“জাতীয় পার্টি কি তিনবার, চারবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসার জন্য সাহায্য করে নাই, তাহলে এত কথা বলেন কেন?”
Published : 22 Jun 2023, 11:57 PM
সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
তিনি বলেছেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কি পারেন না- বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে? যা যা করা দরকার, সবাইকে নিয়ে সেই উদ্যোগ নিন।
“একটা ভালো পরিবেশ সৃষ্টি করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে আপনি কি বলতে পারেন না- যারা ভয় দেখায় তাদের বলতে, ‘আমি কি ডরাই সখি ভিখারী রাঘবে’।”
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে মতভেদের জন্য বৃহস্পতিবার সংসদে একথা বলেন চুন্নু, যিনি শেখ হাসিনার ২০১৪ সালের সরকারে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
২০২৩-২৪ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় দাঁড়িয়ে চুন্নু যখন একথা বলছিলেন, তখন সংসদ নেতা শেখ হাসিনা অধিবেশন কক্ষেই ছিলেন।
সরকারের অনিয়ম, দুর্নীতি, ত্রুটি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সরকারি দলের সংসদ সদস্যের সমালোচনার মুখে পড়ার কথাও বলেন বিরোধী দলের মহাসচিব।
“অনেকে আমাদেরকে বলেন, ‘আপনারা সরকারের সমালোচনা করেছেন- আপনারা কি বিএনপির দিকে চলে গেছেন?’ সরকারের সমালোচনা করা, ত্রুটি তুলে ধরা আমার দলের রাজনীতি। কিন্তু এটা করলে কেন ভাবেন বিএনপিতে যাবে কি না? আবার সরকারের পক্ষে বললে বিএনপি ভাবে, আমরা সরকারে যাব কি না? ‘নো’, আমরা কারও সঙ্গে যেতে চাই না।”
এবার কারও সঙ্গে জোট না বেঁধে জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে জানান তিনি।
“স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই- জাতীয় পার্টি একটি আলাদা দল, তাদের একটি প্রতীক আছে। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনেই মনোনয়ন দিয়ে অংশগ্রহণ করবে। কারো পক্ষে-বিপক্ষে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।”
বাংলাদেশ নীরবে শ্রীলঙ্কা হয়ে গেছে-বিরোধীদলীয় উপনেতা ও দলীয় চেয়ারপারসন জি এম কাদেরের এমন বক্তব্যের জেরে সরকারি দলের মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের সমালোচনার জবাব দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব চুন্নু।
“জি এম কাদের তথ্য ছাড়া কোনও কথা বলেন না। তিনি যদি বলে থাকেন বাংলাদেশ নীরবে শ্রীলঙ্কা হয়ে গেছে, তাহলে আপনারা তথ্য দিয়ে প্রমাণ করুন বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয় নাই। গায়ের জোরে কথা বলেন কেন?”
আওয়ামী লীগের আরেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমানের সমালোচনার জবাবে চুন্নু বলেন, “জাপা চেয়ারম্যানকে বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে সরকারি সুযোগ-সুবিধার বাইরে আর কী সুবিধা দেওয়া হয়েছে জানেন কি না, নিলে বলতে হবে। জিএম কাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কী কী সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন? কথা বলার সময় একটু খেয়াল করে বলবেন।”
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে। দেশের মানুষ গ্রহণ করছে। সরকার প্রধান শুনছেন। আপনারা এটা সহ্য করতে পারছেন না- অবান্তর কথা বলছেন। জিএম কাদের এমপি হিসাবে রাজউক থেকে একটা প্লটও নেননি। আপনাদের প্রমাণ করতে হবে কি সুযোগ-সুবিধা আলাদাভাবে নিয়েছেন?”
১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন মুজিবুল হক চুন্নু।
২০১৪ সালে নির্বাচন না হলে অগণতান্ত্রিক সরকার আসার শঙ্কার কথা তুলে ধরে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, “হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের কথা না শুনে সেদিন রওশন এরশাদের নেতৃত্বে দলের কয়েকজন সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনে আসে।
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সাক্ষী। তখন আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতা আমাকে বলেছিলেন, এই চুন্নু, মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে! দেশের অবস্থা দেখ না। নির্বাচন কী হবে সম্ভব? জান থাকবে? প্রাণ থাকবে? … আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা, নাম বলতে পারব। প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘নির্বাচন হবে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষা করতে চাই। অন্য কাউকে বসতে দেব না। তোমরা নির্বাচন করো।’ আমরা নির্বাচন করলাম। আমাদের তিনজন মন্ত্রী দেওয়া হল। এক সঙ্গে সরকার গঠন করলাম।”
মুজিবুল হক চুন্নু প্রশ্ন রাখেন, “জাতীয় পার্টি কি তিনবার, চারবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসার জন্য সাহায্য করে নাই, তাহলে এত কথা বলেন কেন? কী সুযোগ-সুবিধা আমরা নিলাম? জিএম কাদের কী সুবিধা নিল, সমালোচনা করতে পারবেন না?”
সংসদে বারবার বিএনপির নাম বলে তাদের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে দাবি করে জাতীয় পার্টির এ সংসদ সদস্য বলেন, ক্ষমতাসীনরা জাতীয় পার্টির সমালোচনা করলেও সরকারের অনিয়ম-ত্রুটি ধরার বিষয়ে তারা সরব থাকবেন।
“আমাদের বিরুদ্ধে বলেন, সমস্যা নেই। আমরা সরকারের বিরুদ্ধে বলব, কারণ আমরা জনগণের পক্ষে কথা বলি। কিন্তু আপনারা চান, আমরা আপনাদের খয়ের খা হয়ে থাকব। ৩৫০ এমপির মধ্যে ৩০০ উপরে আপনারা। আপনাদের ভালো কাজের কথা আপনারা বলেন। মানা করছে কে? কিন্তু আপনারা কেন আশা করেন আমরা আপনাদের পক্ষে কথা বলব? আমরা তো বিরোধী দল। আমরা সরকারের ত্রুটির কথা বলব। আমরা সরকারের দুর্নীতি, প্রশাসনের অনিয়মের কথা বলব।”