পুলিশের ওপর হামলার ‘পরিকল্পনা ও উসকানির’ অভিযোগে পল্টন থানার মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ দলটির সাত নেতার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হবে সোমবার।
বাকি পাঁচজন হলেন– বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন এবং সেলিম রেজা হাবিব।
এই সাতজনের মধ্যে ফখরুল ও আব্বাসকে গ্রেপ্তার করা হয় শুক্রবার ভোরে; জামিন আবেদন নাকচ করে সন্ধ্যায় তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
বাকি পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বুধবার সন্ধ্যায়, নয়া পল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর। বৃহস্পতিবার তাদের জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠায় আদালত।
তাদের জামিনের জন্য রোববার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম রেজাউল করিমের আদালতে নতুন করে ‘বিশেষ আবেদন’ করেন বিএনপি নেতাদের আইনজীবীরা। পরে বিচারক শুনানির জন্য সোমবার দিন রাখেন।
আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জামিন নামঞ্জুরের সাত দিনের মধ্যে পুনরায় জামিন চাইতে গেলে বিশেষ আবেদন (স্পেশাল পুট আপ) করতে হয়, সে কারণে আমরা তা জমা দিয়েছি। কাল এ বিষয়ে শুনানি হবে।”
কী অভিযোগ
বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে গত কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে দেশের রাজনীতিতে। নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু পুলিশ তাদের অনুমতি দিয়েছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের। এ নিয়ে অনড় অবস্থানে ছিল দুই পক্ষ।
এর মধ্যে গত বুধবার বিএনপি কর্মীরা নয়া পল্টনে জড়ো হলে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের মধ্যে আহত স্বেচ্ছাসেবক দলের এক ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতার মৃত্যু হয় হাসপাতালে।
এরপর বিএনপি অফিসে অভিযান চালিয়ে হাতবোমা পাওয়ার কথা বলা হয় পুলিশের তরফ থেকে। গ্রেপ্তার করা হয় প্রায় পাঁচশ নেতাকর্মীকে।
ওই ঘটনায় মোট চারটি মামলা করে পিুলিশ। এর মধ্যে পল্টন থানার মামলায় ৪৭৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও দেড় থেকে দুই হাজার লোককে সেখানে আসামি করা হয়।
এজাহারে বলা হয়, ১০ ডিসেম্বরের দলীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বুধবার নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ সময় পুলিশ তাদের উঠে যেতে বললে তারা পুলিশের উপর হামলা চালায়।
একই সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জানিয়ে এজাহারে বলা হয়, তাতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। একপর্যায়ে পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানো গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
বিস্ফোরণ, জনসাধারণ ও যানবাহনে চলাচলে বাধা, যানবাহনের ক্ষতি সাধন, জনমনে আতঙ্ক ও ত্রাস সৃষ্টি, পুলিশের কাজে বাধা ও হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে মামলা এজাহারে।
আসামিদের মধ্যে ১৪ জনকে বৃহস্পতিবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী, আবদুস ছালাম, শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, ফজলুল হক মিলন, খাইরুল কবীর খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সেলিম রেজা হাবিবসহ ৪৩৪ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
এরপর বৃহস্পতিবার শেষ রাতে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে তাদের বাসা থেকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। দীর্ঘ সময় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ শুক্রবার দুপুরে তাদের গ্রেপ্তার করার কথা জানান।
পল্টন থানার মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর কথা জানিয়ে হারুন সাংবাদিকদের বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগটা হল, তারা পুলিশের ওপর বর্বোরিচত হামলায়, ককটেল নিক্ষেপের উসকানিদাতা, পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা এটা পেয়েছি।”
সেদিন বিকালে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম।
শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিম দুজনের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এদিকে অনেক টানাপড়েন শেষে শুক্রবার বিকালে বিএনপিকে তাদের ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের জন্য যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগ মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেয় পুলিশ। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা থাকলেও শেষ পর্যন্ত শনিবার শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয় সেই সমাবেশ। নেতাদের মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি ও বিক্ষোভের নতুন কর্মসূচি দিয়ে বাড়ি ফিরে যান বিএনপি নেতা-কর্মীরা।
পুরনো খবর: