরিচালনা করেন। এর সঙ্গে যুক্ত করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রসনাবিলাস।
২০১৮ সালে ‘আঙিনার কৃষি’ কর্পোরেশন কানাডার নিবন্ধন পায়। তারপর থেকে এটি টরন্টো ও তার আশপাশের সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এখন এর কার্যক্রম শুধু চারা বিতরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, প্রতি গ্রীষ্মে সবজি উৎপাদনের কলাকৌশল নিয়ে উঠোন বৈঠকের আয়োজন চলে।
বৈঠকে দেশি সবজি উৎপাদনের সমস্যা নিয়ে নিজেদের মাঝে মতামত ও অভিজ্ঞতা বিনিময়সহ সামাজিক সম্প্রীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। কানাডার ‘থ্যাঙ্কস গিভিং ডে’র আদলে ধরিত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে হয় সামাজিক অনুষ্ঠান। এতে বাঙালি কমিউনিটির সদস্যরা তাদের উৎপাদিত সবজির একটি করে পদ রান্না করে নিয়ে আসেন।
আয়োজন করা হয় বাগান পরিদর্শন কার্যক্রমেরও। কার বাগানে সবজির কেমন ফলন হলো, এটি দেখাই মূল কারণ। দল বেঁধে এই কার্যক্রমে বাঙালি সদস্যরা অংশ নেন। এসব অনুষ্ঠানে গুয়েলফের ফেডারেল ও প্রভিন্সিয়াল সংসদ সদস্য, মেয়রসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নেন।
‘আঙিনার কৃষি’ যার হাত দিয়ে যাত্রা শুরু করে তিনি হলেন শিবব্রত নন্দী দুলাল। প্রবীণ এই কৃষিবিদ ব্যক্তিগত খরচে তার বাবা-মার স্মরণে প্রবর্তন করেন ‘আঙিনার কৃষি পদক’। আঙিনার কৃষির কার্যক্রমে প্রতিবছর যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তাদেরকে পদক দেওয়ার মাধ্যমে সম্মানিত করা হয়।
বৈচিত্র্যে ভরপুর নানা কার্যক্রমে ‘আঙিনার কৃষি’ উত্তর আমেরিকায় ব্যাকইয়ার্ড কৃষির সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এটি যেমন প্রবাসী বাঙালিদের দেশি সবজির চাহিদা মেটাচ্ছে, তেমনি প্রবাসে বাংলা সংস্কৃতির চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।