নদী ভাঙনে ঘর হারিয়ে ফুটপাতে আশ্রয় নেওয়াদের কথা কেউ লেখে না: তথ্যমন্ত্রী

অনুন্মোচিত বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন চাইছেন হাছান মাহমুদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2023, 01:56 PM
Updated : 19 March 2023, 01:56 PM

ভুল বা অসত্য সংবাদ নিয়ে প্রতিযোগিতা না করে গণমানুষের মনন ও প্রতিভা বিকাশে কাজ করতে সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।

রোববার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি পত্রিকার ‘নবরূপে আত্মপ্রকাশ’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে গণমাধ্যমের ব্যাপক বিকাশের পাশাপাশি অনেক চ্যালেঞ্জও যুক্ত হয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে ‘সবশেষ সংবাদ দেওয়ার’ প্রতিযোগিতা অন্যতম।

“আর এটি করতে গিয়ে দেখা যায় এমন অনেক সংবাদ পরিবেশিত হয় যেগুলো আসলে ঠিক নয় এবং বিভ্রান্তিকর। অনলাইনের ক্ষেত্রে এটি বেশি ঘটে। এ কারণেই স্বাধীনতার পাশাপাশি প্রয়োজন দায়িত্বশীলতা।”

মন্ত্রী বলেন, “পত্রিকা বা যেকোনো গণমাধ্যম শুধুমাত্র সংবাদ পরিবেশন কিংবা বিনোদনের জন্য নয়। একটি পত্রিকা মানুষের তৃতীয় নয়ন খুলে দেয়, অনুন্মোচিত বিষয়গুলোকে উন্মোচিত করতে পারে। সমাজ, রাষ্ট্র, সরকার যে দিকে দৃষ্টিপাত করছে না, সে দিকে দায়িত্বশীলদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে এবং করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দিতে পারে।

“রাস্তায় যে পাগলটা বিড়বিড় করে কথা আওড়ায় তার পাগল হওয়ার পেছনে একটা গল্প আছে। কিন্তু কেউ তা শোনে না, শোনার প্রয়োজনও মনে করে না। যে মানুষটি নদী ভাঙনে কিংবা অন্য কারণে বাস্তুচ্যুত হয়ে শহরের ফুটপাতে আশ্রয় নিয়েছে তাদের স্বপ্নের কথা কেউ লেখে না। যে মেয়েটি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হয়ত নিষিদ্ধ কোনো জায়গায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে, তার বেদনার কথা কেউ ভাবে না, লেখে না। সেগুলোও উন্মোচিত হওয়া প্রয়োজন।”

একইসঙ্গে একটি সংবাদপত্র শিশু-কিশোর, তরুণ ও যুব সমাজের মনন তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আমার ছেলেবেলায় অনেক দৈনিক পত্রিকায় ছোটদের পাতা থাকত, সেখানে আমিও লিখেছি, সেটি অনেক আনন্দের। কিন্তু এখন আর ছোটদের পাতা নেই, হারিয়ে গেছে।

“রূপচর্চার পাতা আছে, রান্নাবান্নার পাতা আছে- কিন্তু ছোটদের পাতা অনেক ক্ষেত্রে হারিয়ে গেছে। ‘দৈনিক দেশ বর্তমান (নবরূপে আত্মপ্রকাশ) পত্রিকার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাবো, যেন সপ্তাহে না হোক, অন্তত ১৫ দিনে ছোটদের একটা পাতা থাকে। এটি আমাদের কিশোর-তরুণদের মনন তৈরি এবং প্রতিভা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”

একটি গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তুলতে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা একটি বহুমাত্রিক গণতান্ত্রিক বিতর্কভিত্তিক সমাজে বসবাস করি। এই গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অবশ্যই প্রয়োজন।”

তিনি আরও বলেন, “অনেক উন্নত দেশেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যেমন আছে একইভাবে তাদের কাজ ও প্রকাশ সম্পর্কে দায়িত্বশীলও থাকতে হয়। সেখানে ভুল বা অসত্য সংবাদের জন্য জরিমানা গুণতে হয়, শাস্তি পেতে হয়। আমাদের দেশে এমন নজির এখনও হয়নি। মাঝে মধ্যে প্রেস কাউন্সিল থেকে তিরস্কার করা হয়েছে। কারণ তিরস্কার করা ছাড়া কাউন্সিলের আর কোনো ক্ষমতা নাই। সুতরাং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পাশাপাশি আমাদের সবার সম্মিলিত দায়িত্বশীলতাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন।”

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, তার সরকার গণমাধ্যমের বিকাশের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, কাজ করে যাচ্ছে। সে কারণে ২০০৯ সালে সাড়ে ৪শ’ দৈনিক পত্রিকা থেকে বর্তমনে সাড়ে ১২শ- এর বেশি পত্রিকা হয়েছে।

“টেলিভিশনের সংখ্যা ছিল ১০টি এখন সম্প্রচারে আছে ৩৬টি, আরও কয়েকটি খুব সহসা সম্প্রচারে আসবে। বেসরকারি রেডিও লাইসেন্স দেওয়া আছে ২৪টি, ১৪-১৫টি সম্প্রচারে আছে। কমিউনিটি রেডিও’র লাইসেন্স দেওয়া আছে প্রায় তিন ডজনের কাছাকাছি এবং বেশির ভাগই সম্প্রচারে আছে।”