কনফার্ম’ বোতামে চাপ দেওয়ার আগে দুবারের বেশি প্রার্থী পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন না ভোটাররা।
Published : 26 Dec 2022, 07:13 PM
রংপুর সিটি করপোরেশনের তৃতীয় মেয়র নির্বাচন মঙ্গলবার; সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলবে ইভিএমে।
ইতোমধ্যেই ২২৯ কেন্দ্রের ১৩৪৯টি ভোটকক্ষে ইভিএম সরবরাহ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন; সোয়া চার লাখের বেশি ভোটার রয়েছে সিটিতে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন ইসির অধীনে এটি দ্বিতীয় সিটি নির্বাচন। ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নিয়ে জুনে কুমিল্লা সিটিতে ভোট আয়োজন করেছিল। কুমিল্লা সিটির মতই রংপুরেও ইভিএমে ভোট হচ্ছে; নিরাপত্তা জোরদারে সব কেন্দ্রে থাকছে সিসি ক্যামেরা।
এই সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইভিএম ব্যবহারসহ এর সম্পর্কিত বিভিন্ন দায়িত্বপালনের বিষয়ে বিশেষ পরিপত্র জারি করেছিল কমিশন; আর ‘নির্বিঘ্নে’ ভোট দিতে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে ভোটারদের।
ভোটকেন্দ্রে ইভিএম প্রস্তুতি, অডিট ও পোলিং কার্ডের ব্যবহার
প্রতিটি ইভিএমের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরণের কার্ড এবং মেশিন চালু করার পিন/পাসওয়ার্ড গোপনীয়ভাবে প্রিজাইডিং অফিসারকে সরবরাহ করা হবে।
সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার উদ্দেশে ভোটকেন্দ্রে ব্যবহৃত অডিট কার্ড ও পোলিং কার্ডের একটি সামগ্রিক ব্যাকআপ রিটার্নিং অফিসার/সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে সংরক্ষিত থাকবে।
জরুরি প্রয়োজনে রিটার্নিং অফিসার/সহকারী রিটার্নিং অফিসার ব্যাকআপ কার্ডগুলো প্রিজাইডিং অফিসার/সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে সরবরাহ করেন।
ব্যাকআপ কার্ডসমূহ সংশ্লিষ্ট ভোটকক্ষের ইভিএম সচল করার নিমিত্তে অথবা নতুন ইভিএম কার্য-উপযোগী করার জন্য ব্যবহার করা হয়। রিটার্নিং অফিসার/সহকারী রিটার্নিং অফিসার এ কার্ডের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন।
ভোটের প্রস্তুতি
প্রথমে প্রার্থী অথবা নির্বাচনী এজেন্ট অথবা পোলিং এজেন্টদের নিয়ে প্রার্থীদের নাম ও প্রতীক ঠিক আছে কিনা দেখা হবে।
সকাল সোয়া ৮টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার তার কক্ষে মূল ভোট নেওয়ার প্রস্তুতি নেবেন। ডেমো ভোটের ফলাফল প্রিন্ট করার পর ‘পুনরায় ভোট শুরু করুন’ বোতামে চাপ দেবেন। সকাল সাড়ে ৮টার আগে পর্যন্ত ‘ডেমো ভোট’ ও ভোট শুরু’ দুটি বোতামই নিষ্ক্রিয় থাকে। সকাল সাড়ে ৮টায় ‘ভোট শুরু’ বোতামটি সক্রিয় হয়।
ইভিএম ব্যবহার
ভোটকক্ষে সকাল সাড়ে ৮টায় ভোট শুরুর আগেই ইভিএম মেশিন ‘সেট আপ’ করবেন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার।
প্রিজাইডিং অফিসার কেন্দ্রের সব ভোটকক্ষে ব্যবহৃত ভোটিং মেশিন চালু করার নিরাপত্তা পিন ও পাসওয়ার্ড গোপনীয়ভাবে রিটার্নিং অফিসারের দপ্তর থেকে গ্রহণ, সংরক্ষণ ও সংশ্লিষ্ট সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে সরবরাহ করবেন।
এক্ষেত্রে অডিট কার্ড প্রবেশ করিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার/সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার পাসওয়ার্ড/পিন দিয়ে মেশিনে আঙুলের ছাপ দেবেন এবং ভোটের জন্য মেশিন প্রস্তুত করবেন।
ভোটগ্রহণ শুরুর আগে মেশিনের অপর স্লটে ’পোলিং কার্ড’ প্রবেশ করাবেন; মেশিন সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত হলে অডিট কার্ডটি বের করে নেবেন।
সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার কার্ড স্লটে প্রয়োজনে স্মার্ট কার্ড প্রবেশ করিয়ে ভোটার শনাক্ত করবেন। একজন পোলিং অফিসার ভোটার তালিকার হার্ড কপির সঙ্গে মিলিয়ে শনাক্ত করা ভোটার নম্বর চিহ্নিত করবেন এবং অপর পোলিং অফিসার বৈধ ভোটারের আঙুলে অমোচনীয় কালির দাগ লাগিয়ে দেবেন। সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ভোটারকে ইলেকট্রনিক ব্যালট ইস্যু করবেন।
ভোটগ্রহণ শেষে সংশ্লিষ্ট সহকারী প্রিজাইডিং অফিসাররা ‘এনড্ পোল’ করে ভোটগ্রহণ শেষ করবেন; ভোটিং মেশিন ও ব্যবহৃত কার্ড ফলাফল গণনার নির্ধারিত কক্ষে নিয়ে যাবেন এবং ভোটকেন্দ্রের সামগ্রিক ফলাফল প্রকাশ করবেন।
ভোটার যাচাই
নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পর ভোটার নম্বরের ভিত্তিতে খুঁজে নিতে হবে ভোটকক্ষ। লাইনে দাঁড়িয়ে নির্ধারিত কক্ষে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সামনে পৌঁছানোর পর যাচাই করা হবে পরিচয়।
স্মার্ট কার্ড, স্মার্ট কার্ডের নম্বর, ১৭ ডিজিটের লেমিনেটেড এনআইডি নম্বর বা ১২ ডিজিটের ভোটার নম্বরের যেকোনো একটি পদ্ধতিতে ভোটারের নাম শনাক্তের পর আঙুলের ছাপ মেলানো হবে। ছাপ সঠিক হলে ভোটারের ছবি ও ভোট তথ্য সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সামনের মনিটরে ভেসে উঠবে। প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ও ভোটার তা দেখতে পাবেন।
কন্ট্রল ইউনিট থেকে আঙুলের ছাপ মিললে একজন পোলিং অফিসার ভোটার তালিকায় তার নামের পাশে টিক চিহ্ন দিয়ে রাখবেন। আরেকজন পোলিং অফিসার ভোটারের আঙুলে লাগিয়ে দেবেন অমোচনীয় কালি। এরপর সেই ভোটারকে ইভিএমে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।
কোনো কারণে আঙুলের ছাপ না মিললেও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার মোট ভোটারের সর্বোচ্চ এক শতাংশ ভোটারকে ইলেকট্রনিক ব্যালট ইস্যু করতে পারবেন।
এরপর ভোট
সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ওই ভোটারের জন্য ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে গোপন কক্ষে রাখা ইলেকট্রনিক ব্যালট ইউনিটে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের জন্য তিনটি ব্যালট ইস্যু করবেন। এরপর ভোটারকে পাঠানো হবে গোপন কক্ষে।
সেখানে একজন ভোটার প্রতিটি ব্যালট ইউনিটের স্ক্রিনে প্রার্থীদের নাম ও প্রতীক দেখতে পাবেন; প্রতীকের পাশে থাকবে একটি করে সাদা বোতাম।
যাকে ভোট দিতে চাইবেন, তার মার্কার পাশের সাদা বোতামে চাপ দিলেই তা সিলেক্ট হয়ে যাবে। এরপর ব্যালট ইউনিটের নিচে ‘কনফার্ম’ লেখা সবুজ বোতামে চাপ দিলে ভোট দেওয়া সম্পন্ন হবে।
‘কনফার্ম’ বোতামে চাপ দেওয়ার আগে সর্বোচ্চ দুবার ভোটার পছন্দ বদলানোর সুযোগ পাবেন; তৃতীয়বারে যে সাদা বোতামে চাপ দেবেন, সেটাই তার পছন্দের মার্কা হিসেবে মেশিন গ্রহণ করবে।
নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, একই পদ্ধতিতে তিনটি পদের জন্য নির্ধারিত ব্যালট ইউনিটে ভোট দিতে হবে। যদি তিনি কোনো পদে ভোট দিতে না চান, তাহলে ওই ব্যালট ইউনিটের নিচে লাল রঙের ‘ক্যান্সেল’ বোতামে পরপর দুইবার চাপ দিতে হবে।
তিনটি ব্যালট ইউনিটে ভোটার তার সিদ্ধান্ত দেওয়ার পরই কেবল তার ভোট গৃহীত হবে।
ইভিএম ও নির্বাচনী মালামাল সংরক্ষণ
ভোট গণনা শেষে ইভিএমগুলো নির্দিষ্ট প্যাকেটে নির্দেশিকা অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসারকে বুঝিয়ে দেবেন; ব্যবহৃত কার্ডগুলো সরবরাহ করা খামে ভরে সিলগালা করে গানি ব্যাগে প্রবেশ করিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠাতে হবে।
এছাড়াও ব্যবহৃত ভোটার তালিকা, ভোট গণনার বিবরণীসহ সব প্যাকেট এবং অন্যান্য নির্বাচনী সামগ্রী গানি ব্যাগে প্রবেশ করিয়ে সিলগালা করে রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দিতে হবে।
আরও পড়ুন