বিএনপির জোটের খেলা টিকবে না: কাদের

“এখন তো অদৃশ্য রিমোট কন্ট্রোলে বিএনপি চলে। বিদেশিরা কখন সরকারকে নিষেধাজ্ঞা দেবে তাদের ওপর নির্ভর করে তাকিয়ে আছে। লবিং করছে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2023, 01:43 PM
Updated : 27 Jan 2023, 01:43 PM

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি যে ‘জোটের খেলা’ শুরু করেছে, তা ‘বেশিদিন টিকবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

শুক্রবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সাথে এক বর্ধিত সভায় তিনি এ কথা বলেন। 

ওবায়দুল কাদের বলেন, টকশোতে গিয়ে বিএনপি নেতারা ইদানিং ‘পথ হারা পথিকের মত’ কথা বলেন। 

“কী করবে, কী বলবে, কী কর্মসূচি দেবে- এ নিয়ে ৫৪ দল, ৫৪ পদ, ৫৪ মত। এ দল ছোট হয়ে আসবে বেশি দেরি নেই। বামে ডানে একাকার। অতি বাম অতি ডান। এই দৃশ্যপট থাকবে না। গতবারও দেখেছি। ২১ দলীয় জোট… শেষ পর্যন্ত জোটের নেতা কামাল হোসেনই আউট। 

“এখন তো অদৃশ্য রিমোট কন্ট্রোলে বিএনপি চলে। বিদেশিরা কখন সরকারকে নিষেধাজ্ঞা দেবে তাদের ওপর নির্ভর করে তাকিয়ে আছে। লবিং করছে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য। জনগণ নেই, এখন নিষেধাজ্ঞা এবং অদৃশ্য ইশারায় তাদের রাজনীতি।” 

আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ‘দুর্বল ভাবে না’ মন্তব্য করে কাদের বলেন, "আওয়ামী লীগ বিরোধী সকল শক্তি এবং বেশ কিছু অপশক্তি এখানে জোট গঠন করেছে বিএনপির নেতৃত্বে। আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাব আমাদের লক্ষ্যকে সামনে রেখে। ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশের যে রূপকল্প ঘোষণা করা হয়েছে, তার বাস্তবায়ন আমরা করে যাব।"

‘সরকারের পেছনে আজরাইল ঘুরঘুর করছে’- বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, "বিএনপি এখন কত কথা বলে। এখন বুঝতে পারছি কারা শেখ হাসিনাকে মেরে জানাজা করে সমাহিত করে ফেলেছে। কারা এই নষ্ট রাজনীতি করে। এখানে প্রশ্ন আজরাইল নাকি সরকারের পেছনে ঘুরঘুর করছে। তোমরা জানো কীভাবে? তোমরা কি আল্লাহর ফেরশতা নাকি? মির্জা ফখরুল, আপনি কি আল্লাহর ফেরশতা? আপনি কীভাবে জানেন আজরাইল কার পেছনে ঘুরঘুর করছে?" 

ওবায়দুল কাদের বলেন, তার মৃত্যু নিয়েও সম্প্রতি গুজব ছড়ানো হয়েছে। 

“গভীর রাতে ফোন আসে, ‘আপনি কি হাসপাতালে?’ আমি বলি, না আমি তো বাসায়। আবার ফোন করে বলে কয়েকদিন আগে, ‘বেঁচে আছেন ভাই?’ কেন? ‘আমরা তো শুনেছি আপনি মরে গেছেন।’ আমাদের ইন্তেকাল পর্যন্ত তারা করিয়ে ফেলেছে। কয়েকবার এমন ঘটনা ঘটেছে। এখন আজরাইল লাগায় দিছে। আজরাইল সরকারের পেছনে ঘুরঘুর করছে। 

“ফখরুল সাহেব, আল্লাহ কবে আপনাকে ফেরশেতা বানালো? অথবা নবী বানাল? কেউ কি জানে? কেউ জানে না। সব আজগুবি খবর, নষ্ট রাজনীতি। এই নষ্ট রাজনীতি এবং নষ্ট কথা তারাই বলে। কি ভয়াবহ। কোনো দেশের রাজনীতিতে এই সংষ্কৃতি কি আছে প্রতিপক্ষকে মেরে ফেলার? এরকম ভয়াবহ গুজব ছড়ায়। এটা বিএনপি এবং তাদের দোসরাই করে।” 

‘জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা’– মির্জা ফখরুলের এমন মন্তব্যের জবাবে কাদের বলেন, "এটা কেমন করে হল। এটাতো শুনিনি। জানি না, এই আজগুবি আওয়াজ কোথা হতে দেয়? ফখরুল মাঝে মাঝে এমন উদ্ভট কথা বলে, জিয়াউর রহমান পারলে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করে দেয়। পঁচাত্তর ঘটানোই হয়েছে আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযুদ্ধকে শেষ করার জন্য। তিনি করবেন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা!” 

“ফখরুল সাহেব, একটু ব্যাখ্যা করেন, কীভাবে করলেন? তাহলে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করল কেন? জয় বাংলা নিষিদ্ধ হল কেন? বাংলাদেশ বেতার রেডিও বাংলাদেশ হলো কেন? ৭ মার্চ নিষিদ্ধ হল কেন? মুক্তিযুদ্ধের মুল্যবোধ পদদলিত হল কেন? স্বাধীনতার আদর্শ ধ্বংস করা হল কেন?” 

সম্প্রতি একটি টেলিভিশনের আলোচনার সূত্র ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, "শেখ হাসিনার জীবন নিরাপদ নয়। সে কথা বলেছি। সেটা নাকি মহা অন্যায় আমি করে ফেলেছি। এখানে অনেকেই আছেন। পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও আপনি কি জানতেন, সকালে কী হবে? 

“এই দেশে চোখের পলকে ১৫ অগাস্ট ঘটে গেছে। আমরা সতর্ক থাকব না? নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ কি ভিত্তিহীন। আমাদের বলতেই হবে, বিশ্বাসঘাতক তো আছেই। বিশ্বাসঘাতক যদি না থাকত, ১৫ অগাস্ট ঘটত– এটা কি কারো বিশ্বাস হবে? জিয়াউর রহমানের বিশ্বাসঘাতকতা, খন্দকার মোশতাকের বিশ্বাসঘাতকতা, এই সব বলতে গেলে আপনাদের গাত্রদাহ হয়। বিশ্বাসঘাতকতাই তো রক্ত ঝরিয়েছে।” 

বাকশালের সমালোচনাকারী বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, "জিয়াউর রহমান দরখাস্ত করে বাকশালে যোগ দিয়েছে। এখন বাকশাল নিয়ে গালিগালাজ করে। অথচ জিয়া বঙ্গবন্ধুর কাছে দরখাস্ত দিয়ে বাকশালে যোগ দিয়েছিলেন। আর সেই পরে ১৫ অগাস্টের মাস্টারমাইন্ড।" 

বিএনপি ও সমমনা দলগুলো যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, তাতে কোনো সংঘাত বা উসকানি যেন দেওয়া না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান কাদের। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “ঢাকা সিটিতে তারা পাল্টাপাল্টি বললেও আমরা আমাদের কর্মসূচিতে বলেছি, ডিসেম্বরের ১ তারিখ পর্যন্ত নির্বাচন পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। কোনটা কবে হবে তা আমরা বসে ঠিক করব। তবে সতর্ক থাকা, গণসংযোগ, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষা করা, আগুন সন্ত্রাস এবং ভাঙচুরের যেসব ঘটনা মাঝে মাঝে দেখা দেয়, এসব ঘটনার বিরুদ্ধে আমাদের কর্মসূচি বিরতিহীন আগামী নির্বাচন পর্যন্ত। পাল্টাপাল্টির এখানে কোনো বিষয় নেই।" 

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ সভায় উপস্থিত ছিলেন। 

এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছিলেন।